যামিনী রায়ের কবিতা
~: জীবনের মিল : ~১
জীবনে এখন দেখি
সব কিছু গরমিল ,
তবুও জীবনে আজ
পেয়েছি অনেক মিল ।
সাগরের বুকে ভাটা পড়ে যায়
সাগরের বুকে ভাটা পড়ে যায়
শুকিয়ে যায় নদ-নদী ,
তবু অবেলায় খুঁজেছি তারে
মোর জীবন সাথী সে হয় যদি ।।
আজ কাল মরা গাঙের উপর
উড়ে না শঙ্ক চিল ,
তবু আজি খুঁজেছি আমি
এই জীবনের মিল ।
তথ্য :১৯৯৩ সালে ৩য় শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে লিখা জীবনের প্রথম কবিতা ।
১১ই ফেব্রুয়ারী ২০০৮ ইং ,যুগের আলো পত্রিকায় প্রকাশিত ।
~: বিচিত্র পৃথিবী :~২
সুনীল আকাশে দিনের বেলা
সূর্যের আলো করে ঝলোমলো ,
কখনো কালো মেঘে ছেয়ে যায় সারাটা আকাশ
ঢাকা পড়ে যায় সূর্যের আলো ।
নিশীতে নীলাকাশ
হয়ে যায় কালো ,
কালো আকাশে মিট মিট করে জ্বলে
চেয়ে থাকা নিরব তারকা গুলো ।
কখনো শান্ত আলো সাথে নিয়ে
চাঁদ দেয় দেখা ,
শোভাকৃত হয় গোটা প্রকৃতি
যেন রূপ লাবণ্যে মাখা ।
আছে কত বিচিত্র জিনিস
আকাশ নীলের মত,
সূর্য,চাঁদ ,তারকা ছাড়াও
ঢেউয়ের মুকুট পরা সমুদ্র ।
মাঠে ঘাটে পথে তীরে
কত ফুলের মেলা ,
সকাল সাঁঝে পাখিরা গায় গান
কোথাও সুউচ্চ বিশাল পর্বত মালা ।
সবুজ মাঠের আর শ্যামল বনের বুক চিরে
বয়ে যায় ,হাজার নদীর ধারা ,
কোথাও আবার ধূ-ধূ করা মরুভূমি
দেখিয়া কত বিচিত্র শোভা হই আত্মহারা ।
~: আপন অধিকার :~৩
মুখে নেই হাসি-কথা,সবাই যে নীরব
আছে শুধু বেদনা রহস্যই সব ।
ভাবছো সবাই চলে যাচ্ছি তাই আপন কর্মলয়ে
ঠিকই একদিন আসিব ফিরে কার্য সমাধায়ে ।
হয়তো অনেকেই থাকবে না সেদিন
যে দিন আসিব ফিরে ,
শোনাব পুরানো দিনের অতীত কথা
সেই যে বেদনা বিরহে ।
বাঁচার মত বাঁচতে চাই
- তাই
আপন অধিকার করিতে আদায়
দেশ হতে দেশান্তরে ছুটছি ভাই ।
ধন চাই,মান চাই,খেতে চাই
চাই নিজস্ব অধিকার ,
হঠাৎ একদিন আসিব ফিরে
অধিকার আদায়ের পর ।
আসিয়া ফিরে শোনাব তোমাদের
গল্পের আসরে ,
ফেলে আসা দিনের ইতিহাস
আজ কভু ফিরছি না ঘরে ।
~: বসন্তের রাতে :~৪
বাঁশ বনের মাথার উপর হঠাৎ দেখি কাল
থালার মত চাঁদ উঠেছে ঠান্ডা গোলগাল ।
দরজাটা আস্তে খুলে পেরিয়ে এলাম ঘর
ঘুমন্ত এই প্রকৃতি যেন কাঁপছে থর থর ।
কোথেক থেকে এক উটকো বাতাস বইতে লাগল হায় ,
ফুল বাগানের গাছ গুলো দুলছে বাগান ময় ।
এক নাগারি ডাঁকছে ঝিঁ ঝিঁ বিরাম নেইকো তার
ঝোঁপের কাছে জোনাকিদের বসেছে দরবার ।
নারকেলের ঐ লম্বা মাথায় পড়েছে চাঁদের আলো
গগন জুড়ে ঝুলে আছে নীরব তারকা গুলো ।
হাঁটতে হাঁটতে এসেছি যখন ছোট নদীটার বাঁকে
হঠাৎ এসে বুঁনো ফুলের লাগল গন্ধ নাকে ।
শুকিয়ে গেছে নদীটা নেইকো বেশি জল
সেথায় পড়ে চাঁদের কিরণ করছে ঝলমল ।
হারিয়ে যাওয়া দিনগুলো সব পড়ছে মনে এখন
কৈশোর আর কচি কাঁচা ছিলাম যখন ।
খেলার সাথী ছিল অনেক খেলেছি এক সাথে
পড়ছে মনে তাদের কথা এই বসন্তের রাতে ।
~: অতিথি পাখি :~ ৫
অতিথি পাখি অতিথি পাখি
শীতকালে এদেশে তোমরা আসো ,
এদেশ বাংলাদেশ
সত্যিই কি এদেশকে ভালবাসো ?
শীত শেষে বিদায় নিয়ে
যাও স্বদেশে ,
আবার তোমরা চলে আস
হেমন্তের শেষে ।।
শীতের দুপুরে ছড়িয়ে থাকো ,
বাংলার মাঠে -ঘাটে ,
মনের সুখে কি যেন খাও
-খুটে খুটে ।
সোনালী রোদের ঝিলিক লাগে
তোমাদের ডানায়,
হঠাৎ করে কাঁপুনি লাগে
শীতের হিমেল হাওয়ায় ।।
যখন উড়ে যাও ক্ষিপ্র ডানা ঝাড়া দিয়ে
মনে হয় ইঞ্জিনের মত ,
গাছের মাথা দিয়ে নুইয়ে
কল রবে ভরে দাও মাঠ-ঘাট যত ।
~: আমাদের গ্রাম :~ ৬
~: আমাদের গ্রাম :~ ৬
গাঁ খানি মোদের ছবির মতন
তরু-লতায় ঘেরা ,
ধরায় যত গাঁ আছে
সব গাঁয়ের সেরা ।
গাঁয়ের দুপাশে দুইটি নদী
মধ্যে মোদের বাড়ী,
নদীর ঘাটে জল আনতে
গেঁয়ো বধুদের সারি ।।
খুব সকালে কৃষাণেরা
মাঠের পানে যায় ,
মাঠের পরে দিন কাটাতে
মনের সুখে গান গায় ।
ভর দুপুরে গাঁয়ের মানুষ
নদীতে চান করতে যায় ,
নদীর জলে ছেলে -মেয়েরা
লুটোপুটি খায় ।।
বিকেল বেলা নদী তীরে
রাখালেরা চড়ায় তাদের ধেনু ,
রাখালীর ফাঁকে ফাঁকে
বাজায় আরো বেণু ।
সাঁঝের বেলা নীড়ে ফিরে পাখি
কৃষাণেরা ঘরে ফিরে আসে ,
রাখাল ফিরে ধেনু লয়ে
শান্ত সুখের আশে ।।
রাতে চাঁদ ছড়ায় কিরণ
ঘরে ঘরে জ্বলে আলো ,
সব মিলিয়ে মোদের গাঁ
শান্ত নীরব ভাল ।
মোদের গাঁয়ের কথা বলব কত
সবি বলার শেষ,
সব কথা বলেছি কবিতায়
নেইকো বলার লেশ ।।
~: সেই গাঁয়ে :~৭
গাঁ হতে এসেছি আমি
আজব শহরে,
ফিরে যেতে সেই গাঁয়ে
বড় ইচ্ছে করে ।
পাখি ডাকা ছায়া ঢাকা
গাছ-গাছালির সারে ,
কভু কি যাব সেথায় ?
গাঁ খানি আজও মন কাড়ে ।।
ছিলাম যখন সেই গাঁয়ে
জুটে অনেকের সাথে ,
যেখানে ইচ্ছে সেখানে গেছি
দিনে নয়তো রাতে ।
পাবনা দেখা অনেকেরই
আজ গেলে গাঁয়ে ফিরে ,
বদলেছে অনেক কিছুই
দিনগুলো আজও মনে পড়ে ।।
অতীতের সেই গাঁয়ের স্মৃতি
চোখের পাতায় ভাসে ,
গাঁ ছেড়ে আজ কোথায় এলাম
কি করিতে কিসেরই বা আশে ?
গাঁয়ের লোকের মধুর বাণী
আজও বাজে আমার কাণে ,
ভুলব না সেই গাঁয়ের কথা
সময়ের ব্যবধানে ।।
জন্মিয়া যে নিজ জন্মভূমিকে ভাল না বাসে
জন্মভূমি অনুন্নত বলে যে হাসে ;
সে কি নিন্দুক না মানব ?
নিন্দে জন্মভূমিকে ।
জন্মভূমিতে জন্মি যে হিংসে জন্মভূমি,
পশুর চেয়ে নীচ সে মহা অধমী ।
নিজ জন্মভূমিকে ভালবেসে যার মন না জুড়ায়
জন্মভূমিকে ছেড়ে যেন সে বিদেশে যায় ।
পূর্বপুরুষ অস্তমিত হয়েছে যে স্থানে,
শেষ আশ্রয় লভিতে কার ইচ্ছা না জাগে মনে ?
~: রূপসী বাংলা :~ ৯
আশে পাশে ঝোঁপ-ঝাড়
আরো বন -বাদাড়,
ছোট বড় নতীর ধার
কত পর্বত ও পাহাড় ।
বাংলার মাঠ-ঘাট
আহা ! কি অপরূপ,
মন মাতানো প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যময়
বাংলার ষড়ঋতুতে আছে পরিচয় ।
গ্রীষ্মে শুরু ঋতুর
বসন্তে শেষ,
সব মিলিয়ে রূপসী বাংলা
আজব মোদের দেশ ।
~: বন্ধুত্ব :~ ১০
মানবের তরে গড়িব এক নতুন সমাজ
সবারে বাসিব ভাল করিব না গর্ব অহংকার,
রহিবে না কভু বিচ্ছেদ
মানব হয়ে বাঁচার অধিকার রহিবে সমান সবার ।
উঁচু-নিচু,বড় -ছোট রহিবে না ভেদাভেদ
করিব না কভু দ্বেষ-বিদ্বেষ রাহাজানী অত্যাচার ।
সবার সাথে গড়িব বন্ধুত্ব ভাব
মানব হয়ে বাঁচার অধিকার রহিবে সমান সবার ।
মানব মোরাই শ্রেষ্ঠ জীব
এই ধরণীর বুকে ,
সকল মানব ভাই ভাই
কাঁদব একে অপরের দুঃখে ।
ছবিঃ সংগৃহীত