যামিনী রায়ের কবিতা
~:স্মৃতির অন্তরালে :~ ৪১
জন্ম থেকেই শুরু স্মৃতির
মৃত্যুতেই শেষ ,
মানুষ বাঁচে স্মৃতির মাঝে
এইতো জানি বেশ ।
শিশু থেকে বড় হই
শিশু থেকে বড় হই
এক পা দু'পা করে ,
নতুন কিছু শিখি মোরা
স্মৃতির রেশ বাড়ে ।।
জীবনের সব লিখা থাকে
স্মৃতির খাতায় ,
হাসি -কাঁন্না ,দুঃখ গুলো
পাতায় পাতায় ।
নতুন কিছু দেখি মোরা
নতুন কিছু চাই ,
পুরাতন কে ফেলে দিয়ে
নতুনের কাছে যাই ।।
হারানো সেই দিন গুলো সব
খোদাই স্মৃতির খাতায় ,
মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে
চোখের পাতায় ।
কখনো মোরা যাই হারিয়ে
আনন্দ উল্লাসে ,
কখনো আবার যাই হারিয়ে
দুঃখের দীর্ঘশ্বাসে ।।
দেশ ছেড়ে কেউ যাই চলে যাই
সুদূর বিদেশে ,
স্মৃতির খাতায় ভীড় জমায়
নতুন স্মৃতি এসে ।
মোরা পুরাতন কে কাছে চাই
আবেগের টানে ,
এই তো জীবনের রীতি নীতি
সেকি কিছু মানে ।।
স্মৃতি শুধু জ্বালা দেয়
কে বলে তা ভাই ,
এই তো নিয়ম জগতের ই
গড়ে স্রষ্টাই ।
লাভ কিছু নাই অকারণে
করে হাহাকার ,
চলতে হবে নিয়ম মাফি
স্রষ্টা - বিধাতার ।।
অবশেষে পড়ি মোরা
মৃত্যুর কোলে ঢলে ,
তবুও মোদের বাঁচতে হয়
স্মৃতির অন্তরালে ।
~: ওরা দুজন :~ ৪২
ঝর্ণা আর বীথি
ওরা দুজনে সাথী ।
এক সাথে পড়ে ওরা
এক সাথে লিখে ,
দুজনে ঘুরে বেড়ায়
একত্রে পাঠ শিখে ।
ঝর্ণা যায় যেখানে
বীথিও যায় সেখানে ।
দুই জনে ভারি মিল
হাসে ওরা খিল খিল ।
এক সাথে পড়া লেখা
এক সাথে চলা ,
এক সাথে হাসা হাসি
আরো গল্প বলা ।
বিদ্যালয়ে আসে যেই
দেখা হবে দুজনেই ।
সই ওরা দুজন
বীথি আর ঝর্ণা ,
বলছি কত ওদের কথা
বেশি কিছু আর না ।
তথ্যঃ মিরজাগঞ্জ হাই স্কুলে পড়াকালীন সময়ে বীথি আর ঝর্ণা নামের দুজন মেয়ের বন্ধুত্ব দেখে লিখেছিলাম এ কবিতাটি ।
~: ব্যবধান :~ ৪৩
দুর থেকে দেখি সুনীল আকাশ টাকে
মাটির সাথে মিশে রয়েছে ;যেন একপ্রাণ ,
তবুও আকাশ - মাটির মাঝে অসীম দূরত্ব
যেমন ছন্দা ও আমার মাঝে যত ব্যবধান ।
চিরদিনই মাটি চেয়েছে আকাশকে ভালবেসে
কাছে পেতে; পূরন হয়নি এ আশা ,
আকাশ - মাটির মিলন এতো অসম্ভব
যতই ভালবাসি ছন্দাকে এ আমার ব্যর্থ ভালবাসা ।
মাটি ভালবাসে আকাশকে তবুও তাদের
মিলন হয় না ,এতো সবাই জানে ,
হয়তো আমিও শেষে ব্যর্থ হব
তবুও ভালবাসি মন কি কোন বাঁধা মানে ।
যতই ভালবাসুক মাটি আকাশকে
বিলিয়ে দিক ভালবাসা মন প্রাণ ,
তবুও রয়ে যাবে অসীম দূরত্ব
যেমন ছন্দা ও আমার মাঝে যত ব্যবধান ।
শুধু দুর থেকে চাওয়া পাওয়া
দুর থেকে ভালবাসা ,
মাটি পাবে না কভু আকাশকে
রয়ে যাবে ব্যবধান পুরবে না আশা ।
তবুও মাটি ভালবাসে আকাশকে
যেন অবুঝ দুটি প্রাণ ,
আমি ভালবাসি ছন্দাকে
থাক্ না মোদের মাঝে যত ব্যবধান ।
ব্যবধান থাক্ না যত পৃথিবীতে
বাঁধা রাশি রাশি ,
সফলতা পাই না প্রেমে
তবুও ভালবাসি ।
~: তরুনের পণ :~ ৪৪
তোরা তরুণ তোরাই বীর
তোরা ভীরুতাকে কর জয় ,
জীবনের লক্ষ্যটাকে ঠিক রেখে
এগিয়ে যাও দুর্বার - দুর্জয় ।
বুকে বল মনে রাখো সাহস
অত্যাচারীকে কর না ভয় ,
ছিনিয়ে নাও ন্যায্য পাওনা
হোক তোমাদের জয় ।।
এগিয়ে যাও লক্ষ্য যেখানে
কর না ভয় বুলেট - বোমা ,
যারা মুখের গ্রাস কেড়ে নেয়
তোমরা তাদের করো না ক্ষমা ।
তোরাই জাতিকে পথ দেখাবে
তোমরা হবে তাদের ত্রাস ,
যারা অনাহারীর মুখ থেকে
কেড়ে নেয় মুখের গ্রাস ।।
জীবন যদি দিতেই হয়
তবুও জীবন দাও ,
অন্যায়কারীর কাছে মাথা নত না করে
মৃত্যুটাকে আপন করে নাও ।
তোরাই হবে বিশ্ব নেতা
করবে নাতো মিথ্যে রণ ,
ন্যায়ের পথে থাকবে তোরা
এই হোক তোদের পণ ।।
~: বাসর :~ ৪৫
স্মৃতি মধুযামিনী প্রথম প্রণয়
স্বর্গীয় রাত ,
নব দম্পতির উষ্ণ আদরে - প্রেমালাপে
কখন হয়ে যায় প্রভাত ।
ক্রমশঃ জড়তা কেটে আসে
খুশিতে ভরে ওঠে মন ,
ফুল শয্যায় শুধু দুজন
কত যে আপন জন ।।
নব দম্পতি সুখের স্বপ্ন দেখে
আশায় বাঁধে বুক ,
দুজনার দুটি মনে
স্বর্গীয় সুখ ।
মধু যামিনীর মধুর স্মৃতি
জীবন ভরে রয় ,
পর দিন ঘুমে বুজে আসে চোখ
লজ্জা সারা শরীরময় ।।
~: ২৪ শে মার্চ,২০০০ ইং :~ ৪৬
প্রতিটি প্রেমিকের চোখে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী
আপন প্রেয়সী ,
প্রিয়া আমার চোখে তুমি সুন্দরী
তাইতো তোমায় ভালবাসি ।
কেমন করে জানাব তোমায়
আমার ভালবাসা ,
নাকী কোন দিনই পুরবে না
আমার মনের আশা ।।
তাইতো প্রস্তাব দিতে ভয় পাই
যদি কিছু বল ,
অবাক চোখে তাকিয়ে থাকি
যখন পথে চল ।
ছুটির দিনে হাতের ইশারায়
প্রথম ডাকি তোমায় ,
ভেবেছিলাম একটা কিছু
উত্তর দেবে আমায় ।।
এই আশাতেই ডাকি তোমায়
মনে মনে করে আন্দাজ ,
উত্তর স্বরুপ পাঠিয়ে দিলে তিনটা গান,একটা চিঠি,দুইটা ছন্দ ,দুপুর দুইটায় ২৪ শে মার্চ।
ভালবাসার প্রথম চিঠি
পেলাম তোমার কাছে ,
তাই দুপুর দুইটা ২৪ শে মার্চ,২০০০ ইং
আজীবন থাকবে মনের মাঝে ।।
তথ্য : দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে লিখা হয়েছিল কবিতাটি ।
~: সুখে আছি :~ ৪৭
কুঁড়ে ঘরে শান্তিতে আছি
কেটে যাচ্ছে দিন ,
নিশ্চিন্ত মনে সুখে আছি
নেই কোন ঋণ ।
খুব সকালে উঠি আমি
করি না কাজে হেলা ,
কাজের মধ্যে ব্যস্ততায়
কেটে যায় বেলা ।।
নিজ হাতে বুঁনি ছোট ঘর মোর
যেমন বাবুই বাঁধে বাসা ,
যা আছে তাই নিয়ে সুখে আছি
করি না বেশি আশা ।
গরীব হতে পারি দুঃখী নই
হতে পারি সাধারণ চাষা ,
মোর চেয়ে গরীব দুঃখী সে
যে করে অপূরণ আশা ।।
বেশি আশা করি না তাই
বেশি হয় না মোর অভাব ,
সতেজ মনে থাকি সর্বদা
গোমড়া থাকাটা নয় মোর স্বভাব ।
বড়াই কখনো করি না আমি
গাল মন্দ করি না মুখে ,
সবারই সাথে মিলে মিশে থাকি
এই তো আছি সুখে ।।
~: ছাত্র জীবন :~ ৪৮
মধুর চেয়ে মধুর জীবন
সে হল এই ছাত্র জীবন ।
এই জীবনে কত সুখ,হাসি কথা গান
এই জীবনেই ভাঙ্গা গড়া যত সম্মান ।
এই সময়ে জীবনটাকে গড়তে হয়রে তিলে তিলে
এই জীবনকেই ভিত্তি করে যত কিছু মিলে ।
এই জীবনে শিখি যত আদব শিষ্টাচার
ছাত্র জীবনের মত জীবন নেইতো কোন আর ।
বিশ্বটাকে জানি মোরা নেইকো পরিচয়
এই জীবনেই হারা জিতা জয় পরাজয় ।
এই সময়ে হয়রে কত সৌহার্দ্য প্রীতি
সব চেয়ে মধুর হল ছাত্র জীবনের স্মৃতি ।
ছাত্র জীবনের সময় টুকু ফুরিয়ে আসে যখন
কত মধুর ছাত্র জীবন বুঝা যায় তখন ।
এই জীবনের মধুর স্মৃতি কভু ভোলার নয়
এই সময়ের স্মৃতি টুকু জীবন ভরে রয় ।
~: নব বর্ষ :~ ৪৯
আজি এই নতুন বর্ষের নতুন দিবসে
নতুনের আগমন পুরাতনের অবসান ,
তাই কন্ঠে বাজে যেন আজ
বিদায়ী - আগমনের গান ।
নতুন বর্ষের নতুন দিবসে
নতুনের আহবানে দেই সাড়া ,
পুরনো দুঃখ গুলো ভুলে গিয়ে
আনন্দে হই আত্মহারা ।
বকেয়া পাওনা শোধ করে
নতুন খাতায় নাম তুলি ,
নতুন কে কাছে পেয়ে খুশিতে
পুরনো ব্যথাটা যাই ভুলি ।
নবীন কে বরন করে নিতে
করি যত আয়োজন ,
বকেয়া পাওনা হাতে পেয়ে
খুশিতে বিভোর মহাজন ।
পুরনো কাজ সাঙ্গ করে
নতুনে দেই হাত ,
বছর পরে নতুন রূপে আসে
নব বর্ষের নব প্রভাত ।
~:ধর্ম নারায়ন :~ ৫০
এক যে ছিল ছেলে নাম ধর্ম নারায়ন
পড়াশোনায় মন নেই দুষ্টামিতে মন ।
আমাদের সাথে সে যায় স্কুলে
সম্মুখের আসনটা নেবেই সে বই খাতা ফেলে ।
রাস্তার ধারের গাছের ফল নেয় সে পেড়ে
খুশি করার জন্য মোদের ধরে আঁকরে ।
দু'একটা দেয় সে পাকা পাকা ফল
বলে আরে এখান থেকে তাড়াতাড়ি চল ।
গেলে কোন মেলায় করে কত কিযে চুরি
মারামারিতে স্কুলে তার নেই কোন জুড়ি ।
মাস্টার মশায়ের বেতের মার করে না সে ভয়
ঘুষিতে নাক ফেটে দেবে যদি মারামারি হয় ।
দুষ্টু হলেও একটা ছিল মস্ত গুন তার
মিথ্যে কথা বলে না কখনো করেনা অহংকার ।
বহুদিন পর দেখি তারে একি পরিবর্তন
সেদিনের সেই দুষ্টু ছেলেটা নেই আগের মতন ।
এতো একেবারে শান্ত সুবোধ ছেলে
দুষ্টুমিটা কোথা যেন দিয়েছিল ফেলে ।
একদিন পাড়ার লোকে নিন্দে করেছিল যার
সেই গেল জিতে আমাদের হল হার ।
একদিন শুনলাম সব খবর তার
সব কিছুর মূলে অধ্যাবসায় নেই তো কোন আর ।
একটা শিক্ষা পেলাম যেন ধর্ম নারায়ন এর কাছে
কঠিন লোহা নরম হয় আগুনের আঁচে ।
~: মুক্তা :~ ৫১
প্রায়ই বিদ্যালয়ে যাবার পথে দেখা হয়
"মুক্তা" নামের একটি ছোট মেয়ের সাথে ,
মাঝে মধ্যে কথা বলি তাকে
সেও বিদ্যালয়ে যায় বই খাতা নিয়ে হাতে ।
দল বেঁধে বিদ্যালয়ে যায় সে
দেখে মনে হয় "মুক্তা" দলের কত্রী ,
গল্প করতে করতে পথে চলে ওরা
যেন সে ই দলের নেত্রী ।
কখনো কখনো পথে আমাকে থামায় সে
নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে আমার কাছে ,
কখনো বলে উঠে অনেক বড় হব
মেয়ে মানুষ পারে না এমন কি কাজ আছে ।
তার এমন কথা শুনে খুব খুশি হই
তার পর তাকে বলি উৎসাহ দিয়ে ,
পৃথিবীর যত কল্যাণ হয়নি কোন দিন
নারীর প্রেরণা - উৎসাহ না নিয়ে ।
আমার কথা সে মন দিয়ে শোনে
কথা বলে মিষ্টি মধুর হেসে,
কখনো বলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব
শান্তি প্রতিষ্ঠা করব দেশে ।
খুব অবাক হই মুক্তার কথা শুনে
এতটুকু মেয়ে একি কথা বলে ,
তার মত মেয়ে দেখেছি খুবই কম
প্রার্থনা করি ,তার আশা যেন ফলে ।
~: বর্ষায় :~ ৫২
গুরু গুরু মেঘ ডাকে
এলোরে বুঝি বর্ষা ,
বাদলের ধারা ঝরে একটানা
কখন থামে নেই কোন ভরসা ।
কখনো কমে আসে বৃষ্টির রেশ
কখনো বা ঝর ঝর ঝরে ,
কোন কাজে মন বসে না
কত কিযে আজ মনে পড়ে ।
এই উঠি এই বসি
কখনো বাহিরে তাকাই ,
বাদলের ধারা ঝরে এক টানা
মাঠে আজ কেউ নাই ।
ব্যাঙ ডাকে ডোবার ধারে
লাফে ঝুপ ঝাপ ,
দাঁড়িয়ে নিস্তব্ধ প্রকৃতি আজ
হৃদয় জুড়িয়া শুধু ভাবনার ছাপ ।
এই ভাবি,কি ভাবি ,কি গান গাই
অতীত স্মৃতি মনে পড়ে বারে বারে ,
কি কথা ,কার কথা ,কবেকার কথা
ভেসে যায় শুধু মনের জোয়ারে ।
কত কথা মনে হয় আজ
আবার কত কথা ভুলে যাই ,
ছিল মনে কত দিন কত কথা
আজ আর নাই ।
আজ যা কিছু মনে পড়ে আমার
জানে না তা কেউ ,
মনের নদীতে বাণ ডেকেছে
উছলে উঠিছে ঢেউ ।
ঐ যায় মেঘের দল
যায় দূরে ভেসে,
মন নাই ঘরে আজ
গেছে কল্পদেশে ।
কেকা ডাকে বন মাঝে
উদাসী এ মন যেন কারে চায় ,
মনে জাগে কত কথা কত আশা
এই বরষায় ।
~: হারিয়ে যাব :~ ৫৩
তুমি আমি সবাই একদিন
হারিয়ে যাব শেষে ,
সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব
পরপারে মৃত্যুর দেশে ।
কত সুন্দর কত বৃহৎ মহৎ
যাদের কথা শুনি প্রত্যহ খবরে ,
সুন্দর - কুৎসিত, বৃহৎ - ক্ষুদ্র
ঘুমিয়ে পড়বে শেষে কবরে ।
সুন্দরীর চোখ ঘোলাটে হবে
বীরের শক্তি হবে অবসান ,
জ্ঞানী গুনি হারিয়ে যাবে
করি না যত তাঁদের জয়োগান ।
রাজা - উজির -প্রজা
মোরা থাকি কে কোন বেশে ,
শেষে হারিয়ে যাব সবাই একদিন
পরপারে মৃত্যুর দেশে ।
যত বড়ই হোক না কেউ
লোকে করুক না জয়োগান ,
অবশেষে মৃত্যুর কোলে
জীবন লীলার ঘটবে অবসান।
শুধু পড়ে রবে সুন্দর পৃথিবী
সব কিছুর ঘটায়ে অবসান ,
এই পৃথিবী মাঝে রয়ে যাবে চিরদিন
যারা কীর্তিমান ।
~: পুকুর পাড়ে :~ ৫৪
বৈকালে চারিদিক মুখরিত
শোনা যায় গৃহে ফেরার কোলাহল ,
পদ্মপুকুর পাড়ে গিয়ে বসি
দেখি সেথা কাজলা জল ।
জারুল গাছটার নিচে গিয়ে বসি
পুকুর পাড়ে দেখি সবুজ সতেজ ঘাস ,
পুকুরে রয়েছে অজস্র মাছের সাথে
শাপলা- পদ্ম ,দল বদ্ধ হাঁস ।
মাছের ঝাঁক সাঁতার কাটে ,কঞ্চিতে মাছ রাঙা হয়ে আছে চুপ ; গৃহে যায় হাঁসের দল ,
একলা আনমনে বসে থাকি পুকুর পাড়ে
ক্রমে কালো হয়ে আসে পুকুরের জল ।
ঘাস ফড়িং জলের কাছে কলমি শাখায় নাচে
গৃহ বধুরা জল নিতে আসে পুকুর ঘাটে ,
দুরে দেখি রাখাল চলে গরু নিয়ে
আঁধার নামে মাঠে বাটে ।
স্থির চিত্তে পুকুর পাড়ে বসে রই
জুড়ায় দেহ মন ,
অজানা খুশিতে হৃদয় দোলে
সার্থক যেন আজ জনম ।
কত শুচিতায় ভরে দেহমন
বৈকালে পুকুর পাড়ে ,
হৃদয় ভরে শুধু গুনগান
ভক্তি জানাই তাঁরে ।
~: সেই আশায় :~ ৫৫
পৃথিবীর বুকে আমি এসেছি
একদিন সব ছেড়ে চলে যাব মৃত্যুর টানে ,
যতদিন বেঁচে রব পৃথিবীর বুকে
ভরিয়ে দেব গল্প কবিতা আর গানে ।
গল্প গানে আর কবিতায়
ধূসর পৃথিবীটাকে ভরিয়ে দিতে চাই ,
সেই আশায় কলম ধরেছি
সর্বদা পকেটে কাগজ কলম তাই ।
কখন কোথা লিখি আমি
বাঁধা ধরা নিয়ম মোর নাই ,
ভাব আসলে কাগজ কলম ধরি
যা মনে আসে লিখি তাই ।
পাপ পঙ্কিলতা ভরা ধূসর পৃথিবীটাকে
গল্প কবিতা গানে ভরিয়ে দেব ,
মানুষের মনে তা দীপ্তি দেবে
তারপরে ছুটি নেব ।
~: যেদিন চলে যায় :~ ৫৬
যে দিন চলে যায়
সেই ভাল মনে হয় ,
যে দিন আসছে সম্মুখে
তা ভাল নয় ।
যে দিন কাটিয়েছে মোরা
শিশু - কিশোরে ,
আহা ! কত মধুর সেই দিন গুলি
আজ তা মনে পড়ে ।
যে কাজ মোরা আজ
ফেলে রেখে দেই ,
দেখবে পরে কাজ আছে
সময় আর নেই ।
যে দিন চলে যায়
সে কি ফিরে আসে ,
যে আলো রেখে দিয়ে যায়
শুধু তাই চোখে ভাসে ।
দুঃখ করে লাভ নেই
যা হয়ে গেছে অতীত ,
তাই সময়ের কাজ সময়ে কর
হে দুরন্ত পথিক ।
~: মনে পড়ে :~ ৫৭
মনে পড়ে আজ ছেলে বেলার কথা
সেই নদী তীর ,নৌকা বাঁধা ঘাট ,
রাখালের বাঁশির সুর ,নদী তীরে কাঁশ বন
গল্প শোনা চাঁদনী রাত, ঘুড়ি ওড়ানো মাঠ ।
মনে পড়ে সেই দিন গুলি
ছেলে ধরার ভয়,বৈশাখী ঝড়ে আম কুড়ার ধুম,
বর্ষায় ভেলায় চড়ে ঘুরে বেড়ানো ছোট নদী
পৌষ সংক্রান্তিতে রাত জাগা ,নেই চোখে ঘুম ।
খেলার সাথীদের মনে পড়ে আজ
সেই দুপুর বেলা গাছ তলায় চড়ুই ভাতি ,
গ্রীষ্মের দুপুরে কাঁচা পাকা আম খাওয়া
ঘুরে বেড়ানো পাড়াময় শরতের শুভ্র রাতি ।
মনে পড়ে ছোট নদীটার সেই বাঁশের সাঁকোটার কথা,গাঁয়ের মেঠো পথ,গরুর গাড়ি গোধূলি বেলা,
নব বর্ষার জলে জলকেলি খেলা
সাথীদের সাথে খেলেছি কত মজার মজার খেলা ।
মনে পড়ে পাঠশালার বন্ধুদের কথা
গুরু মশায়ের বেতের মার ,
শুনেছি কত জারি সারি পালা গান কবি গান
সেসব দিন কি কভু ফিরে পাব আর ।
বড় ভাল ছিল সে সব দিন
আবার ফিরে পেতে ইচ্ছে করে ,
হারানো দিনের কথা বার বার
আজি এই ক্ষণে মনে পড়ে ।
~: বঙ্গ বন্ধু :~ ৫৮
হে বঙ্গ বন্ধু তুমি বেঁচে রবে চিরদিন
তুমি জন্মেছো এই বঙ্গে ,
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি তুমি
তোমার প্রেরণা মোদের সঙ্গে ।
তুমি বেঁচে রবে চিরদিন
শিশির হয়ে ধানের শীষে - দূর্বা ঘাসে,
তুমি বেঁচে রবে চিরদিন
বাঙালির মাঝে এই বাংলাদেশে ।
থাকবে তুমি চিরঞ্জীবি হয়ে
বাংলার আকাশে - বাতাসে ,
তোমার অস্তিত্ব খুঁজে পাই
পাখির ধূসর পাখা সে ।
তুমি বেঁচে রবে চিরদিন
কৃষাণের মুক্ত মধুর গানে ,
তোমারে খুঁজে পাই
ভোরে পাখিদের তানে ।
কে বলে তুমি চলে গেছ
দুর থেকে বহুদুর ,
মনে হয় আজও আছ তুমি
শুনি যখন রাখালের বাঁশির সুর ।
তোমার নেত্রীত্বে এদেশ স্বাধীন
তাই
এদেশের প্রতি ধূলি কণাতে
তোমারে খুঁজে পাই ।
তুমি করেছ মোদের ঋনী
তোমার কাছে মোদের কত ঋণ ,
তাহা কি কখনও শুধিতে পারি
তাই মোদের মাঝে তুমি বেঁচে রবে চিরদিন ।
~: ফিরে আসো :~ ৫৯
কিহে কেমন আছো ? কত দিন পর এলে
কত দিন হয় নি দেখা ,
এখনো কি হয় নি তোমার
হয় নি পাঠ শেখা ।
খুব ভাল ,পাঠ শেষ হয়েছে তোমার
তাই ফিরে এলে ,
একি বলছ তুমি ,এখানে ভাল লাগে না তোমার
তাই চলে যাবে সব কিছু ফেলে ।
আমরা তো আছি সেই কবে থেকে
জন্মই তো এখানে ,
তুমি সব ছেড়ে চলে যেতে চাও
সুখ পাও যেখানে ।
মা বাবা পাঠায়ে তোমারে
আশায় বেঁধেছে বুক,
তুমি চলে যেতে চাও তাদের ছেড়ে
খুঁজে নিতে আপন সুখ ।
তুমি পাঠ শিখে জ্ঞানবান হয়েছ
তবু জন্মভূমিকে ছেড়ে যেতে চাও ,
জন্মভূমির সেবা না করে
কেন অমানুষ হতে যাও ?
পৃথিবীর মহান কীর্তিমান যারা
সবাই করেছে দেশের সেবা ,
জন্মভূমিকে ভাল না বেসে কোন দিন
হয় নি কীর্তিমান কেবা ।
হীন অমানুষ মুর্খরাই সব ছেড়ে যায়
পুরাইতে আপন আশা ,
তারা বিত্তবান হয়ে সুখে থাকতে পারে
পায় না দেশবাসীর ভালবাসা ।
যারা মা বাবা ,জন্মভূমিকে ছেড়ে যায়
অন্য কোথাও চলে ,
তারা কিসের জ্ঞানী গুনী মহাজন
তাদের মানুষ কে বলে ?
যথার্থ যদি মানুষ হতে চাও
জন্মভূমিকে ভাল বাসো ,
আপনার সুখের কথা ভুলে যাও
স্বদেশের বুকে ফিরে আসো ।
~: উপাধি :~ ৬০
রবি ঠাকুরকে বলে সবাই বিশ্ব কবি
কেউ বা বলে কবি গুরু ,
যত সব কবিদের প্রেরণার উৎস তিনি
নতুন ভাবধারার শুরু ।
নজরুল কে বলা হয়
বিদ্রোহী কবি ,
বিদ্রোহের সুর তুলে তাঁরই পথ ধরে
বিদ্রোহীরা এলো বুঝি সবি ।
শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবি মধুসূদন
সেতো এই বাংলারই ছেলে ,
ঈশ্বর চন্দ্র গুপ্ত নাকি যুগ সন্ধি কালের কবি
তাই তো সবাই বলে ।
দ্বিজেন্দ্র লাল হাস্য রসিক কবি
হাসি গানের রাজা ,
গোমড়া বোধ হয় ছিলেন না তিনি
ছিলেন তরতাজা ।
জসীম উদ্দিন আমাদের
পল্লী কবি ,
নিসর্গ প্রিয় কবি জীবনানন্দের চোখে
সুন্দর রুপে রুপায়িত প্রকৃতিটা সবি ।
দুঃখবাদী কবি
যতীন্দ্রনাথ সেন গুপ্ত ,
কবিতায় তাঁর দুঃখের কথা
রয়েছে সুপ্ত ।
ছন্দের যাদুকর সত্যেন্দ্র নাথ
কবিতায় সুন্দর ছন্দ ,
তাই বলে কিশোর কবি সুকান্তের
লেখা থাকে নি কভু বন্ধ ।
তাঁদের উপাধি আছে আজো
তাঁরা আজ নেই ,
যে উপাধি পেয়েছে তাঁরা
সে গুলো চিরদিন থাকবেই ।
ছবিঃ সংগৃহীত













