Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

কাকু ,ছোট কেক নেব না

     
                                         
আগামীকাল একু‌শে ফেব্রুয়ারী,আমার ভা‌তি‌জি পা‌য়ে‌লের জন্ম‌দিন । ২০১১ সা‌লের একু‌শে ফেব্রুয়ারী‌তে সে জন্মগ্রহন ক‌রে‌ছিল । আজ সকাল থে‌কেই খুব চা‌পের মু‌খে ছিলাম , সন্ধ্যায় বা‌ড়ি‌তে কল দিলাম । সু‌প্রিয়, মা আর পা‌য়ে‌লের সা‌থে কথা হল । সু‌প্রিয় কে এখ‌নো সাই‌কেল কি‌নে দেয়া হয়‌নি । মা‌য়ের পা‌য়ে ব্যথা ,গতকাল পার্বতীপুর মিশ‌নে গি‌য়ে‌ছিল । সু‌প্রিয় বলল তার কা‌ছে কিছু টাকা আছে তাই দি‌য়ে পা‌য়ে‌লের জন্য কেক আন‌বে । পা‌য়েল বলল ,কাকু ছোট কেক নেব না ।শু‌নে ম‌নে একটা যেন আঘাত লাগল । হায় বিধাতা , আজ আমি এতটাই নিরুপায় যে ভা‌তি‌জির জন্ম‌দি‌নে একটা দুইশো টাকার কেক দেওয়ার কথাও বল‌তে পার‌ছি না । তা‌কে বললাম ,‌তোমার দাদা কাল‌কে কেক আন‌বে , টাকা নেই তো তাই ছোট কেক আন‌বে , সে বার বার বল‌তে লাগল কাকু ছোট কেক নেব না ।




ম‌নে ম‌নে অনেক ভাব‌ছি , জীব‌নে কিছু সময় আসে ,নীরব থাক‌া ছাড়‌া কিছুই করার থা‌কে না ।

এ সময়টা আমার এতই খারাপ যাচ্ছে যা বলে  বোঝাতে পারব না । অজানা একটা দুশ্চিন্তা সব সময় আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে । কিছু কিছু ভুলের জন্য বর্তমানে নিদারুন অর্থ কষ্টে ভুগছি । আমি জানি ২০১৮ সালটা আমার ভাল যাবে না । এ বছরটা কোন রকমে পার করতে পারলে আমার হয়তো ভাল দিন আসতেও পারে ,কিন্তু বর্তমানে কি যে মানসিক যন্ত্রনা ভোগ করছি বলে বোঝাতে পারব না । এর আগে কখনো এমন হয় নি । 
সুপ্রিয় আর পায়েল এর কাছে তার কাকু অর্থাৎ আমি হচ্ছি হিরো । তারা মনে করে তাদের কাকু হচ্ছে  সবার সেরা । তাদের কাকু সবই জানে । তাই বেশির ভাগ আবদার তাদের কাকুর কাছে । আমি যথাসাধ্য চেষ্ঠা করি তাদের আবদার গুলো মেটানোর জন্য । পারতঃপক্ষে না বলি না ।
এবার পায়েল বায়না ধরেছে তার জন্মদিনের কেক টা যেন বড় হয় ।  অনেক সময় দেখা গেছে সুপ্রিয় আর পায়েল এর জন্মদিনে পাঁচ টাকা দামের কেক আনা হয় । কথাটা অনেকের কাছে বিশ্বাস যোগ্য নাও হতে পারে কিন্ত এটাই ঠিক । সাথে অবশ্য অন্য কিছুও থাকতো । বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় জন্ম দিনে অনেক বড় বড় কেক কাটা হয় ,তাই পায়েলেরও ইচ্ছে এবার তার জন্ম দিনেও যেন বড় কেক কেনা হয় । 
আমি বড় মুখ করে বলতে পারছি না যে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি কেক কিনে নিও ,কেন না আমার হাতে বর্তমানে তেমন টাকা পয়সা নেই । দুই শ টাকাই আমার কাছে এখন অনেক বেশি টাকা । সুপ্রিয় কে বললাম,তোর কা্ছে টাকা থাকলে হাফ পাউন্ড বা এক পাউন্ড এর একটা কেক কিনে নিও ,পরে টাকা পাঠিয়ে দেব । সুপ্রিয় বলল ,টাকা লাগবে না আমার কাছে আছে । বিকেলে ডোমার হতে কিনে নিয়ে আসব । শুনে বুকের ভিতর একটা কেমন যেন একটা অনুভূতি হল বলে বোঝাতে পারব না । দিনে দিনে সুপ্রিয় দুষ্টমী ছেড়ে শান্ত হয়ে যাচ্ছে । ছোট বেলায় সে খুবই দুষ্ট ছিল । ও রকম দুষ্ট আর কোথাও দেখি নি । সে জন্য বেশ কয়েক বার তাকে খুবই মেরেছি । এখন সে সব কথা মনে হলে খুবই খারাপ লাগে ।



পরের দিন সারাটি দিন খুবই খারাপ ভাবে কাটতে লাগল । পায়েলের জন্য কিছুই পাঠাতে পারলাম না । আজ আমি এতটাই অসহায় যে ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না । মনে মনে খুবই খষ্ট হচ্ছে ,মুখ ফুটে কিছু প্রকাশ করতে পারছি না । 

পরের দিন সন্ধ্যা বেলা বাড়িতে কল দিলাম । সুপ্রিয় হাফ পাউন্ডের একটা কেক এনেছে ,বেলুন এনেছে । সে সুন্দর করে সাজিয়েছে । তার এক মাত্র ছোট বোন বলে কথা । বাড়ির আশে পাশের কম বেশি সবাই এসেছে । পায়েল তো খুব খুশি  । সে বলেছিল কাকু এবার ছোট কেক নেব । আমি তার সে ইচ্ছা পুরন করতে পারি নি কিন্তু তার বড় ভাই ঠিকই বোনের ইচ্ছা পুরন করেছে । এই না হল ভাই । ভাই বোনের সম্পর্ক বড়ই মধুর । পায়েল কথা বলল ,খুবই খুশি সে । আশে পাশের ছোট বাচ্চারা এসেছে ,সবাই মিলে হৈ হুল্লোর করছে । বাড়িতে যেন খুশির ছোঁয়া । 
মনে মনে অনেক শান্তি পেলাম । শেষ পর্যন্ত পায়েলের মনের আশা পুরন হয়েছে । জীবনে কিছু কিছু সময় আসে তখন নিরব হয়ে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকে না । বর্তমানে আমার সেই অবস্থা হয়েছে । ঈশ্বরের কাছে সব সময় প্রার্থনা করছি বিপদ গুলো যেন কেটে যায় । শেষ পর্যন্ত ভাল ভাবেই পালন করা হল পায়েলের জন্ম দিন । মনে মনে তার জন্য প্রার্থনা করলাম অনেক । সামনের দিনে যেন ঈশ্বর আমাকে এমন পরিস্থিতিতে আর না ফেলে ।