যামিনী কিশোর রায়ের কবিতা
~: সোনার বাংলাদেশ :~ ৮৩
পৃথিবীর বুকে রয়েছে একটি
স্বপ্নের -সবুজের দেশ ,
সে হল এই আমাদের -ই
সোনার বাংলা দেশ ।
কত কবি,কত সাধক ,কত বীর
জন্মেছে এই দেশে ,
এদেশের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কত বিদেশী
এসেছেন নানান বেশে ।
এদেশের মাঠে মাঠে ফলে কত
সোনালী রঙের ধান ,
রাখালীর ফাঁকে রাখাল বাজায় বাঁশি
শুনি পাখির সুমধুর গান ।
গাছে গাছে ফুল ফোটে
নীলাকাশে উড়ে পাখি ,
এদেশের শোভা হেরিলে জুড়ায়
মোদের দু'টি আঁখি ।
এদেশের বুকে ষড়ঋতু
পালাক্রমে আসে ,
গগন থেকে চাঁদ ছড়ায় কিরণ
প্রকৃতি খুশিতে হাসে ।
কখনও এদেশে বৃষ্টি হয়
কখনও ঝড় বয় ,
কখনও কুয়াশায় ঢেকে যায়
কখনও সবুজময় ।
জালের মত ছড়ায়ে নদী
মেঠোপথ চলে আঁকা বাঁকা,
কখনও মাঠ ফসলে ভরা
কখনও আবার ফাঁকা ।
বাংলার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে কত মানুষ
হয়েছে কবি ভাবুক, বাউল ,উদাসী,
শ্রমিক কৃষক,জেলে তাঁতি ,কুমার কামার কুলি
কতজন দিয়েছে জীবন ;দেশকে ভালবাসি ।
সবুজ শ্যামলীমায় রয়েছে খুশির
ছড়ায়ে স্বপ্নের আবেশ,
কত না বৈচিত্র্যে সাজানো মোদের
সোনার বাংলাদেশ ।
কত বীর জীবন দিয়েছে
এই সোনার দেশের জন্য ,
এইদেশে জন্মেছি তাই গর্ব করি
হয়েছি মোরা ধন্য ।
~: করুণা :~ ৮৪
হে ঈশ্বর সর্ব শক্তিময়
এতো জানি ,তুমি নও নির্দয় ।
যে পথে বাড়াই পা
তুমি ছাড়া আর আছে কে ?
তুমি করুণাময় তাই
তোমার করুণা যাচি যে ।
আমি পাপী আমি তাপী
আমি হীন - দুর্বল ,
তাই তো নেই মোর
দৃঢ় মনোবল ।
অন্তরে কত আসন গারে
মিথ্যা দুরাশা ,
প্রভু তুমি ভেঙ্গে দাও
এ হৃদয়ে তাদের বাসা ।
সহায় - সম্বল ,বন্ধু - স্বজন
আরও বল ভাই ,
কেহই নহে আপনার ,সবাই পর
তাই তোমার করুণা চাই ।
সুখে - দুঃখে ,আনন্দ - বেদনায়
যেন তোমারে স্মরণ রাখি ,
আর সবারে ভুলতে পারি প্রভু
যেন তোমারে না দেই ফাঁকি ।
আমি অধম ,আমি নীচ
আমি বড় পাপী ,
যত পাপ তাপ ঘুচে দাও প্রভু
দাও মোরে সব মাফি ।
তুমি বন্ধু তুমি ভাই
তুমি আপন জন ,
সহায় সম্বল সবই মিথ্যা
তুমি বড় ধন ।
মিথ্যা লোভ লালসা যেন
সবি ভুলে যাই ,
আপদে বিপদে ,শয়নে স্বপনে
যেন প্রভু ,তোমারে স্মরিতে পাই ।
~: বাংলায় শরৎ :~ ৮৫
শরৎ এলোরে বুঝি এই বাংলায়
সাদা ছেঁড়া মেঘ তাই আকাশে ভাসে ,
সবুজের সমারোহে ভরেছে চারিদিক
ফুলেরা তাই খুশিতে হাসে ।
আকাশটা চেয়ে থাকে নীল শাড়ি পরে
ঝরে হালকা শিশির আর কুয়াশা ,
বাংলার বুকে এলো শান্তি ফিরে
মনে জাগে তাই কত কথা কত আশা ।
রাতে ফুটে তারার ফুল,চাঁদনী ছড়ায় চাঁদ
সবুজের মেলা দেখি ডানে আর বায় ,
এ মধুর সময়ে খুশিতে মন ভরে
আনমনে পথিক পথে গান গেয়ে যায় ।
নারকেল পাতায় জোসনা পড়ে করে ঝিকমিক
প্রভাতে ঝরে পড়ে শেফালী বকুল ,
নদী চলে প্রিয়ার সান্নিধ্যে
কাঁশফুলে ছেয়ে যায় নদীর কুল ।
খেঁকশিয়াল আর বন বিড়ালের আনাগোনা লোকালয়ে;নীলাকাশে উড়ে বলাকার ঝাঁক ,
প্রকৃতির বুকে শুধু বিস্ময়
এই শরতে বাঙালি বিমনা অবাক ।
শান্তির ছোঁয়া পাই সবখানে
শরতের আকাশে বাতাশে ,
প্রাচুর্যের ডালি নিয়ে হাতে
বাংলায় শরৎ আসে ।
:~ তুলনা :~ ৮৬
তুমি নিজেকে বড় মনে কর
জমিদারী আছে তোমার বাপ দাদার ,
এতে স্বগৌরবে ঘুরে বেড়াও
কিন্তু বলতো কি আছে নিজস্ব তোমার ?
তুমি সুন্দর ,তুমি বীর বিদ্বান
তুমি অপরুপ পবিত্র ,
তোমার নেই কোন মূল্য
যদি না থাকে চরিত্র ।
তোমার ধন আছে ,জন আছে
প্রাসাদ তুল্য বাড়ি আছে ,
তুমিও তুমি হবে না মহান ,কেন না
যাওনা তুমি আর্তপীড়িতদের কাছে ।
বড় বড় বুলি আওড়াও মুখে ,
অথচ করো না কোন কাজ ,
এতে তোমার বাড়ে কি সম্মান ?
দেখো তো ভেবে আজ ।
ঘৃণার চোখে দেখোনা তুমি
কৃষাণ কুলি মজুরের কাজ,
তুমি মহৎ ,জ্ঞানী চরিত্রবান
চরিত্র মাথার তাজ ।
তুমি নিজ হাতে করো নিজ কর্ম
ঘৃণা কর পাপকে ,পাপী কে নয় ,
তুমি সৎ পথে চল সত্য কথা বল
ধৈর্য্য ধরো ,হবেই তোমার জয় ।
দেখতে চাইনা তোমার দাদার জমিদারী
তোমার বাবার কি আছে নাই ,
শুনতে চাই না তোমার বাপ দাদার উপাধির কথা
তোমার কি আছে তাই দেখিতে চাই ।
:~ অভিমানী :~ ৮৭
ওগো অভিমানী সখি আমার
তোমার জন্যই আজ আমি কবি ,
তুমি যদি কভু অভিমান না করতে
লিখতে পারতাম না এ সবি ।
কভু তোমার অভিমান ভাঙতে পারি নাই
তোমারে স্মরি গল্প কবিতা লিখি আজ তাই ।
তুমি হয়তো জানবে না কভু
তোমারে স্মরি কত কিযে লিখি তবু ।
তোমাকে ভেবে তুলি আপন গানের সুর
পাশে নেই তুমি আজ ,গেছ বহুদূর ।
হয়তো শুনবেনা মোর গান কোনদিন
কি দিয়ে শুধিব তোমার এ ঋণ ।
দীর্ঘদিন এক সাথে থেকেও
বল নি কোন দিন কোন কথা ,
অন্য কোথাও দুঃখ নেই
এটাই সব চেয়ে বড় ব্যথা ।
তোমারে স্মরি কলমের ভাষায়
আজ কত কথাই কই ,
তোমার নামে উৎসর্গ করিব
মোর জীবনের একটি কবিতার বই ।
~: শরতে :~ ৮৮
শরতে আসতে বলেছিলাম তাকে এই পাড়া গাঁয়ে
যখন সবুজ ছেয়ে যাবে ক্ষেতে আর ক্ষেতে
আনন্দে বিভোর প্রজাপতি ফুলে রবে মেতে
ঘুরব সারা গাঁয় ডানে আর বায়ে ।
সাদা কাঁশফুলে ছেয়ে যাবে নদীর কুল
বালিতে ভরে রবে নদীর চর
মাছ রাঙা পাখি বাঁধিবে মাটিতে ঘর
ফুটিবে রাতে ঝরিবে প্রভাতে শেফালী বকুল ।
সাদা মেঘ বেড়াবে ভেসে আকাশ হবে নীল
অলি মধু খাওয়া ভুলে বেড়াবে ঘুরে
দেখতে যাব শাপলা পদ্ম ফোটা বিল
নদী তীর বেয়ে যাব দুরে একটু দুরে ;
শরৎ আসছে তাই সাদা ছেঁড়া মেঘ আকাশে ভাসে
এই শরতে আছি অপেক্ষায় যদি সে আসে ।
~: যখন আসে শরৎ :~ ৮৯
যখন আসে শরৎ এই বাংলায়
বাংলাকে মনে হয় রূপসী ,সবুজ শ্যামল ,
শরতে ফুটে উঠে বাংলার রূপ
বাংলা হয় তখন মধুর কোমল ।
সুজলা - সুফলা,শস্য - শ্যামলা
এ কথাটি শরৎ আসলে বুঝা যায়,
কেন যে বাংলা হয়েছে রূপসী
কেন যে ভরেছে এত রূপ মহিমায় ।
কবিরা গেয়ে গেছে বসন্তের জয়োগান
সাধারণ মানুষ তা কি বুঝে কখনও ,
শরতের রূপে মানুষ ভাবুক হয়ে যায়
শরৎ রাণীর রূপ যে মধুর সবুজ ঘন ।
শরতের রং যেন প্রাণেরই রং
প্রাণে জাগে কত অব্যক্ত বুলি ,
শরতের প্রতিটি প্রহর তাৎপর্যময়
আরও তাৎপর্যময় শরতের গোধূলী ।
নীলাকাশে উড়ে বলাকার ঝাঁক,শোনা যায় পাপিয়ার ডাক;রাতে খেঁকশিয়াল ডাকে ,
স্নিগ্ধ জোসনায় পথে চলে পথিক ,যখন শরৎ আসে রূপসী মনে হয় বাংলাকে ।
~: যখন মনে হয় :~ ৯০
যখন মনে হয় মৃত্যুর কথা
ভাবি; একদিন যেতে হবে সবকিছু ছাড়ি ,
সুন্দর পৃথিবীটা পড়ে রবে এমনি ভাবে
পড়ে রবে সাধের সুন্দর বাড়ি ।
তবে কেন মিছে আশা যাচি কত ভালবাসা
চাই সুন্দর নারী ,
এতো শুধু ক্ষণিকের জন্য ,যেন খেলার মাঠ
ওপারেতে যেন বসত বাড়ি ।
কেন এত মিছে আশা
মিছে বাড়াবাড়ির,
দু'দিনের জন্য মায়ার মোহে বাঁধা
দাঙ্গা হাঙ্গামা মারামারি ।
যখন মনে হয় মৃত্যুর কথা
এলোমেলো হয়ে যায় সবে ,
এ পৃথিবী ছেড়ে সবাই কে যেতে হবে
হেথা কেউ না পরে রবে ।
~: দীর্ঘ নিঃশ্বাস :~ ৯১
মনে ছিল বড় আশা চেয়েছি ভালবাসা
ভালবাসা মোরা সবাই চাই ,
তুমি কতদিন এসে মোর বসেছিলে পাশে
আজ পাশে নাই ।
তোমাকে ভালবাসতাম আমি
এখনো যাই তোমায় ভালবেসে ,
সত্যিই যদি ভাল না বাসতে মোরে
তবে কি প্রয়োজন ছিল ছলনা করার কাছে এসে ।
কত স্বপ্নই না দেখতাম তোমাকে নিয়ে
বাঁধতে চাইতাম ছোট্ট সুখের বাসা ,
এতদিনে কি ছলনাই না করলে তুমি
ভেঙ্গে দিলে মনের সব আশা ।
একটা প্রশ্ন মনে জাগে বার বার
ছলনা করে কেন মিথ্যে ভাল বাসলে ?
মিথ্যে অভিনয় করে কি লাভ হল তোমার
অকারণে কেন কাছে আসলে ?
যাকে নিয়ে ঘর বাঁধলে তুমি
নিশ্চয়ই সে আমার চেয়ে সুন্দর - শিক্ষিত বেশি ,
হয়তো বা অভিজাত ঘরের ছেলে
নয়তো বা প্রবাসী বাংলাদেশী ।
ভালই হয়েছে বেছে নিয়েছ জীবন সাথীকে
আজীবন থাকবে কত সুখে ,
রাণীর আসনে বসে তাই ভুলে গেছ আমায়
মুখ লুকাও নতুন সাথীর বুকে ।
তুমি পাশে নাই তবু আজও যাই
ঐ নদী তীরে যেখানে জেগে আছে চর ,
আজীবন তোমার স্মৃতি রয়ে যাবে মনে
যদিও তোমাকে নিয়ে বাঁধতে পারি নি ঘর ।
যখনি যাই নদী তীরে
দেখি সেথা আজও ফুটে কত কাঁশফুল ,
শুধু তুমি পাশে নাই তবু আজও যাই
তোমাকে ভালবেসে করেছি বড় ভুল ।
এখনো ভাবি তোমাকে নিয়ে
একা মন একা ঘরে ,
তোমার স্মৃতি কভু ভুলতে পারি নি
রয়ে যাবে জীবন ভরে ।
তোমাকে পেলাম না জীবন সঙ্গী রুপে
পূরন হল না মনের আশ ,
মাঝে মাঝে বুকের ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে
শুধু একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ।
~: চন্দ্রালোকিত রজনী :~ ৯২
চারিদিক নীরব - নিস্তব্ধ ,নেই কোলাহল
পৃথিবীর বুকে পড়েছে চাঁদের শান্ত স্নিগ্ধ আলো,
প্রকৃতি যেন আজ খুশিতে হাসছে
লাগছে কি যে মনোরম - ভাল ।
কানে আসে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক
মনে জাগে কত আশা,বাড়ে মনোবল ,
চাঁদের আলোয় ভরেছে চারিদিক
স্রোতের শব্দ ভেসে আসে শুধু কল্ কল্ ।
গল্পের আসর বসে ,উদাসী পথিক চলে একাকী
দুরে শোনা যায় বিরহী বাঁশির সুর ,
স্বপ্নের আবেশ ছড়িয়ে পড়ে ,হৃদয়ে খুশি জাগে
রজনীকে মনে হয় সুমধুর ।
ভয় ভীতি শঙ্কা গুলো যায় পালিয়ে
চন্দ্রালোকিত মধুর রাতে ,
এ রাত আসে পৃথিবীতে বৈচিত্র্য নিয়ে
বড় ভাল লাগে যদি প্রিয়জন থাকে সাথে ।
ফুলেরা হাসে ঐ আকাশের তারাদের সাথে
মনটা হয়ে যায় উদাসী ,
সুখের স্বপ্ন দেখি ,আশার জাল বুঁনি
চন্দ্রলোকিত রজনীকে বড় ভালবাসি ।
~: তারিন :~ ৯৩
আয়ত চোখ ,ঝাঁকরা চুল
মধুর হেসে কথা বলে ,
নম্র ,শান্ত,চঞ্চল
পায়ে হেঁটে পথ চলে ।
মেয়ে হলেও সাহসীনি সে
করে না কারো ভয় ,
আশা বড় তার
ভালবাসা দিয়ে বিশ্ব করবে জয় ।
অসত্য - অসুন্দর - অন্যায়
করে না সে পছন্দ ,
ইচ্ছা বড় তার ঘুচে দিতে যত
পৃথিবীর হিংসা - দ্বেষ - দ্বন্দ্ব ।
সাধারণ বেশে আজীবন
চায় সে থাকতে ,
যত গ্লানি - কালিমা মুছে দিয়ে
সত্যকে চায় ধরে রাখতে ।
জাতিভেদ সে চায় না মানতে
সবারে দিতে চায় ভালবাসা ,
প্রার্থনা করি ,বড় হউক সে
পূরন হোক তার মনের আশা ।
~: আজকের দিনে :~ ৯৪
আজকের দিনে মানুষের
ধৈর্য্য বেশি নেই ,
কাজ করার আগেই ফল চায়
কর্মক্ষেত্রে নেমেই ।
আজকের দিনে মানুষের
নেই কো বেশি বিশ্বাস ,
গ্লানি - হিংসা -নিন্দা - ক্রোধে ভরা
যেন প্রতিটি নিঃশ্বাস ।
বদলে গেছে আগের চেয়ে
মানুষের স্বভাব ,
পরিবারে পরিবারে লেগে গেছে
ক্রোধ ,দ্বন্দ্ব ভাব ।
আজকের দিনে আগের চেয়ে
নেই কো আনন্দ ,
সব খানেতে বিরাজ করছে
হিংসা আর দ্বন্দ্ব ।
আজকের দিনে মানুষের মনে
বিরাজ করছে বেশি অবিশ্বাস - সন্দেহ ,
সবাই নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে
খোঁজ নেয় না বেশি কারো কেহ ।
মানুষ আজ অর্থ দিয়ে কিনতে চায়
প্রেম - ভালবাসা ,
কুলি মজুরদের দেয় না দাম
তাদের সাথে ভাল করে করে না মেলামেশা ।
আগের চেয়ে বেশি করে
মানুষের হচ্ছে জ্ঞানের অভাব ,
ছল চাতুরি ,জুয়াচুরি করা
আজ মানুষের স্বভাব ।
আজকের দিনে ব্যস্ত সবাই
কারো কেউ ধারে না ধার ,
আগের দিনের নীতি কথা আজ
ভুল মনে হয় ;কি বলব আর ।
~: আরিফুল:~ ৯৫
আমরা এক সময়ে এক সাথেই পড়তাম
আমি আর আরিফুল ,
তখন আমি মিরজাগঞ্জে ছিলাম
তাই এক সাথেই ক্লাশ করতাম নির্ভুল ।
আরিফুল ছিল মোটামুটি সুদর্শন
ছাত্র হিসাবেও ভাল ,
ওর ছিল উচ্চাশা
সে বলতো একদিন ঘর করব আলো ।
আরিফুল প্রায়ই আমাকে বলতো
"আমি হব একজন বড় ডাক্তার ,
গাঁয়ের মানুষের সেবা করব
রোগ ব্যাধি থাকবে না মানুষের আর ।"
এভাবেই দিন কেটে যেতে লাগল
সে আমার সাথে অষ্টম শ্রেণীতে উঠলো ,
হৃদয়ে এলো প্রেম বুঝি তার
তাই সখি এসে পাশে তার জুটলো ।
তার এ অবস্থা দেখে প্রায়ই বলতাম
" আরিফুল ,
এখন প্রেম ভালবাসা করিস না ভাই
করলে হবে যে মহা ভুল ।"
সে কি আর আমার কথা
মন দিয়ে শুনে ,
লেখা পড়া ছেড়ে দিয়ে
সখির অপেক্ষায় প্রহর গুণে ।
কখন যে সখি আসে তার
কখন দেখা হবে ,
মিষ্টি মধুর কথা
কখন এসে কবে ।
সখির কথাই ভাবতে লাগল
সন্ধ্যা থেকে প্রভাত ,
দিনের পর দিন কেটে যায়
রাতের পর রাত ।
অনেক বার অনেক কথা
বললাম আমি তারে ,
তবুও সে শোনে না কোন কথা
ভুলে যায় বারে বারে ।
খুশিতে - আনন্দে
সুখের স্বপ্ন দেখে ,
সখির কাছে পাঠায় লিপি
কত কথাই না লেখে ।
কথায় বলে যদি
জীবনে হয় কোন ভুল ,
কোন এক সময় তার
দিতে হয় যথার্থ মাসুল ।
অবশেষে পরীক্ষায় ফেল করে
এক ধাপ গেল নেমে ,
টনক গেল বুঝি নড়ে তার
তাই প্রেম করা গেল থেমে ।
সখি তার দুধের মাছি
শেষে গেল সরে ,
আরিফুল এখন তাই
মানসিক যন্ত্রণায় মরে ।
নিজের ভুলের জন্য এখন সে
করে হাহাকার - শোক ,
ডাক্তার হওয়া তার হল না
হল রোগী, ধরলো তাকে রোগ ।
আগে মানুষ হও
তারপরে কর প্রেম ভালবাসা ,
তা না হলে আরিফুলের মত হয়ে যাবে
মুছে যাবে সকল স্বপ্ন - আশা ।
~: শরৎ রজনী :~ ৯৬
শরৎ রজনী অপরূপ বৈচিত্র্য নিয়ে
ধরণীর বুকে নেমে আসে ,
স্নিগ্ধ শান্ত চাঁদের চাঁদিমায়
প্রকৃতি খুশিতে হাসে ।
শরতের তারা ফোটা রাতে চাঁদের আলো
হয় না ম্লান সাদা ছেঁড়া মেঘে,
বুঁনো হাঁসের দল উড়ে যায় দুরে
হয়তো কোন সরবরে আপনার বেগে ।
নদ - নদী ,পুকুর -ঝর্ণার জলে পড়ে
চাঁদের স্নিগ্ধ মধুর আলো ,
ঝোঁপের কাছে জোনাকিরা জলে
শরৎ রজনী লাগে কিযে ভাল ।
পথিক চলে একাকী
আনমনে গান গায় ,
নদ,নদী আর ঝর্ণার ধারা
আপনার বেগে বয়ে যায় ।
খেঁকশিয়াল আর বনবিড়াল আসে
লোকালয়ের দিকে ,
কোথা থেকে যেন পেঁচা
ডেকে ওঠে অতর্কিতে ।
শরতের রজনীতে করুন কন্ঠে
ডেকে উঠে পিউকাহা পাখি ,
বিরহী হৃদয় প্রহর গুণে বিরহে
নিদ্রাহীন যেন দুটি আঁখি ।
শেফালী - কামিনীর মধুর সুবাস
ছুটে চলে শরতের নির্মল বাতাসে ,
ধান ক্ষেতে পড়ে হালকা শিশির আর কুয়াশা
মেঘ নেই শরৎ রজনীর আকাশে ।
দুরে শোনা যায় বিরহী বাঁশির সুর
এ সুর যেন বিরহের কথা বলে ,
ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়ে প্রকৃতি
জনপদ মুখরিত নেই মানুষের কোলাহলে ।
শরতের রজনীতে খুশির জোয়ার নামে
হৃদয়ে জাগে ভালবাসা ,
স্বপ্নের আবেশ ছড়িয়ে পড়ে
মনেতে জাগে কত আশা ।
~: বহু দিন পর :~ ৯৭
বহু দিন পর ফিরে এলাম
আমার পাড়াগাঁর বুকে ,
যেখানে কেটেছে কিশোর বেলা
শান্ত মধুর সুখে ।
চারিদিকে বাঁশ বন ,কাঁশ বন
কলা গাছের সারি ,
পূর্ব আর পশ্চিমে দুইটি নদী
মধ্যে মোদের বাড়ি ।
গাঁয়ের বুকে ফিরে এলাম
অবশেষে ,
অনেক কিছুই বদলে গেছে
দেখি ফিরে এসে ।
কত জনেই নেই আজ
গেছে পরপারে ,
শুধু তাদের ছবি ভেসে ওঠে
চোখের পাতায় বারে বারে ।
গাঁয়ে আগের মত জঙ্গল নেই
নেই গাছের সারি ,
পতিত কোন জমি নেই
হয়েছে কত বাড়ি ।
বহু দিন পর ফিরে এলাম
যেখানে আমার ঘর ,
এসে দেখি নদী তীর কাঁশফুল হীন
ফাঁকা বালুচর ।
রাখালের বাঁশির সুর থেমে গেছে
কমে গেছে নদীর মাছ ,
গাঁয়ের আমূল হয়েছে পরিবর্তন
ফিরে এসে দেখি আজ ।
~: হে তরুণ :~ ৯৮
হে তরুণ রুখে দাঁড়াও রুখে দাঁড়াও
অন্যায়ের কর প্রতিবাদ ,
ঘুচে দাও ঘুচে দাও নিমিষে যত
অপমান অপবাদ ।
অন্যায়ের বোঝা ঘাড়ে চেপে আর
থেকো না দাঁড়িয়ে ,
ঝাঁপিয়ে পড় বিপদ মাঝে করতে প্রতিবাদ
ছুটে যাও দু'হাত বাড়িয়ে ।।
ভেঙে ফেলে দাও আজ
মিথ্যার প্রাচীর যত ,
করো না কভু মরণের ভয়
সংগ্রাম করে যাও অবিরত ।
মন থেকে মুছে ফেল
যত দুর্বলতা শংসয় ,
মুত্যুর ভয়ে পিছিয়ে যেয়ো না
হোক তোমাদের জয় ।।
হে তরুণ জেগে ওঠো
মুছে দাও যত হিংসা -গ্লানি -দ্বেষ,
পৃথিবীতে ফিরিয়ে আন শান্তি শৃঙ্খলা
অত্যাচারীর দর্প করে দাও শেষ ।
প্রচার কর ,প্রচার কর
শান্তির বাণী,
পৃথিবীটাকে ভরিয়ে দাও আলোয়
জ্ঞানের আলো আনি ।।
~: পায়ে হেঁটে পথ চলা :~ ৯৯
পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করায়
কি যে আনন্দ পাই ,
অন্যান্য ভ্রমণের চেয়ে এতে আনন্দ বেশি
এত আনন্দ অন্য কোথাও নাই ।
ইচ্ছে মত পথ চলি
ইচ্ছে মত যাই থেমে,
যখন যেখানে মন চায়
যাই সেথা নেমে ।।
পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করায়
খুঁটি নাটি সব যায় দেখা ,
অপার আনন্দে মন ভরে যায়
কত কি যে যায় শেখা ।
সব ভ্রমণের চেয়ে শ্রেষ্ঠ
পায়ে হেঁটে ভ্রমণ ,
পৃথিবীতে যত ভ্রমণ আছে
নেই তো এমন ।।
~: সাধ জাগে :~ ১০০
হৃদয়ে বড় সাধ জাগে
রবি ঠাকুরের মত কবিতা লেখার ,
শরৎ বাবুর মত গল্প লেখার
বিশ্বটাকে নিমিষেই ঘুরে দেখার ।
সাধ জাগে একাকি নির্জনে রয়ে যাই
জীবনানন্দের মত ,
সারা বিশ্বে ছুটে বেড়াই
গেয়ে যাই গান অবিরত ।।
শেখ মুজিবের মত ভাষণ তেই
স্বাধীন উচ্চ স্বরে ,
পাশে গিয়ে দাঁড়াই ওদের
যারা লাঞ্চনা বঞ্চনায় কেঁদে মরে ।
নেতাজ্বী সুবাসের মত সংগ্রাম করি
মুছে দিয়ে ভীতিহীন ভয় ,
আলেকজান্ডারের মত বিশ্ব বিজয়ী হই
বিশ্বকে করি জয় ।।
সাধ জাগে ,শেক্সপিয়ারের মত নাট্যকার হই
লিখি কত নাটক ,
পাখির মত মুক্ত নীলাকাশে উড়ি
করবে না কেউ আটক ।
হৃদয়ে বড় সাধ জাগে
পরিচিত না হয়ে সুপরিচিত হই,
সবার সাথে মিলে মিশে থাকি
সবার সনে মনের কথা কই ।।