নিমোজখানায় প্রতিবছর ক্রিকেট খেলা অনুষ্ঠিত হয় । সেই খেলার নাম NPL (নিমোজখানা প্রিমিনিয়ার লীগ )। এবার আমার ভাতিজা দেবাশীষ রায় সুপ্রিয় একটি দল কিনেছে । সব চেয়ে কম বয়সে সে দলের মালিক হয়েছে NPL এ । বরাবরই আমি তাকে এসব কাজে সমর্থন দেই । সে বলেছে কাকু একহাজার টাকা দিও ,বললাম বেতন পেলে পাঠিয়ে দেব । চার দলের খেলা । প্রথমে ১৩০০ টাকা করে দেওয়া হয়েছে জার্সির জন্য ,পরে ম্যাচ ফি ৫০০ টাকা । প্রতিটা ম্যাচের সময় খেলোয়ারদের খাওয়া বাবদ খরচ করতে হয় । গতকাল সুপ্রিয় কল দিয়ে জানাল তিন ম্যাচের মধ্যে দুইটাতে জিতেছে । বলল কাকু একহাজার টাকার চেয়ে একটু বেশি টাকা দিও ।বললাম কত দেব বল । সে বলল দুই তিনশ বেশি দিও । মনে মনে ভাবলাম , দুইতিনশ টাকাই ওর কাছে অনেক ।
অনেকে ভাবতে পারে এটা কোন টাকা হল ,কিন্তু আমাদের মত পরিবারে যারা বাস করে শুধু তারাই জানে সামান্য কিছুই আমাদের কাছে কত বড় । ছোট বেলা থেকেই সুপ্রিয়র খেলার প্রতি খুব ঝোঁক ,ইচ্ছে ছিল বিকেএসপি তে ভর্তি হওয়ার কিন্তু সেটা আর হল না । আমি তাকে এসব ব্যাপারে খুব উৎসাহ দেই ,তাই ছোট খাট আবদার গুলোর কথা আমাকে জানায় । অষ্টম শ্রেনীতে পড়ছে সে , এ বয়সেই এলাকায় বেশ পরিচিত হয়েছে । তার বাবা মা খেলার প্রতি ততটা আগ্রহী নয় । সুপ্রিয়র খেলা সংক্রান্ত যত আবদার আমার কাছে ।
বর্তমান দুনিয়াতে খেলোয়ার আর শোবিজের মানুষরাই সবচেয়ে পরিচিত । খেলোয়ারদের কম বেশি সবাই ভালবাসে । ভাল খেলোয়ার হতে পারলে অর্থ-খ্যাতি সবই পাওয়া যায় । আমি সব সময় খেলা ধুলাকে সাপোর্ট করি । ছোট বেলায় ভাল ফুটবল খেলতাম । একবার প্রাইমারীতে পড়াকালীন সময়ে আন্তঃইউনিয়ন পর্যায়ে ভাল নাম করেছিলাম । হাইস্কুলে পড়াকালীন ফুটবল-ক্রিকেট দুটোই খেলতাম । এখন আর সেই সময় হয়ে ওঠে না । যখন শুনলাম সুপ্রিয় দল কিনবে ,তখন এক বাক্যে সম্মতি দিয়েছিলাম । সে জুনিয়র হয়ে এত বড় কাজ করছে ,এটা সত্যিই গর্বের বিষয় । এ বয়সে সে যে সুনাম অর্জন করেছে , পরিচিত হয়েছে ,বড় হয়েও অনেকে তা পারে না ।
অনেকে পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করে ,বড় হয়ে ভাল চাকুরী করে ,কিন্তু কজনেই বা তাদের চিনে । অনেককে তো মানুষ চিনে না । সেদিক দিয়ে অবশ্য আমাদের পরিবারের সদস্যদের অবশ্য আলাদা আলাদা পরিচিতি রয়েছে । সবাই কে এক নামে এলাকার মানুষ চিনে । সন্তানকে শুধূ পড়াশোনায় বড় করলেই হবে না ,খেলা ধুলার প্রতিও মনোযোগী করতে হবে । খেলা ধুলা করলে শরীর ভাল থাকে । শরীর ভাল থাকলে মনও ভাল থাকবে । সুস্থ দেহ সুস্থ মন বলে একটা কথা রয়েছে ।
সুপ্রিয় NPL এ ক্রিকেট টিম কিনবে শুনে সত্যি খুব ভাল লেগেছে । তার মাঝে যে নেতৃত্ত দেওয়ার একটা ভাব জেগে উঠবে ,এটা ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে । এভাবেই তো নেতা বা দল নায়ক তৈরি হয় । ছোট বেলা খেকেই তা ছেলেমেয়েদের মনের মাঝে অনেক প্রভাব বিস্তার করে ।
অনেক অভিভাবক বলে এসব দায়িত্ব দিলে সন্তানরা নষ্ট হয় ,আমি বলব তাদের সে ধারণা ভুল ।
বাচ্চাকে কাপুরুষ বানাবেন না । সন্তানকে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলুন ,এতে দেশ এবং দশের অনেক লাভ হবে । ভীরু কাপুরুষরা কখনো দেশের জন্য কিছুই করতে পারে না । কাপুরুষরা সব সময় পশ্চাৎ পলায়ন পর হয়ে থাকে ।
নিমোজখানায় সিনিয়র ছেলের অভাব নেই ,অথচ অষ্টম পড়ুয়া এক জন ছেলে দল কিনছে । এ থেকে বুঝা যায় সুপ্রিয় ইতিমধ্যে এলাকায় পরিচিত মুখ । ইতিমধ্যে সে পড়ালেখায়,নাচ ও খেলা ধুলায় যথেষ্ঠ নাম করেছে , ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি ভবিষ্যতে সে যেন অনেক দুর যেতে পারে ।

0 Comments