এ দৃশ্যটা আমার দেশের ,আমার মাতৃভূমির । মন আকূল হয়ে যায় এমন দৃশ্য দেখে । নিচে নদী,সবুজ প্রকৃতি,নদীর জল,আহ হা মন ভরে যায় । এমন দৃশ্য দেখলে মন ভাল হয়ে যায় । মন আকূল হয়ে যায় । সাদা মেঘ দুর আকাশে যেন জল ছবি এঁকে দিয়েছে । কোন শিল্পী যেন তা নিপুন হাতে এঁকে দিয়েছে ।
শরৎ কাল বরাবরেই আমার খুব প্রিয় । শরৎ আসলেই আমি যেন কেমন আনমনা হয়ে যাই । শরৎ কালে চারিদিকের প্রকৃতি সবুজ সতেজতায় ভরে যায় । মাঠ ঘাটে সবখানেই শুধু সবুজ আর সবুজের ছোঁয়া । যেদিকে তাকাই সবখানে শুধু সবুচ ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়ে না । প্রকৃতিতে শান্ত ভাব বিরাজ করে । মানুষের মনেও আনন্দ বিরাজ করে । হালকা শিশির পড়তে শুরু করে । সাদা ছেঁড়া মেঘ পাল তোলা নৌকার মত ভেসে ভেসে দূরে চলে যায় । পাখির ঝাঁক ডাকি দিয়ে দূরে উড়ে যায় । পুকুর আর নদ নদীর জলে শান্ত ভাব বিরাজ করে । ভ্রমন পিপাসু মানুষ ভ্রমণে বের হয় । এ সময়টাতে ঘুরতে ভাল লাগে । শাপলা,পদ্ম পুকুর আর বিলের জলে ফুটে থাকে । ধানের শিষে হালকা শিশির জমে থাকে সকাল বেলায় । সেই শিশির বিন্দুতে সূর্যের কিরণ পড়ে প্রতিফলিত হয় । বুঁনো হাঁস দল বেঁধে আকাশে উড়ে । শরতের মেঘ পেজা তুলার মত আকাশের গায় ভেসে যায় । এসব প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখে মন উদাস হয়ে যায় । কবি সাহিত্যিকেরা প্রকৃতির রূপ ফুটিয়ে তোলে । শরতের মেঘ মানুষ কে বিমনা অবাক করে তোলে ।
শরতের জল ভরা মেঘ দেখে কত কবি কত কবিতা লিখেছে তার কোন হিসেব নেই । শরতের রাতে দল ছুট মেঘ মাঝে মাঝে চাঁদকে ঢেকে দিয়ে যায় । চাঁদও যেন মেঘের গায়ে একটু সময়ের জন্য লুকাতে পেরে মহাখুশি । শরতের মেঘের সৌন্দর্য যত দেখি তত অবাক হয়ে যাই । বার বার দূর আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে জল ভরা মেঘ দেখি । মন চায় নিমিষেই লিখে ফেলি হাজারটা কবিতা । আবেগে মন আকূল হয়ে যায় । শরতের মেঘের কোল ঘেষে যখন পাখির ঝাঁক উড়ে যায়, সেই দৃশ্যটা কত যে ভাল লাগে বলে বোঝাতে পারব না ।
গাঢ় নীল আকাশ, সোনাঝরা রোদ, দক্ষিণ দিক হতে উত্তরে শিমুলের তুলোর মতো ভেসে চলা সাদা মেঘের ভেলা, নদীর ধারে মৃদুমন্দ বাতাসে দোল খাওয়া সাদা সাদা কাশফুল, সাদা বক, পাখ-পাখালির দল মহা-কলরবে ডানা মেলে আকাশের উজ্জ্বল নীলিমার প্রান্ত ছুঁয়ে মালার মতো উড়ে চলা, বড় পুকুর ধারে জারুল গাছে বসা মাছ শিকারী মাছরাঙা, বাতাসে ছোট ছোট ঢেউ তুলে নদীতে পাল তুলে চলা নৌকা, মোহনীয় চাঁদনী রাত, মায়াবী পরিবেশ, আঁধারের বুক চিরে উড়ে বেড়ানো জোনাকীরা, চারদিকে সজীব গাছপালার ওপর বয়ে যাওয়া মৃদুমন্দ বায়ু, শিউলী, কামিনী, হাসনাহেনা, দোলনচাঁপা, বেলী, ছাতিম, বরই, শাপলা, জারুল, রঙ্গন, টগর, রাধাচূড়া, মধুমঞ্জুরি, শ্বেতকাঞ্চন, মল্লিকা, মাধবী, কামিনী, নয়নতারা, ধুতরা, কল্কে, স্থলপদ্ম, কচুরী, সন্ধ্যামণি, জিঙে, জয়ন্তীসহ নাম না জানা নানা জাতের ফুলের গন্ধে মৌ মৌ করা বাতাস, চারপাশের শুভ্রতার মাঝে বৃষ্টির ফোঁটা, বৃষ্টিশেষে আবারো রোদ, দিগন্তজুড়ে সাতরঙা হাসি দিয়ে ফুটে ওঠা রংধনু। এ দৃশ্য শুধু এক ঋতুতেই চোখে পড়ে। সে হল শরৎ। শুভ্রতার ঋতু ও সবচেয়ে মোহনীয় ঋতু । জলহারা শুভ্র মেঘের দল যখন নীল, নির্জন, নির্মল আকাশে পদসঞ্চার করে তখন আমরা বুঝতে পারি শরৎ এসেছে। শরতের আগমন সত্যিই মধুর।
জল ভরা মেঘ আকাশে মুক্ত ভাবে ঘুরে বেড়ায় । সবুজ প্রকৃতি আর সাদা মেঘ মন হরণ করে নেয় । প্রকৃতি সাজে নতুন সাজে । মন আকুলতায় ভরে যায় ।
জানালার ফাঁক দিয়ে দুরের মেঘ হাত ছানি দিয়ে ডাক দিয়ে যায় । শরতে দিন রাত চলে মেঘের খেলা । এ খেলায় মন হারিয়ে যেতে চায় ।
শরতের কাশফুলে মুগ্ধ হয় না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কাশফুল নদী তীরে বনের প্রান্তে অপরূপ শোভা ছড়ায়। গাছে গাছে শিউলির মন-ভোলানো সুবাসে প্রকৃতি হয়ে উঠে মায়াময়। শরৎকালে কখনো কখনো বর্ষণ হয়, তবে বর্ষার মতো অবিরাম নয়। বরং শরতের বৃষ্টি মনে আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে তোলে রূপময়। ভাদ্র-আশ্বিন এ দু’মাস শরৎ ঋতু। বর্ষার পরের ঋতু শরৎ। তাই শরতের আগমনে বাংলার প্রকৃতি থাকে নির্মল স্নিগ্ধ।
শরতের আকাশের মতো আকাশ আর কোন ঋতুতে দেখা যায় না। শরৎকালের রাতে জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। মেঘ মুক্ত আকাশে যেন জ্যোৎস্নার ফুল ঝরে। চাঁদের আলোর শুভ্রতায় যেন আকাশ থেকে কল্পকথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে। অপরূপ বিভা ও সৌন্দর্যের কারণে শরৎকালকে বলা হয়ে থাকে ঋতু রাণী। মানুষ মাত্রই শরৎকালে প্রকৃতির রূপ-লাবণ্য দেখে মোহিত না হয়ে পারে না। ভাবাতুর করে তোলে কবির ভাবুক মনকে। কবি মন আনন্দে নেচে উঠে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে । প্রবল আবেগ আর উৎসাহ এসে জমা হয় কবি-সাহিত্যিকের মনোজগতে। সৃষ্টি করে চলে তারা অমীয় সুধা, সৃষ্টি করেন নতুন নতুন সাহিত্য কর্ম।
1 Comments
শরৎকালের দৃশ্য Visit for more
ReplyDelete