Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

ক‌বিতার ডা‌য়ে‌রি ,পর্ব-২ (১১-৪০ নং পর্যন্ত)

  যা‌মিনী রা‌য়ের ক‌বিতা

                ~: বিদায় :~ ১১


এমন এক‌টি কথা আ‌ছে
তা‌হল "‌বিদায় ",
এই কথা শোনা মাত্র
‌কেঁ‌পে উঠে হৃদয় ।
এমন এক সময় কোন এক জায়গায়
‌দেখা হল সবার ,
‌কিছু দিন পর বিদায় কথা শোনা মাত্র
মন-প্রাণ স্থির থা‌কে না আর ।।
তবুও বিদায় নি‌য়ে মো‌দের
‌যে‌তে যে হ‌বে ,
আর যে কোথা কখন
‌দেখা হ‌বে ক‌বে !
প্রথম যে দিন দেখা হয়
সবাই হা‌সি মু‌খে কথা কয় ,
‌বিদায় ল‌গ্নে সু‌খের হা‌সি কেউ হা‌সে না
কখন কোথা দেখা হ‌বে কেউ‌ জা‌নে না ।।

  ~: পূর্বপাড়া গাঁয় :~১২


‌তোমরা ইচ্ছা মত ঘু‌রে বেড়াও যেখা‌নে সেখা‌নে
‌কিংবা চ‌লে যাও অন্য কোথা শান্ত সু‌খের স্থা‌নে ।
অথবা ঘু‌রে বেড়াও সারা বাংলায়,
‌কিন্তু আমি র‌য়ে যাব আমার পূর্বপাড়া গাঁয় ।
‌হেথা দে‌খিব গাছপালা নদী মাঠ ঘাট,
কখ‌নো বেড়া‌তে যাব গাঁ‌য়ের মা‌ঝে নি‌মোজখানার হাট ।
বলব কথা রাখাল কিংবা কৃষাণ -মা‌ঝি‌দের সা‌থে ,
শুন‌বো‌ আমি রূপকথা ব‌সে চাঁদনী রা‌তে ।
ফুল‌কির মত ফুল ফো‌টে মা‌ঠে স‌রিষা ক্ষে‌তে,
আন‌ন্দে ঘুরব গাঁ‌য়ে যেমন মৌমা‌ছি ফু‌লে থা‌কে মে‌তে ।
গাঁ‌য়ের মা‌ঝে ছড়ায় আলো গগ‌নে থে‌কে চাঁন ,
আ‌মি হেথায় প‌বিত্র হব দেওনাই‌তে ক‌রে স্নান ।
সকা‌লে যেরূপ শি‌শির বিন্দু জ‌মে থা‌কে ঘা‌সে,
আ‌মি বলব কথা গাঁ‌য়ের সবাই‌কে ভাল‌বে‌সে ।
গাঁ‌য়ের সেবা করব আমি সর্বঃস্ব দি‌য়ে ,
সু‌খের নিদ্রা যাব গাঁ‌য়ের মা‌টি‌তে শেষ আশ্রয় নি‌য়ে ।

     ~: হেমন্ত :~ ১৩


দে‌খি‌তে দে‌খি‌তে মা‌ঠের সবুজ ধান
বদ‌লে‌ছে রং হ‌য়ে‌ছে হেম বরন ।
ক‌মে‌ছে ক্ষে‌তের ভরা জল
ধা‌নের শী‌সে বাতাস লে‌গে ক‌রে ঝলমল ।
দুপুর আর বিকা‌লের সোনালী রোদ লা‌গে ধান ক্ষে‌তে ,
ম‌নে হয় যেন বিশাল পাথার মন উঠে মে‌তে ।
ধা‌নের শী‌সে শী‌সে আছড় লে‌গে ক‌রে ঝনঝন
খু‌শি‌তে ভ‌রে ও‌ঠে কৃষ‌কের মন ।
নবা‌ন্নে মে‌তে ও‌ঠে কৃষক সাধারণ
ভ‌বিষ্য‌তের স্বপ্ন দ্যা‌খে ক‌রে অস্ফরণ ।
নতুন ধা‌নের গন্ধ ছড়ায় হা‌সি সবার মু‌খে
নতুন উদ্দা‌মে ক‌রে কাজ ,ক‌রে ম‌নের সু‌খে ।


          ~: ভাল লা‌গে :~ ১৪


ভাল লা‌গে জা‌তি যখন
স্মরণ ক‌রে অতীত কে ,
ভাল লা‌গে তখন
মা স্নেহ ক‌রে সন্তান কে ।
‌বৈশাখ মা‌সে যখন
ঝ‌ড়ে আম ঝ‌রে ,
ভাল লা‌গে তখন
মসুলধা‌রে বৃ‌ষ্টি প‌ড়ে ।।
ভাল লা‌গে শর‌তের বিকা‌লে
যখন সবু‌জের মেলা ব‌সে ,
ঘা‌সের ডগায় শি‌শির বিন্দু সকা‌লে
কৃষক মাঠ পা‌নে চে‌য়ে হা‌সে ।
‌হেম‌ন্তে চা‌রি‌দি‌কে ধান কাটা
শুরু হয় যখন ,
ভাল লা‌গে তখন
আন‌ন্দে ভ‌রে ও‌ঠে মন ।।
ভাল লা‌গে পা‌খিরা যখন
‌রো‌দে মে‌লে দেয় পাখা ,
শীতকা‌লে ভাল লা‌গে রোদ
মাঠ গু‌লো ফাঁকা ।
ভাল লা‌গে বসন্ত এলে
ফুল ফো‌টে পা‌খিরা গান গায়,
নীরব থা‌কি না কাজ ফে‌লে
আন‌ন্দে মন ভ‌রে যায় ।।
কৃষাণ মা‌ঠে ক্লা‌ন্তি না‌শি‌তে যখন
ক‌ন্ঠে গান ধ‌রে ,
ভাল লা‌গে গোধূলী বেলায়
রাখাল গরু আনে ঘ‌রে ।
ভাল লা‌গে দূর থে‌কে
ঘ‌রে ফি‌রে এলে ,
আরও ভাল লা‌গে
ম‌নের মানু‌ষের দেখা পে‌লে ।।
ভাল লা‌গে নিজ হা‌তে বোনা চারায়
ফুল ফুট‌লে ,
খুব ভাল লা‌গে
ভ্রম‌ণে ভাল সঙ্গী জুট‌লে ।
ভাল লা‌গে যখন
‌দেখা কর‌তে আসে প্রিয়জন ,
বড় ভাল লা‌গে
খু‌শি‌তে ভ‌রে থাক‌লে মন ।।
ভাল লা‌গে যখন
পা‌খিরা তো‌লে তান ,
ভাল লা‌গে তখন
‌প্রে‌মিকা শোনায় গান ।
ভাল লা‌গে যখন কি‌চির মি‌চির ক‌রে পা‌খিরা
রাত হয় ভোর ,
শু‌য়ে থা‌কি না অলস ভা‌বে আর
খু‌লে দেই বাতায়ন -‌দোর ।।

       ~: আত্মীয় :~ ১৫


‌কি‌সে আত্মীয় ?
আত্মায় আত্মায় মিল
তাই তো আত্মীয় ।
ধরায় কার আত্মীয় নাই ?
সবাই মোরা আত্মীয়
এ‌কে অপ‌রের ভাই ।
আত্মীয় এলে বা‌ড়ি‌তে
আন‌ন্দে মন ভ‌রে যায় ,
ব্যস্ত হই
আত্মীয়র যত্ন ক‌রি‌তে ।
আত্মীয়র সা‌থে
কথা ব‌লি ,
সুখ কিংবা দুঃ‌খের
‌দি‌নে নয়‌তো রা‌তে ।
আত্মীয় যে দিন চ‌লে যায়
‌বিস্বা‌দে মন ভ‌রে যায় ,
‌যে‌তে তো হ‌বে
তবুও আত্মীয় ।
তথ্য : ১৯৯৫ ইং সা‌লে ৫ম শ্রেনী‌তে পড়াকালীন সম‌য়ে লিখা ক‌বিতা ।


               ~: দেখা দে‌খি :~ ১৬


‌সি‌নেমা দে‌খি
টাকা লা‌গে ,
কুয়াশা দে‌খি
‌পৌষ -মা‌ঘে ।
পা‌খি দে‌খি
নীলাকা‌শে ,
কাঁ‌শের ফুল দে‌খি
ভাদ্র মা‌সে ।।
সবুজ ধান দে‌খি
আ‌শ্বি‌নে ,
‌লো‌কের কাঁপু‌নি দে‌খি
শীত কনক‌নে ।
প্রজাপ‌তির মেলা দে‌খি
ফু‌লে ফু‌লে ,
বালুচর দে‌খি
নদীর কূ‌লে ।।
মানু‌ষের হা‌তে পাখা দে‌খি
দাবদাহ গর‌মে ,
মা‌ঠে মা‌ঠে পাকা ধান দে‌খি
কা‌র্তিক অগ্রহায়‌ণে ।
এটা দে‌খি ওটা‌ দে‌খি
তবু মি‌টে না স্বাধ দেখার ,
আরও য‌দি দে‌খি কিছু
‌লিখব ক‌বিতায় বর্ণনা তার ।।
তথ্য : ১০/৯/২০০৭ ইং এ যু‌গের আলোয় প্রকা‌শিত হ‌য়ে‌ছিল ক‌বিতা‌টি ।


                ~: শর‌তের বিকাল :~ ১৭


‌রোদ ঝলম‌লে সোনালী বিকাল
‌পে‌রি‌য়ে এল আষাঢ় -শ্রাবণ বর্ষাকাল ।
এ‌লো ভাদ্র -শর‌তের আগমন তাই
সবু‌জের সমা‌রোহ যে‌দি‌কে তাকাই ।
‌ক্ষে‌তের ম‌ধ্যে চিকন আইল‌টি ধ‌রে
এ‌গি‌য়ে গেলাম ছোট নদীটার পা‌ড়ে ।
‌যে‌দি‌কে তাকাই সবুজ আর সবুজ শান্ত বিকাল বেলা ,
নদীর চ‌রে কাঁশ ফুল সেথায় পা‌খি‌দের ব‌সে‌ছে মেলা ।
‌চে‌য়ে আছি প‌শ্চিম আকা‌শে
‌দেখ‌ছি বাংলার প্রকৃ‌তি আজ শান্ত অবকা‌শে ।
তরু-লতার প‌ড়ে‌ছে ছায়া অস্ত‌মিত হ‌তে চ‌লে‌ছে সূর্য ,
‌স্নিগ্ধ শান্ত প‌রি‌বেশ যেন কল্পনার রাজ্য ।
এমন ক্ষ‌ণে ম‌নে হয় ছু‌টে বেড়াই সারা বাংলা‌দে‌শে
দু-চার জন‌কে চো‌খে প‌ড়ে প‌থে চ‌লে হে‌সে হে‌সে ।
অদূ‌রে নদীর তী‌রে রাখা‌লের দল
হা‌সে-গায় ,বাঁজায় বাঁশি ক‌রে কোলাহল ।
এমন ল‌গ্নে ক্ষে‌তের পা‌নে চে‌য়ে কৃষ‌কের মন ভ‌রে যায় ,
‌জে‌গে ও‌ঠে কত স্ম‌ৃ‌তি কত আশা
ম‌নের অজানায় ।



                   ~: বস‌ন্তের আগমন :~ ১৮


বস‌ন্তের আগম‌নে
ফুল ফো‌টে যে ব‌নে ব‌নে ।
কাঠ ‌বিড়ালীর উৎপাত ডা‌লে ডা‌লে
প্রজাপ‌তির মেলা ফু‌লে ফু‌লে ।
এমন দিন ম‌নের মা‌ঝে
জাগরণ এনে দেয় ,
‌কো‌কিল-‌কো‌কিলা ,চাতক-বা‌দিয়া
সারাক্ষণ গান গায় ।।
‌কো‌কি‌লের কুহুকুহু
টুনটু‌নির টুন টুন ,
এমন দি‌নে আওয়াজ ভা‌সে
গুন গুনা গুন গুন ।
‌শিমুল মান্দার আরও কত ফুল ফো‌টে
নতুন জাগর‌ণে মন মে‌তে ও‌ঠে ।
‌বি‌চিত্র সম্ভার নি‌য়ে আসে বসন্ত
তাই‌তো সবার কা‌ছে এর কদর অনন্ত ।।
বস‌ন্তের আগমন ব‌র্ষে একবার
জীব‌নে বস‌ন্তের আছে দরকার ।
 

        ~: স্বাধীনতা তু‌মি :~ ১৯

স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
লা‌খো শহী‌দের র‌ক্তের ফসল ,
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
চাত‌কের প্রতীক্ষার এক ফোঁটা জল ।
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
কৃষা‌ণের ক‌ন্ঠে মুক্ত গান ,
অথবা তু‌মি কি
বস‌ন্তে ‌কো‌কি‌লের তান ।
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
শর‌তের মা‌ঠে সবুজ ধান ,
             না‌কি
জননীর  কো‌লে নিষ্পাপ সন্তান ।
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
দামা‌লের বুক ফু‌লে প‌থে চলা ,
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
‌প্রিয়ার সা‌থে মুক্ত ম‌নে কথা বলা ।
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
শর‌তের নীলাকাশ ,
অথবা
মুক্ত ম‌নে সাঁতার কাটা পান কৌ‌ড়ি -রাঁজ হাঁস ।
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
‌ভিক্ষু‌কের পাওয়া এক মু‌ঠি ভিক্ষা ,
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
‌শিক্ষ‌কের দান শিক্ষা ।
স্বাধীনতা তু‌মি কি ?
দার্শ‌নি‌কের মুক্ত চিন্তা যুক্ত মাথা ,
অথবা তু‌মি ,
মুক্ত ম‌নে ক‌বির লেখার খাতা ।
স্বাধীনতা আস‌লে
তু‌মি কি ?
‌দে‌খি‌নি তোমায়
‌তোমার কথা শু‌নে‌ছি ।


              ~: প‌রিচয় :~ ২০


বাঙালী মোরা
বাংলা মো‌দের দেশ ,
বাংলা‌তে সু‌খে - দু‌খে
এই‌তো আছি বেশ ।
এই বাংলার বি‌লে -‌ঝি‌লে
কতই ফুল ফু‌টে ,
এ‌দে‌শেরই মা‌ঠে - ঘা‌টে
‌বেড়াই মোরা ছু‌টে ।।
এ‌দে‌শেরই নদীর জ‌লে
ক‌রি মোরা স্নান ,
রা‌তের বেলা আকাশ থে‌কে
ছড়ায় আলো চাঁন ।
এই দে‌শে‌তে ষড়ঋতু
খুবই ব‌লিহা‌রি ,
এই বাংলার নদী‌তে কত
তরী সা‌রি সা‌রি ।।
সন্ধ্যা হ‌লে কৃষা‌ণেরা ঘ‌রে ফি‌রে
ক্ষ্রান্ত দি‌য়ে কা‌জে ,
এ‌দে‌শেরই মা‌ঠে - তী‌রে
রাখা‌লের বাঁশির সুর বা‌জে ।
কখ‌নো মোরা শী‌তের কো‌পে
থরথর ক‌রে কাঁ‌পি ,
কখ‌নো মা‌ঠে কৃষা‌ণেরা
লাঙল চ‌ষে মাথায় দি‌য়ে ঝাঁ‌পি ।।
এ‌দে‌শে‌তে কখ‌নো আকাশ খুব যে নীল
কখ‌নো মে‌ঘে ঢাকা ,
কখ‌নো এদে‌শের মাঠ ক্ষে‌তে ভরা
কখ‌নো আবার ফাঁকা ।
কখ‌নো এদে‌শে বৃ‌ষ্টি হয়
কখ‌নো ঝড় বয় ,
কখ‌নো আবার কুয়াশায় ঢাকা
কখ‌নো সবুজ ময় ।।
এ‌দে‌শে‌তেই আছে আরও
সাগর -নদী - পাহাড় ,
‌কেউ ব‌া মোরা কৃষক - কৃষাণ
‌জে‌লে তাঁতী কামার ।
বাংলা‌দে‌শের মানুষ গু‌লো
বাংলা‌তে কত কথাই কয় ,
বলব কত বাংলাদে‌শের কথা
এই তো প‌রিচয় ।।


    ~:  দুঃখ :~ ২১


দুঃখ‌ রে দুঃখ তুই
‌কোথায় থা‌কিস বল ,
তুই কি ছে‌লে হারা মা‌য়ের চো‌খে
‌লোনা গরম জল ?
তুই কি প‌থের ভিখা‌রি‌দের
প‌থে প‌থে ঘোরা ?
নাকী অনাহা‌রির ভা‌তের জন্য
মাথা খু‌ড়ে মরা ?
তুই কি নিঃ‌স্বের থালার ম‌ধ্যে
শ‌ুধু নুন ভাত ?
নাকী ম্যা‌লে‌রিয়া মশার কামড়
অসহ্য রাত ?
অথবা তুই কা‌জের ম‌ধ্যে
কৃষা‌ণের গা‌য়ে ঘাম ?
নাকী খে‌টে খাওয়া মানু‌ষের
ঝল‌সে যাওয়া চাম ?
দুঃখ রে দুঃখ তুই
‌কোথায় থা‌কিস বল ,
তুই কি অসম‌য়ে অতি বৃ‌ষ্টি
কৃষ‌কের চো‌খে জল ?
তুই কি বিপ‌ন্নের বিপ‌দে প‌ড়ে
কাতর প্রার্থণা ?
নাকী শয্যাগত রোগীর যত
অসহ্য যন্ত্রণা ?


                 ~: নির্জনতা :~ ২২


শী‌তের হি‌মেল হাওয়া লে‌গে‌ছে তরু লতায়
মাঠ গু‌লো ফাঁকা ফাঁকা চ‌লে‌ছি কোন্ দুর অজানায় ।
শী‌তের দুপু‌রের মি‌ষ্টি রোদ ভালই লাগ‌ছে
মৃদু মৃদু অনুভূ‌তি তাই হৃদ‌য়ে জাগ‌ছে ।
ধী‌রে ধী‌রে হে‌টে গেলাম দেওনাই নদীর পার
নদী‌তে হাটু জল ,ধূ ধূ মাঠ আরও বালুচর ।
কদম গাছটার তলায় গি‌য়ে পড়লাম ব‌সে
দু'‌চো‌খে নামল ভাবনার ছাপ শরীর জুড়াল হি‌মেল বাতা‌সে ।
কখন যে চ‌লে গে‌ছি দূর কল্প‌দে‌শে
ম‌নে পড়‌ছে অতীত কথা তাই ভাব‌ছি অবকা‌শে ।
‌সেই ঘু‌ড়ি ওড়া‌নো দিন,পুতুল খেলা চড়ুই ভা‌তি
‌বৈশাখী ঝ‌ড়ে আম কুড়া‌নো ,গল্প শোনা চাঁদনী রা‌তি ।
ম‌নে প‌ড়ে ছে‌লে বেলার কথা ,সাঁতার কাটা দিন
রূপ কথা,গল্প ধাঁধাঁ হ‌য়ে‌ছে বিলীন ।
শর‌তের নীলাকাশ ,নবান্ন উৎসব ,ধা‌নের সবুজ মাঠ ,
ম‌নে প‌ড়ে কাঁনা মা‌ছি - গোল্লা ছুট,‌নৌকা বাঁধা ঘাট ।
নদী তী‌রে এই অবকা‌শে ভাব‌ছি অনেক কথা
জীব‌নের এই কর্ম শালায় কম পাওয়া যায় নির্জনতা ।
আপন ক‌র্মে সবাই ব্যস্ত ,সবাই আছে চঞ্চ‌লে
শহর কিংবা গ্রাম নিজ নিজ অঞ্চ‌লে ।
‌নির্জনতা কল্পনার সাগ‌রে ভাসায়
যার স্মৃ‌তি‌তে সু‌খের পরশ ব‌সে থা‌কে সু‌খের আশায় ।
‌নির্জনতায় একটু খা‌নি থাক‌লে ব‌সে
‌নির্জনতা অতীত স্মৃ‌তি‌কে কা‌ছে টে‌নে নি‌য়ে আসে ।


          ~: নিমন্ত্রণ :~ ২৩


তু‌মি যা‌বে ভাই আমার সা‌থে
আমার ছোট গাঁয় ,
‌যেথায় হা‌তের ইশারা‌তে
ডা‌কে আমার মায় ।
‌সেথায় কত পাখ পাখা‌লি
গাছ গাছা‌লির সা‌রে ,
সবুজ শ্যামল গাঁখা‌নি ভাই
সদাই মন কা‌ড়ে ।
অ‌নেক দিন যাই‌নি রে ভাই
আমার গাঁ‌য়ের মা‌ঝে ,
‌যেথায় ঘু‌রে বেড়া‌য়ে‌ছি
সকাল - দুপুর -সাঁ‌ঝে ।
কত‌দিন দে‌খি না‌রে ভাই
আমার সোনা মায় ,
ও ভাই‌ তু‌মি চল না এবার
আমার ছোট গাঁয় ।
গাঁ‌য়ে গি‌য়ে তু‌মি আমি
উড়াব কত ঘু‌ড়ি,
পা‌শে এসে জুট‌বে কত
সহজ সরল জু‌ড়ি ।
বর্ষা এলে কলা গা‌ছের
বানাব সা‌ধের ভেলা ,
নব বর্ষার জ‌লে ভি‌জে
করব জল‌কে‌লি খেলা ।
শর‌তে নদী তী‌রে কাঁশবন
‌ছে‌য়ে যায় সাদা ফু‌লে ,
চাস য‌দি কাঁশফুল
না হয় এনে দেব তু‌লে ।
এত দি‌নে ক‌মে‌ছে বু‌ছি
‌বিল -‌ঝিল ,পুকু‌রের জল ,
কল‌মি হে‌লেঞ্চা সেথা বু‌ঝি
কর‌ছে টলমল ।
ও ভাই তু‌মি য‌দি মোর সা‌থে
যাও ছোট গাঁয় ,
এসব তাজা তাজা শাক
এ‌নে দেব মোর সোনা মায় ।
এম‌নি ক‌রে য‌দি
‌হেমন্ত এসে যায় ,
ত‌বেই তো খু‌শির জোয়ার
বই‌বে সারা গাঁয় ।
নবান্নের উৎস‌বে চা‌রি‌দি‌কে
পড়‌বে আন‌ন্দের সাড়া ,
গাঁ‌য়ের মানুষ নবা‌ন্নের আন‌ন্দে
হ‌য়ে যা‌বে আত্মহারা ।
ফসল তোলার আন‌ন্দে
‌দেখ‌বে কৃষ‌কের মু‌খে হা‌সি ,
তু‌মি জান না ভাই
ওই হা‌সিটুকু কত ভালবা‌সি ।
ধীর পা‌য়ে য‌দি কখ‌নো
শীত এসে যায় ,
‌পি‌ঠে খাওয়ার ধুম তখন
গাঁ‌য়ে প‌ড়ে যায় ।
খুব সকা‌লে উঠে মা মোর
ক‌রে না ভয় শী‌তে ,
‌তোমায় আমায় খে‌তে দে‌বে
‌খেঁজুর রস আর গরম গরম পি‌ঠে ।
দই চিড়া খে‌তে দে‌বে
‌মোর সোনা মায় ,
সা‌থে নি‌য়ে তোমায়
ঘুরব সারা গাঁয় ।
নদী তী‌রে খেলব খেলা
যত রাখাল ছে‌লের সা‌থে ,
রূপকথার গল্প শুনব
ব‌সে চাঁদনী রা‌তে ।
হারা‌নো দি‌নের শুনব কথা
ম‌া‌য়ের কা‌ছে ব‌সে ,
এম‌নি ক‌রে যায় য‌দি যাক
সবগু‌লো মা‌সে ।
তাই তো ব‌লি চল না জল‌দি
আসার ছোট গাঁয়,
পল্লী জননী ডা‌কে মো‌দের
ও‌রে তোরা আয় ।


      ~: বর্ষা :~ ২৪


প্রভা‌তে উঠিয়া দে‌খি
‌মে‌ঘে ভ‌রি‌ছে আকাশ ,
র‌বিটাও র‌য়ে‌ছে ঢা‌কি
কর্মময় জীব‌নে আজ শান্ত অবকাশ ।
ঝম ঝম ঝর ঝর ঝর‌ছে
অ‌বিরাম বৃ‌ষ্টির ধারা ,
চা‌রি‌দি‌কে শুধু বৃ‌ষ্টি
‌কোথাও নেই কোন সাড়া ।।
শূন্য ঘ‌রে বাতায়ন প‌রে
‌স্থির চো‌খে দেখ‌ছি শুধু বৃ‌ষ্টি ,
‌চে‌য়ে আছি দিগন্ত দু‌রে
যতদুর যায় দৃ‌ষ্টি ।
‌রিম ঝিম ঝর ঝ‌রে বা‌রিধারা ঝ‌রে
দুর দিগ‌ন্তে চে‌য়ে আছি এক ম‌নে ব‌সি ,
কত কি‌যে আজ ম‌নে প‌ড়ে যায়
কত বিস্মৃত স্মৃ‌তি উঠে যে ভা‌সি ।।
এমন দি‌নে ম‌নে প‌ড়ে
কতগান কত কথা রা‌শি রা‌শি ,
এমন ক্ষ‌ণে তা‌রে ম‌নে প‌ড়ে যায়
যা‌রে ভালবা‌সি ।
এমন ল‌গ্নে শুধু ম‌নে প‌ড়ে বার বার
জীব‌নের ফে‌লে আসা দিন - বহুদুর ,
‌যেখা‌নে প‌ড়ে আছে কত স্মৃ‌তিময় দিন
দূর্গম পথ বন্ধুর ।।


              ~: চাষী :~ ২৫


আমার গাঁ‌য়ের চাষী‌রে ভাই
ক‌রে জ‌মি চাষ ,
ফলা‌বে ফসল কর‌বে আবাদ
এই তো তার আশ ।
চায় না সে বে‌শি ক‌রে
ধন সম্প‌ত্তি আর ,
ফলা‌তে ফসল বে‌শি ক‌রে
এই তো আশ‌া তার ।।
ম‌নের সু‌খে ক‌রে কাজ
স‌য়ে গরম জার,
হা‌সি মু‌খে ব‌লে কথা
‌নেই‌কো অহংকার ।
শা‌ন্তি‌তে ক‌রে বাস
তার কুঁ‌ড়ে ঘ‌রে ,
মা‌ঠের ম‌ধ্যে ক‌রে কাজ
গা‌নের সু‌রে সু‌রে ।।
‌ভো‌রে উঠে লাঙল নি‌য়ে
যায় সে মা‌ঠের পা‌নে ,
আনম‌নে লাঙল চ‌ষে
ক্লা‌ন্তি নাশা গা‌নে ।
কখ‌নো তা‌কে হটা‌তে পা‌রে না
গ্রী‌ষ্মের খরতাপ - রো‌দের,
তা‌কে দে‌খে চূর্ণ হউক
সকল গর্ব মো‌দের ।।


              ~:  বৃ‌ষ্টি :~ ২৬


বৃ‌ষ্টি তু‌মি ক‌বে আস‌বে বৃ‌ষ্টি ?
‌তোমার প্রতীক্ষায় ,
মাঠ ঘাট ধূঁ ধূঁ ক‌রে
কৃষক চে‌য়ে থা‌কে তোমার অপেক্ষায় ।
চা‌রি‌দি‌কে হাহাকার
‌চৌ‌চির হয় মাঠ,
সবার মু‌খে তোমার কথা
করুণ আর্তনাদ ।।
চাতক পা‌খি আর্তনাদ ক‌রে
ব‌লে ফো‌টিক জল ,
ক‌বে আস‌বে বৃ‌ষ্টি তু‌মি
শুধু আমায় বল ।
মা‌ঠের ঘাস ম‌রে যায়
ঝ‌রে গা‌ছের পাতা ,
কখন বোনা হ‌বে ফস‌লের বীজ
‌ঘো‌রে কৃষ‌কের মাথা ।।
তু‌মি আস ,আস বৃ‌ষ্টি
‌নি‌য়ে অমৃতধারা ,
সকল সমস্যার সমাধান ক‌রে দাও
দাও আমার কথায় সাড়া ।
আবার তু‌মি ধরণীর বু‌কে
জাগাও সজীবতা ,
সকল হাহাকার দুর ক‌রে
‌নি‌য়ে আসো শান্ত নীরবতা ।।
তথ্য : ০৩/০৬/২০০৭ ইং এ যু‌গের আলো প‌ত্রিকায় প্রকাশ হয় ।

                ~:  ছন্দা :~ ২৭


আ‌মি দে‌খে‌ছি রূপসী বাংলার
এক রূপসী মে‌য়ে‌কে ,
এক সা‌থে পড়তাম তাই
নাম তার ছন্দা ।
অ‌নেক মে‌য়ে দে‌খে‌ছি জীব‌নে
তবু তার ম‌তো নয় ,
তার অঙ্গে যেন ফুল
রজনী গন্ধা ।।
যখন অষ্টম হ‌তে নব‌মে উঠলাম
তখ‌নি এলো সে মো‌দের বিদ্যাল‌য়ে,
প্রথ‌মে আমি ই যে‌চে কথা বললাম তা‌কে
প‌রে বন্ধুরা নিল তার প‌রিচয় ।
তরপর দে‌খি ; সকল‌কে কথা ব‌লে সে
শুধু আমা‌কে ছাড়া ,
হয়‌তো বন্ধু হবার যোগ্য আমি নই
এটাই হ‌বে বোধ হয় ।।
‌মিথ্যা কথায় খারাপ ভাব‌লো আমা‌কে
বন্ধুরা তা‌কে আরও উস্কা‌নি দিত,
‌কি করব এখন ,সা‌লিশ করব নাকী
পাই না খুঁ‌জে কূল ।
সা‌লি‌শের দিন আমি ই যে‌চে বললাম কথা
‌মি‌টে গেল সব,কথা বলা বন্ধ ,
অকার‌ণে খারাপ ভাবল আমা‌কে
‌নিশ্চয়ই এটা তার ভুল ।।
বহু‌দিন কে‌টে গেল
তবুও কোন কথা বলল না সে ,
আ‌মি বন্ধু হবার অযোগ্য কি ?
তাই তো ভা‌বি ক্ষ‌ণে ক্ষ‌ণে ।
মা‌ঝে মা‌ঝে ভা‌বি
বলব নাকী যে‌চে গি‌য়ে কথা ,
বন্ধুরা কথা ব‌লে তার সা‌থে
আ‌মি শুধু অনুতপ্ত হই ম‌নে ম‌নে ।।
বন্ধুরা তার সা‌থে কথা কয় গল্প ক‌রে
নাস্তার ছড়াছ‌ড়ি দারুন চল‌ছে
হায় !
আ‌মি ভা‌বি কোন দিনও কি
কথা বল‌বে না সে ,
য‌দি ব‌লে ক‌বে বল‌বে
‌দিন যে চ‌লে যায় ।।
তারপর ; বহু বছর কে‌টে গেল
বন্ধুরা যে আছে কে কোন খা‌নে ,
আ‌মিও আমার কর্মস্থা‌নে
তাই
‌সেই মে‌য়ে‌টির নেই না কোন খবর
আর নেবই বা কোথায় ,
‌সে‌তো কোন দিন যে‌চে
আমায় কথা ব‌লে নাই ।।
আ‌মি তা‌দের সবাই‌কে নি‌য়ে ভা‌বি
তারা আমা‌কে নি‌য়ে ভা‌বে কিনা জা‌নি না ,
সব‌চে‌য়ে বড় অদ্ভুদ লা‌গে সেই মে‌য়ে‌টি‌কে
‌যে এক‌দিনও যে‌চে কথা বলল না ।
ভাব‌তে ভালই লা‌গে
‌সে আমা‌কে এত খারাপ ভে‌বে‌ছিল ,
বন্ধুরা তা‌কে শুধু উস্কা‌নিই দিত
আমার জন্য কিছু মাত্র করল না ।।
‌মে‌য়ে‌টির চলন ছিল ঝর্ণার মত
চঞ্চল অথচ শান্ত ,
‌কোন দিনও যে‌চে বলল না
‌কোন কথা আমায় ।
আ‌মি তো চাই না তা‌কে ভাব‌তে
তবু কেন যে প‌ড়ি মি‌ছে ভাবনায়,
কভু তা‌কে ধ‌রে রাখ‌তে পা‌রি নি ম‌নে
শুধু ধ‌রে রাখলাম ক‌বিতায় ।।
তথ্য : ১৯৯৯ ইং সা‌লে নবম শ্রেনী‌তে পড়াকালীন সম‌য়ে লিখা ক‌বিতা এটি ।

                     ~: কন্যাগত্ :~ ২৮




শরৎ কাল দেখ সবাই
চা‌রি‌দি‌কে সবুজ ধান ,
কন্যাগত্ যে এগি‌য়ে আস‌ছে
বৃ‌ষ্টি হ‌বে ; হ‌বে বাণ ।
অব‌শে‌ষে শুরু হল কন্যাগত্
আরও প্রবল বর্ষন ,
মাছ ধর‌তে ছুট‌ছে‌ সবাই
আনচান কর‌ছে মন ।।
জল বাড়‌ছে চা‌রি দি‌কে
বৃ‌ষ্টি থা‌মে না ,
‌মে‌ঘের জন্য রোদ নেই
তাই মা‌ছের শুঁট‌কি হ‌বে না ।
মাছ ভাজা আর চাউল ভাজা
চল‌ছে ভালই খাওয়া ,
ঘ‌রের বাই‌রে যায় না যাওয়া
বৃ‌ষ্টির সা‌থে চল‌ছে দারুন হাওয়া ।।
কন্যাগ‌তে মা‌ছের ছড়াছ‌ড়ি
বৃ‌ষ্টি পা‌তের ধুম ,
মা‌ছের নেশ‌ায় দিন কা‌টে না
‌নেই কো চো‌খে ঘুম ।
বছর প‌রে এক বার আসে
এই তো কন্যাগত্ ,
কন্যাগ‌তে বৃ‌ষ্টি হ‌বে মাছ হ‌বে
এই তো সবার মত ।।

                 ~: শী‌তের আগমন :~ ২৯


‌হেম‌ন্তের মাঝামা‌ঝি
শর‌তের শেষ ,
চা‌রি‌দি‌কে ধান কাটা কা‌টি
লাগ‌ছে কিন্তু বেশ ।
শীত আস‌বে পাঠায় খবর
এখন থে‌কে তাই ,
‌কিন‌তে হ‌বে গরম কাপড়
গরী‌বের টাকা পয়সা নাই ।।
সকা‌লে উঠে দে‌খি
চা‌রি‌দি‌কে হালকা শি‌শির ,
কৃষক ছু‌টে মাঠের পা‌নে
পা‌খিরা ক‌রে কি‌চির মি‌চির ।
গাছু‌নি নামায় খেঁজুর রস
মা‌ঠের ধান যায় ক‌মে ,
চা‌রি‌দি‌কে ফাঁকা‌ হয় মাঠ
‌হিমাল‌য়ে বরফ জ‌মে ।।
শীত আসে সা‌থে নি‌য়ে
নানা শাক সব‌জি ,ফুল ফল ,
হীম বু‌ড়িও সা‌থে আসে
ক‌মে যায় পুকুর নদীর জল ।
বাংলা প্রাঙ্গ‌নে শী‌তের আগম‌নে
প্রকৃ‌তিও বদ‌লে যায় ,
ভাল লা‌গে সকাল আর বিকা‌লের রোদ
ব‌হে হীম বায় ।।


             ~:  মৌমা‌ছি :~ ৩০


‌মৌমা‌ছি ক্ষুদ্র জীব
এক‌ত্রে ক‌রে কাজ ,
তা‌দের দে‌খে শিক্ষা লও
মানব সমাজ ।
কর্মী মা‌ছি মধু যোগায়
ঘু‌রে ফু‌লে ফু‌লে ,
পুরুষ মা‌ছি অলস বড়
রাণী থা‌কে মূ‌লে ।।
পুরুষ মা‌ছি অলস বড়
শুধু মধু করে পান ,
মা‌ঝে মা‌ঝে সবাই মি‌লে
ক‌রে নাচ গান ।
এক সা‌থে চা‌কে থা‌কে
এক সা‌থে ঘু‌রে ,
এক‌ত্র‌ে যুদ্ধ ক‌রে
শত্রুর ত‌রে ।।
মানব হ‌য়েও মো‌দের
‌নেই একতা ,
ভাল ক‌রে ভে‌বে দেখ
‌মৌমা‌ছি‌দের কথা ।


                  ~: বিজ‌য়ের দি‌নে :~ ৩১


বাঙা‌লি তারা
নয়‌কো ভীরু ,
তাই ,একাত্ত‌রের ২৬ শে মার্চ
যুদ্ধ কর‌লো শুরু ।
জীবনটা‌কে তুচ্ছ ভে‌বে
ধরল মে‌শিন গান ,
‌ছি‌নি‌য়ে আন‌তে স্বাধীনতা
বাঁচা‌তে দে‌শের মান ।।
হারা‌লো কত বো‌নের ইজ্জত
কত ভাই‌য়ের প্রাণ ,
‌দি‌য়ে‌ছিল ইজ্জত - প্রাণ
‌দেয়‌নি দে‌শের মান ।
দীর্ঘ নয়‌টি মাস
প্রাণ পণ যুদ্ধ ক‌রে,
‌ছি‌নি‌য়ে আন‌লো স্বাধীনতা
অব‌শে‌ষে ১৬ই ডি‌সেম্ব‌রে ।।
‌বিজ‌য়ের এই খু‌শির দি‌নে
দাঁড়াই পতাকার ত‌লে ,
শহীদ মাতা ঘ‌রের কো‌ণে
ভা‌সে নয়ন জ‌লে ।
যারা যুদ্ধ ক‌রে জীবন দিল
এই দেশটার ত‌রে ,
তা‌দের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই
১৬ই ডি‌সেম্ব‌রে ।।


                   ~: শী‌তের সকাল :~ ৩২


পা‌খি ডা‌কে সকাল হল
বাই‌রে শীত কন্ কন্ ,
চা‌রি‌দি‌কে কুয়াশা বেলা বে‌ড়ে যায়
তবু বিছানা ছাড়‌তে চায় না মন ।
কত সকা‌লে গাছু‌নি ছু‌টে
‌নি‌য়ে খেজুর রস ,
দামাল ছে‌লে র‌সের লো‌ভে লা‌ফি‌য়ে উঠে
শীত‌কেও ক‌রে বস ।।
মা‌য়েরা বানায় শ‌খের পি‌ঠে
শী‌তের সকা‌লে হায় ,
‌রোদ আসে ধী‌রে ধী‌রে
ব‌হে হীম বায় ।
‌ছে‌লেরা নেয় কোচা ভ‌রে
গুড় ম‌ু‌ড়ি খৈ ,
আগুন পোহা ছে‌ড়ে দি‌য়ে ব‌লে ও‌ঠে
‌রোদ এসে‌ছে ঐ ।।
কর্মী মানুষ ছু‌টে তা‌দের
আপন আপন কা‌জে ,
শী‌তের হি‌মেল হাওয়া
‌হে‌রে যায় ও‌দের কা‌ছে ।
অলসরা প‌ড়ে থা‌কে বিছানায়
কখন আসে রোদ ,
সময় যে চ‌লে যায়
হয় না তবু বোধ ।।
যারা শী‌তের সকা‌লে কুয়াশায়
চ‌লে আপন কা‌জে ,
বুঝ‌তে পা‌রে তারাই কি যে আনন্দ
শী‌তের সকা‌লে কুয়াশার মা‌ঝে ।


              ~:  প‌রিবর্তন :~ ৩৩



‌শিমুল তলীর পাঠশালা‌টি
‌দেওনাই নদীর তী‌রে ,
এ আমার গ্রা‌মের নদী
ব‌য়ে গে‌ছে গ্রা‌মের বুক চি‌রে ।
প্রায়ই‌ বিকা‌লে ব‌সে থাকতাম
‌শিমুল তলীর মা‌ঠে‌ গাছ তলায় ,
নদী তী‌রে ছোট ছোট গাছ ,কাঁশ বন
চর ভ‌রে থাক‌তো বালুকায় ।।
একটু সময় পে‌লেই যেতাম
‌শিমুল তলীর কা‌ছে ,
ব‌সে ব‌সে দেখতাম চা‌রি‌দিক একাকী
‌কেন না কেউ নেই পা‌শে ।
নদী তী‌রে রাখাল চরা‌তো গরু
ছু‌টে আস‌তো ‌ছোট ছোট ছে‌লে মে‌য়ে‌দের দল ,
চা‌রি‌দি‌কে শিমুল গাছ, ঝোঁপ ঝাড় ,ভাট ফুল
বর্ষা বা‌দে নদী‌তে থা‌কে হাটু জল ।।
কখ‌নো দেখতাম নদীর চ‌রে কাঁশ ফুল
কখ‌নো পূর্ণ যৌবনা নদী‌টি‌কে ,
কখ‌নো মা‌ঠের পাতা হীন ছোট গাছ
কখ‌নো শিমুল ফু‌লে শিমুল তলী ভ‌রে থা‌কে ।
আর‌ এখন প্রায়ই যাওয়া হয় না শিমুল তলী‌তে
যখন বা‌ড়ি‌তে আসি তখন হয়‌তো যাই ,
সব কিছু বদ‌লে গে‌ছে ,‌ছোট গাছ বড় হ‌য়ে‌ছে
আ‌গের মত আর নেই ।।

               

                        ~:  খারাপ লা‌গে :~ ৩৪


খারাপ লা‌গে জা‌তি যখন
ভু‌লে যায় অতীত কাল ,
খারাপ লা‌গে তখন
সংসা‌রে ঢুক‌লে জঞ্জাল ।
খারাপ লা‌গে যখন চৌ‌চির হয় মাঠ
‌দে‌শে প‌ড়ে প্রচন্ড রোদ ,
খারাপ লা‌গে তখন
‌দেখা দি‌লে প্রাকৃ‌তিক দূ‌র্যোগ ।।
খারাপ লা‌গে যখন
বৃ‌ষ্টি প‌ড়ে একাধা‌রে একটানা ,
আরও খারাপ লা‌গে
শুভ কা‌জে কেউ কর‌লে মানা ।
ব্যর্থ প্রে‌মি‌কের সাম‌নে যখন
‌প্রে‌মিকা স্বামী নি‌য়ে ঘু‌রে ,
বড়ই খারাপ লা‌গে
যখন প‌রিত্যক্ত প্রে‌মিকার অন্তর কেঁ‌দে ম‌রে ।।
খারাপ লা‌গে লো‌কে যখন
‌চিন্তা ক‌রে গা‌লে দি‌য়ে হাত ,
ভা‌রি খারাপ লা‌গে
‌ঘরে না থাক‌লে ভাত ।
উচ্চ ক‌ন্ঠে যখন
ঝগড়া ক‌রে লোক ,
খারাপ লা‌গে তখন
‌দে‌শে লাগ‌লে গোল‌যোগ ।।
খারাপ লা‌গে
‌বিদায় লগ্ন এলে ,
‌বিষা‌দে মন ভ‌রে যায়
‌দেশ ছে‌ড়ে কেউ বি‌দে‌শে চ‌লে গে‌লে ।


             ~:  হা‌রি‌য়ে গেল :~ ৩৫


এই তো সে‌দিন হা‌রি‌য়ে গেল
আমার শিশুকাল ,
হঠাৎ সে‌দিন ভে‌ঙ্গে গেল
‌দোলনা বাঁধা ডাল ।
‌সে‌দিন থে‌কে কেউ ব‌লে না
‌শ্লোক ধাঁ ধাঁ আর ,
গল্প গু‌লো হা‌রি‌য়ে গেল
এ‌লো দূর দর্শন বেতার ।।
সূর্যটা তো হ‌চ্ছে ঠিকই
সকাল বিকাল লাল ,
এই তো সে‌দিন হা‌রি‌য়ে গেল
আমার শিশুকাল ।
‌কোথায় যেন হা‌রি‌য়ে গেল
কৃষ‌কের শান্ত সু‌খের হা‌সি ,
হঠাৎ যেন হা‌রি‌য়ে গেল
পুরা‌নো গ্রাম বা‌সি ।।
সে‌দিন থে‌কে হা‌রি‌য়ে গেল
‌কেচ্ছা পালা গান ,
আজও ঠিকই ব‌নের ধা‌রে গা‌ছের ডা‌লে
পা‌খিরা তো‌লে তান ।
আ‌গের মত সহজ খেলা
‌কেউ খে‌লেনা ভাই ,
হা‌রি‌য়ে গেল কৃষ‌কের সুখ
পুকু‌রে মাছ গোয়া‌লে গরু নাই ।।
হা‌রি‌য়ে গেল রাখাল ছে‌লের
গরু চরা‌নোর ঐ না নদীর তীর ,
হা‌রি‌য়ে গেল বন্য পা‌খির
শান্ত সু‌খের নীড় ।
‌দিন গু‌লো কি নতুন ক‌রে
আস‌বে আবার ফি‌রে ,
নাকী চির‌দি‌নেই হা‌রি‌য়ে গেল
অজানা নদীর তী‌রে ।।


                  ~: দোল পূ‌র্ণিমা :~ ৩৬


ফুট ফু‌টে জোছনা প‌ড়ে
‌মো‌দের ধরনী‌তে হায় ,
দ‌ক্ষিণা মলয় ব‌হে খু‌শি‌তে মন ভ‌রে
আজ রা‌তে দোল পূ‌র্ণিমায় ।
‌জোছনা প‌ড়ে ফুল বাগা‌নে
ফুল ফো‌টে গন্ধ ছড়ায় ,
জানালা‌ দি‌য়ে তা‌কি‌য়ে থা‌কি
অবাক লা‌গে মন ভ‌রে যায় ।।
নদীর জ‌লে প‌ড়ে চাঁ‌দের কিরণ
ক‌রে ঝিক‌মিক ,দু'তীর উঠে হে‌সে ,
চা‌রি‌দিক শান্ত নীরব
শুধু জলধারা কলতান তু‌লে যায় ভে‌সে ।
প্রকৃ‌তি রাজ্যও আজ খু‌শি‌তে ভ‌রে যায়
‌হোলী‌ উৎস‌বের গা‌নে ,
সারা রাত কে‌টে যায় খু‌শি‌তে
নদ নদী ঝর্ণার জ‌লের কলতা‌নে ।।
কখ‌নো চাঁ‌দের আলো ঘ‌রে ঢু‌কে
‌মে‌রে যায় উঁকি ,
এমন চাঁদনী খুশির রা‌তে প্রা‌ণের অনুরা‌গে
‌প্রিয়জন কে নি‌য়ে মোরা হ‌তে চাই সু‌খি ।
‌বিছানায় শু‌য়ে শু‌য়ে ভা‌বি কত কি
কল্পনার যেন প্র‌তিচ্ছ‌বি ,
মন হা‌রি‌য়ে যায় সু‌খের স্বপ‌নে
অজা‌ন্তে হ‌য়ে উঠি ক‌বি ।।
একা ঘ‌রে একা ম‌নে
রাত কে‌টে যায় ভাবনায় ,
খু‌শির জোয়ার না‌মে কল্পনায় চোখ জুড়ায়
এই রা‌তে দোল পূ‌র্ণিমায় ।


           ~: ইচ্ছে ক‌রে :~ ৩৭


ই‌চ্ছে ক‌রে‌ বি‌দ্রোহী হ‌য়ে
‌বি‌দ্রোহ ক‌রি ,
অব‌শে‌ষে বি‌দ্রোহ ক‌রে দে‌শের ত‌রে
না হয় ম‌রি ।
তবু দেশটা‌কে তো বিপদ থে‌কে
বাঁচা‌তেই হ‌বে ,
তা না হ‌লে দেশটা মো‌দের
ত‌লি‌য়ে যা‌বে স‌বে ।।
‌দে‌শের ম‌ধ্যে বে‌ড়ে গে‌ছে
অন্যায় অত্যাচার ,
য‌দি বি‌দ্রোহ ক‌রে থামা‌তে পা‌রি
সকল অবিচার ।
‌দেশটা‌কে ভাই নতুন ক‌রে
গড়‌তে আমি চাই ,
তাই তো বি‌দ্রোহী হ‌য়ে দেশ গড়ার
উপায় একটাই ।।
‌দেশটা‌কে খুব ভালবা‌সি
আর তো কিছু নয় ,
‌বি‌দ্রোহ কর‌লে ন্যা‌য়ের প‌থে
জয় হ‌বে নিশ্চয় ।
‌বি‌দ্রোহ ক‌রে দেশ গড়‌তে
এই‌তো আমি চাই ,
চাও যারা দে‌শের ভাল
এ‌গি‌য়ে আস ভাই ।।






                ~: বীর পুরুষ :~ ৩৮


ক্ষুদ্র হ‌লেও মশা‌দের আমি ব‌লি
বীর পুরুষ ,
মশার ভ‌য়ে মানুষ মশারী টা‌ঙ্গে
‌যেন এরা কাপুরুষ ।
ক্ষুদ্র হ‌লেও মশা
বৃহৎ এরা নয় ,
সৃ‌ষ্টির সেরা মানুষ তবু
এ‌দের ক‌রে ভয় ।।
অ‌নে‌কেই মশার ভ‌য়ে
ঘ‌রে দেয় ধোঁয়া ,
মশা‌দের পণ পণ গা‌নে না‌কি
হয় না‌কো বিছানায় শোয়া ।
আরা‌মে বিছানায় শোয় মানুষ
চা‌রি‌দি‌কে মশারী ,
তবু মশারীর চা‌রি‌দি‌কে ঘো‌রে
খা‌দ্যের খোঁ‌জে মশা বেচারী ।।
সৃ‌ষ্টির সেরা মানুষ তবু
মশা‌দের কা‌ছে সা‌জে কাপুরুষ ,
তাই তো মশা‌দের ব‌লি আমি
বীর পুরুষ ।


           ~: ঝ‌ড়ের অবদান :~ ৩৯


‌মেঘ জ‌মে যে আকাশ কো‌ণে
ঝড় বু‌ঝি বা আসে ,
সবাই লুকায় ঘ‌রের কো‌ণে
ব‌কেরা লুকায় বাঁ‌শে ।
মাঠ - ঘাট জনপ্রা‌ণি হীন
শূন্য প্রান্তর ,
‌বিজলী চমকায় মেঘ ডা‌কে
ঐ আসে ঝড় ।।
ঝড় আসে প্রলয় রূ‌পে
ভা‌ঙ্গে বু‌ঝি ঘর ,
চা‌রি‌দি‌কে আর্তনাদ
কাঁ‌পে অন্তর ।
সু‌খের উল্লা‌সে মোরা
ভু‌লি স্রষ্টা‌কে ,
ঝড় এলে ভয়ঙ্কর রূ‌পে
ডা‌কি তখন তাঁ‌কে ।।
ভয়ঙ্কর হ‌লেও ঝ‌ড়ের
আ‌ছে অবদান ,
ঝড় এলে স্ম‌রি স্রষ্টা‌কে
বাঁচা‌তে মো‌দের প্রাণ ।


               ~: প্রস্তু‌তি :~ ৪০


সময় আস‌ছে পরীক্ষা হ‌বে
পাশ ফে‌লের চিন্তা সবার ,
অসৎ অবলম্ব‌নের ধুম ।
পরীক্ষার্থী‌দের ভাবনা ম‌নে
দু‌শ্চিন্তা প্র‌তিক্ষ‌ণে
‌নেই‌কো চো‌খে ঘুম ।।
যারা সময় থাক‌তে হা‌তের কা‌ছে
‌দিন কাটায় যে অলস ভা‌বে ,
বল‌লে কিছু এড়ি‌য়ে চ‌লে ।
ভা‌বে তারা নকল ক‌রে কর‌বে পাশ
এই আশা‌তেই কাটায় মাস ,
অব‌শে‌ষে বিফল হয় নির্বু‌দ্ধিতার ফ‌লে ।।
              তাই ,
সময় আছে প্রস্তুত হ‌তে ,‌বিচার বি‌বেক বুদ্ধি ম‌তে
কর‌তে হ‌বে লেখা পড়া
মানুষ হ‌তে ভাই ।

ছ‌বিঃ সংগৃহীত