মানুষ সামাজিক প্রাণী। সমাজে বাস করতে গেলে একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হতে হয়। কিন্তু এই সম্পর্কগুলোর প্রকৃত মূল্য বোঝা যায় না সুখের দিনে, বরং বোঝা যায় বিপদের দিনে। কারণ, সুখে সবাই পাশে থাকে, কিন্তু দুঃখে বা বিপদে যে পাশে থাকে, সেই-ই আসল বন্ধু, সেই-ই প্রকৃত আত্মীয়।
জীবনের পথে সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা—সবই আসে পালা করে। যখন আমাদের দিন ভালো যায়, তখন চারপাশে অনেক মানুষ ঘিরে থাকে। তারা আমাদের প্রশংসা করে, আমাদের সাফল্যে অংশ নেয়। কিন্তু যখন বিপদ আসে, যখন আমাদের প্রয়োজন সাহায্য, তখন অনেকেই দূরে সরে যায়। সেই সময় যিনি নিঃস্বার্থভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন, তিনিই প্রকৃত বন্ধু। তাই বলা হয়—“বিপদে পড়লে বন্ধু চেনা যায়।”
একইভাবে, আত্মীয়তার বন্ধনও তখনই পরীক্ষিত হয় যখন জীবনে অন্ধকার নামে। প্রকৃত আত্মীয় কখনো স্বার্থ দেখে না; তিনি পরিবারের একজন সদস্যের কষ্টকে নিজের কষ্ট মনে করেন। অনেক সময় দেখা যায়, রক্তের সম্পর্ক থাকলেও কেউ কেউ দুঃসময়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আবার কেউ কেউ শুধু মানবতার টানে পাশে দাঁড়ায়—তারা-ই আসল আত্মীয়।
বাংলা প্রবাদে আছে, “সুখে-দুঃখে যে পাশে থাকে, সেই-ই সত্যিকারের আপনজন।” ইতিহাস ও সাহিত্যেও আমরা এর বহু উদাহরণ পাই। যেমন—শ্রীকৃষ্ণ ও সুদামার বন্ধুত্ব, কিংবা রবীন্দ্রনাথের গল্পের নিঃস্বার্থ চরিত্ররা আমাদের শেখায়—বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার সত্যিকার রূপ হলো ত্যাগ, সহানুভূতি ও নিঃস্বার্থ ভালোবাসা।
সুতরাং, আমরা যদি চাই আমাদের জীবনে সত্যিকারের সম্পর্ক বজায় থাকুক, তবে নিজেকেও অন্যের দুঃসময়ে পাশে দাঁড়াতে জানতে হবে। কারণ বিপদ শুধু অন্যের জন্য নয়—আজ তার, কাল আমারও হতে পারে।
উপসংহার:
বিপদ মানুষকে যেমন কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলে, তেমনি প্রকৃত বন্ধু ও আত্মীয়কে চেনার সুযোগও দেয়। তাই বলা যায়—বিপদই বন্ধুত্ব ও আত্মীয়তার আসল মানদণ্ড।
0 Comments