যামিনী কিশোর রায়ের কবিতা
~: সুখী ~ ১০১
যে জন নিজ হাতে করে নিজ কর্ম
ধীর ভাবে পালন করে কর্তব্য ধর্ম ।
পরের বিপদে যায় যে ছুটে
সেই তো সুখী; হোক না সে কুলি বা মুটে ।
কুঁড়ে ঘরে থেকেও যে শান্তিতে কাটায় দিন
নিশ্চিন্ত মনে বাস করে ,যার নেই কোন ঋণ ।
সেই তো সুখী এই ভূবনে
শংসয় আর দুর্বলতা যার নেইকো মনে ।।
সর্বদা প্রফুল্ল মন যার উদ্যম থাকে সাথে
আনন্দে বিভোর থাকে দিনে ও রাতে ।
কামনার সাথে যে বেশি করে না আশা
সবারে দিতে পারে যে প্রেম - ভালবাসা ।
সেই তো পরম সুখী এই ধরণীতে
সারা জীবন কাজ করে যায় পরের হীতে ।
স্বদেশের জন্য যে দিতে পারে আত্ম বিসর্জন
সৎ ভাবে করে যে অর্থ উপার্জন ।।
সাধারণ ভাবে যে করে বসবাস
হিংসা - নিন্দা মুক্ত যার প্রতিটি নিঃশ্বাস ।
স্বাধীন স্বতন্ত্র আর পাখির মত মুক্ত
সুখী তো সেই ;যে থাকে না কারো প্রভাব যুক্ত ।
অল্প পেয়েও যে থাকে সন্তুষ্ট
স্বদেশে বাস করে হয় পরিপুষ্ট ।
সুস্থ দেহে যার সুস্থ মন
ধন্য জীবন তার সুখী সেই জন ।।
~: শারদীয়া পুজা :~ ১০২
পুজা মানেই আনন্দ -সুখ- শান্তি
দূর হতে দেশে ফিরে আসা ,
পুজা মানেই নতুন ভাবে পরিচয়
নতুন ভাবে শুরু প্রেম - ভালবাসা ।
নতুন ভাবে জীবনের শুরু
শরতের স্নিগ্ধ নির্মল হাওয়া ,
পুজা মানেই গল্পের আসর
সেই শৈশবে ফিরে যাওয়া ।।
পুজা মানেই নতুন নতুন
গল্প -গান -কবিতা লেখা ,
আত্মীয় স্বজনদের সান্নিধ্য পাওয়া
ভবিষ্যতের রঙিন স্বপ্ন দেখা ।
পুজা মানেই ঢাকের বোল ,সানাইয়ের আওয়াজ
গান বাজনার ধূম ,
পুজা মানেই শান্ত অবসর
রাত জাগা নেই চোখে ঘুম ।।
পুজা মানেই নতুন নতুন
কেনা কাটার পালা ,
প্রিয়জন কে উপহার দেওয়া
ভুলে যাওয়া যন্ত্রণা জ্বালা ।
পুজা মানেই খুশির জোয়ার
নতুনের সাড়া ,
পুজা মানেই পবিত্র -শুচিতা -ধর্মীয় ভাব
আনন্দে আত্মহারা ।।
~: যামিনী :~ ১০৩
হে যামিনী,তুমি আছ বলে
পৃথিবীতে সুখ - শান্তি আছে ,
কি মধুর বৈচিত্র্য তোমার
লুকায়ে বুকের মাঝে ।
তুমি যখন নেমে আসো পৃথিবীতে
সুখ - শান্তি ফিরে আসে ,
নর - নারী স্বাগত জানায় তোমাকে
তারা তোমাকে অকৃত্রিম ভালবাসে ।।
পৃথিবীর বুকে আসো তুমি
মুছে দিয়ে দিবসের জ্বালা ,
আলোর উৎস কে নিভে দিয়ে
গলায় পরে তিমিরের মালা ।
তোমার আগমনে
দিবাকরের প্রভাব কমে আসে ,
তোমার শান্ত তিমিরের মাঝে
নর -নারীকে ভালবাসে ।।
দিবসের আলোয় প্রিয়জনকে
যায় না হৃদয় দিয়ে ভালবাসা ,
তাই ধরণীর যত নর - নারী
করে তোমার প্রত্যাশা ।
~: তবুও স্বপ্ন দেখি :~ ১০৪
স্বপ্নে দেখি পৃথিবীটা
কত সহজ - সরল -সুন্দর -মধুর ,
বাস্তবে দেখি পৃথিবীটা
সংগ্রামের স্থান ;বড় বেদনা বিধুর ।
স্বপ্নে দেখি পৃথিবীটা যেন এক
নাট্য - সংলাপের আসর ,
তাই তো বেঁচে থাকার জন্য
স্বপনে রচনা করি স্বর্গ সুখের বাসর ।।
আবেগ দিয়ে দেখি
পৃথিবীতে কত সহজে যায় চলা ,
ইচ্ছে মত করতে পারি সব
ইচ্ছে মত যায় প্রাণের কথা বলা ।
স্বপ্নে যা সত্য - সঠিক
বাস্তবে তা মেকি ,
তবুও আশায় বুক বাঁধি
তবুও স্বপ্ন দেখি ।।
~: ছন্দা :~ ১০৫
সখির ডাক নাম
ছন্দা ,
প্রিয় ফুল তার
রজনী গন্ধা ।
প্রিয় ঋতু
শরৎ কাল ,
শান্ত - নম্র
তার হাল -চাল ।।
প্রিয় বার
রবি ,
প্রিয় মানুষ তার
কবি ।
প্রিয় সময় তার
যামিনী ,
প্রিয় ফুল
কামিনী ।।
মাথায় তার বব ছাঁট
লম্বা সিঁথি ,
প্রিয় সখি তার
মিস তিথী ।
কথা বলে
মিষ্টি হেসে ,
হারিয়ে গেল
অবশেষে ।।
তথ্যঃ ০৩/০৩/২০০৮ ইং তারিখে যুগের আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয় কবিতাটি ।
~: আজব পৃথিবী :~ ১০৬
অনুভবে আর স্বপ্নে মনে হয়
কত সহজ সুন্দর এই পৃথিবী,
বাস্তবে তা বড় নির্মম কঠিন জটিল
ইচ্ছে করলেও ইচ্ছে মত করা যায় না সবি ।
পৃথিবীটা একটা এমনি স্থান
হেথা ইচ্ছে মত যায় না চলা ,
যা ইচ্ছে তাই করবে ,হয় না তা
ইচ্ছে মত যায় না সব কিছু বলা ।।
হেথা কেউ চির সুখী ,সুন্দর চন্দ্রমুখী
কেউ থাকে প্রাসাদে কেউ কুঁড়ে ঘরে ,
কেউ রয় হাসি খুশি ,চির সুখ শান্তিতে
কেউ বা কেঁদে মরে ।
হেথা কেউ চির অমর কীর্তিমান
বেঁচে রয় চিরদিন ,
কেউ আবার কুৎসিত কদাকার অধম
মৃত্যুর সাথেই হয়ে যায় বিলীন ।।
কেউ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত থাকে
কেউ করে কাজ পরের হীতে ,
কেউ সম্পদ শালী প্রতাপশালী
কেউ রিক্ত নিঃস এই পৃথিবীতে ।
স্রষ্টার সৃষ্টি সবই আজব
আজব এ পৃথিবী ,
এ যেন এক আজবের খেলা
অকুল পয়োধি ।।
~: প্রেরণার উৎস:~ ১০৭
আমি যখন কবিতা লিখি ;প্রেরণা দেয় আমাকে
নদ নদী,বাঁশ বন,কাঁশ বন,ভোরের নির্মল বাতাস,
গ্রীষ্মের খরতাপ,কাল বৈশাখী ঝড়,পড়ন্ত দুপুর
বর্ষণ মুখর দিন ,বর্ষণ মুখর সন্ধ্যা,শরতের নীলাকাশ ।
অবারিত ধান ক্ষেত,সবুজ প্রান্তর ,হালকা কুয়াশা
সাদা ছেঁড়া মেঘ,হেমন্তের দুপুর,নৌকা বাঁধা ঘাট,
শীতের সকাল,সোনালী রোদ,গোধূলি বেলা ,
গরুর গাড়ি,বসন্ত সন্ধ্যা,ধূ ধূ মাঠ ।।
নদী তীর,বালুচর,কাঁশফুলও প্রেরণা দেয় আমাকে
প্রেরণা দেয় কত নাম না জানা পাখি ,
ভাঁট ফুলের মত কত ফুল কথা বলে যেন আমাকে
এক দৃষ্টে চেয়ে থাকি ,অপলক দুটি আঁখি ।
জোৎস্না রাত,পাড়াগাঁর দুপ্রহর,মেঠোপথ,চৈত্র নিশী,শর্সে ক্ষেত,বোলতার চাক,জোনাকি পোঁকা,
মৌমাছির গান,রাখালের বাঁশির সুর,দিঘির কালো জল,তারা মেলা;তাদের প্রেরণায় কত কবিতা লিখি নেই মাপা জোখা ।।
গাঁয়ের সহজ সরল জীবন যাপন,ছোট্ট কুঁড়্ঘের
সবুজে ভরা বৈচিত্র্যময় নির্মল প্রকৃতি,
কলসী কাঁখে গ্রাম্যবধু নদীর ঘাটে
কবিতায় এসবের তুলে ধরি আকৃতি ।
ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক,গুবরে পোকার গুমরানি
কোকিলর কুহুতান,পেঁচার ডাক,বাদুরের পথ চলা,
ঋতুর পালা বদল,ঘুঘুর ডাক,রেল লাইন
বলতে চেয়েও কত কথা যায় না কভু বলা ।।
কৃষাণের গান,গ্রাম্য মেয়ের সহজ সরল হাসি
পৌষের রাত,পাখির তান,বলাকার ঝাঁক,
আরও প্রেরণা দেয় ফুটন্ত শাপলা পদ্ম
ভোর বেলায় দুরন্ত মোরগের ডাক ।
সূর্যোদয় সূর্যাস্তের স্বপ্নীল পরিবেশ
বট বৃক্ষ,আম্রবাগান,শ্মশ্বান ঘাট,ঝাউ বন
প্রেরণা দিয়ে উৎসাহিত করে তোলে আমাকে
তাদের প্রেরণায় কবিতা লিখে আমার এ কবি মন ।।
~: বাংলা দেশ :~ ১০৮
স্বপ্নের দেশ ,সবুজের দেশ
ধানের দেশ,গানের দেশ ,
রূপসী দেশ,মনোহারিণী দেশ
বাংলা দেশ ,বাংলা দেশ ।
সুজলা সুফলা ,শস্য শ্যামলা
আমাদের এই বাংলা দেশ ,
রূপে ও সৌন্দর্য্যে বৈচিত্র্যময় সে
রূপের তো তার নেইকো শেষ ।।
বীরের দেশ এই কবিয়ালদের দেশ
এই দেশ সংগ্রামী জনতার ,
এদেশের জনতা সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে
হৃদয়ে বেঁধেছে বাসা মায়া মমতার ।
নবান্নের দেশ,আনন্দের দেশ
গল্পের দেশ ,কবিতার দেশ ,
পাখির দেশ ,নদীর দেশ
এ দেশের সবর্ত্র ছড়ায়ে স্বপ্নের আবেশ ।।
ধান আর গানের মত যদি
এই দেশ শিল্পে সমৃদ্ধ হয় ,
দেখিবে একদিন বাংলা দেশ
পৃথিবীর বুকে বিজয় পতাকা উড়াবে নিশ্চয় ।
~: হে নবীন :~ ১০৯
হে নবীন জেগে ওঠো জেগে ওঠো
বন্ধ আঁখি খোল,
ঘুচে দাও যত কালিমা - দ্বেষ
মুক্ত কন্ঠে মুক্তির গান তোল ।
অলসের মত বিছানায়
থেকো না শুয়ে আর ,
খুলে দাও খুলে দাও
বন্ধ যত বাতায়ন দ্বার ।।
পৃথিবীতে বেড়ে গেছে আজ
কত গ্লানি ,অন্যায় অবিচার ,
হে নবীন করো এর প্রতিকার
ঘুমিয়ে থেকো না আর ।
এগিয়ে চল সামনের দিকে
করো না কভু মরণের ভয়,
উড়িয়ে দাও বিজয় পতাকা
হোক তোমাদের জয় ।।
আলোয় ভরিয়ে দাও পৃথিবীটাকে
জ্ঞানের আলো আনি ,
ছড়িয়ে দাও সব খানেতেই
সুমধুর বাণী ।
এগিয়ে চল অবিরত
কি রাত্রি - দিন,
জেগে ওঠো জেগে ওঠো
হে নবীন ।।
~: বাতায়ন পাশে শেফালী গাছ :~ ১১০
শরতের শান্ত রজনীতে
ধরণী হাসছে যেন শুভ্র জ্যোছনায় ,
তারাগুলো মিটি মিটি হাসছে
ঐ কালো আকাশের গায় ।
কি সুন্দর একটা গন্ধ
ছড়িয়ে পড়েছে মৃদু বাতাসে ,
তাই বারে বারে ঘ্রাণ পাই
নাকের কাছে ছুটে আসে ।।
তীব্র নয় এ গন্ধ
অতি মৃদু সে ,
হাওয়ায় মিশে ছড়িয়ে পড়ে
নাকের কাছে ছুটে আসে ।
কিসের গন্ধ এটা ?
ফুলের ; তবে কি ফুল ?
ভেবে দেখি বার বার
হয়ে যাই আকুল ।।
তবে বোধ হয় শেফালী হবে
তাই গন্ধ পাই আজ ,
শরতের এই রজনীতে টের পাই
বাতায়ন পাশে আছে শেফালী গাছ ।
তথ্যঃ একাদশ শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়েও বাড়িতে ফুলের একটি বাগান ছিল । সেটি আমার নিজ হাতে করা বাগান ।
দশম শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে লিখা হয়েছিল কবিতাটি ।
~: মূল্য :~ ১১১
সাদা কাগজটার মূল্য কি
যদি তাতে কিছু লিখা না যায়,
ভালবাসার মূল্য কি
যদি তা কাউকে দেওয়া না যায় ।
মানুষের মূল্য কি
না থাকলে চরিত্র ,
ফুলের মূল্য কি
যদি না থাকে পবিত্র ।।
কলমের মূল্য কি
যদি না থাকে কালি ,
চরের বৈশিষ্ট্য কি
না থাকলে অজস্র বালি ।
চোখের মূল্য নেই
না গেলে দেখা ,
কলম ধরতে জানলেও কি লাভ
না গেলে লেখা ।।
সুন্দর কন্ঠের মূল্য কি
না গেলে গাওয়া ,
দাঁড় ধরে লাভ কি
না গেলে দাঁড় বাওয়া।
যুক্তিহীন তর্ক করায় মূল্য নেই
না থাকলে যুক্তি ,
খাঁচার ভিতর বন্দি থেকে বিহঙ্গের কি লাভ
না পেলে মুক্তি ।।
বাঁশির মূল্য নেই
না থাকলে সুর ,
মরিচীকা যায় না দেখা
না গেলে একটু দুর ।
জীবনের মূল্য কি
জীবন যদি সার্থক না হয় ,
জয়ের মূল্য তখন
যখন ঘটে পরাজয় ।।
~: উপায় :~ ১১২
সৃষ্টির সেরা জীব
আমরা অর্থাৎ মানুষ ,
আমাদের জ্ঞান আছে বিবেক আছে
আরো আছে হুঁশ ।
স্রষ্টা পাঠিয়েছেন মোদের
এই পৃথিবীতে ,
ভাল কাজ করার জন্য
স্রষ্টার সৃষ্টির হিতে ।।
তাই স্রষ্টার নিয়ম মোদের
হবে মানতে ,
তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে
হবে জানতে ।
এখানে মোদের প্রচার করতে হবে
সৃষ্টি কর্তার বাণী ,
জীবনটাই বৃথা হবে যদি
তাঁর সৃষ্টি সম্পর্কে না জানি ।।
পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে
পৃথিবীতে এসে ,
যদি না জানি কিছু
তবে বৃথাই জীবন শেষে ।
স্রষ্টার সৃষ্টি সম্পর্কে জানতে যদি চাও
তবে বই পড় ,
আরো জানবে ভাল করে
যদি ভ্রমণ কর ।।
~: হেমন্তের সকালে :~ ১১৩
ঝকঝকে সকাল বেলা
ঘাসের ডগায় শিশির ,
পূব আকাশে রঙের খেলা
শুনি পাখির কিচির মিচির ।
ঘুঘু ডাকে নির্জনে ঐ
মোরগ ডেকে উঠে ,
ছেলে মেয়েরা মাদুর পেতে
উঠানের মিষ্টি রোদে জুটে ।।
মাঠের পরে ধান ক্ষেতে
কৃষাণেরা চলে ,
হেমন্তের এই সকাল বেলা
কৃষক গৃহিণী কত কথাই বলে ।
এই সকালে গান গেয়ে ঐ
যায় চলে কে দূরে ,
হিমালয়টা দাঁড়িয়ে আছে
দেখি উত্তরে ।।
আনন্দ আনন্দ যেন সব খানেতেই
আনন্দেরই খেলা ,
কি যে খুশি জাগে হৃদয়ে সবার
এই হেমন্তের সকাল বেলা ।
~: সার্থক জীবন :~ ১১৪
কোন রকমে বেঁচে থাকা
এতো জীবন নয় ,
সেই তো হল সার্থক জীবন
যে জীবন পূর্ণ সংগ্রাম ময় ।
যে জীবনে সংগ্রাম আর সংগ্রাম
অহর্নিশি চলে ,
সেই তো হল সার্থক জীবন
জ্ঞানীরা তাই বলে ।।
সংগ্রামই জীবন ,জীবনই সংগ্রাম
সংগ্রাম মাঝেই জীবনের সার্থকতা ,
যে জীবনে সংগ্রাম নেই,বিপদের পরীক্ষা নেই
সে তো সার্থক নয় ; শুধুই ব্যর্থতা ।
যে জীবনে পরীক্ষার পর পরীক্ষা আসে
রণের পর রণ ,
বিপদের মুখোমুখি দাঁড়ায় বার বার
সেই তো সার্থক জীবন ।।
তথ্যঃ ১০/০৬/২০০৭ ইং তারিখে দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কবিতাটি ।
~: প্রতিদান :~ ১১৫
ধূপের মত নীরবে জ্বেলে যাও চিরদিন
চেয়ো নাকো প্রতিদান ,
কেউ যদি করে তব অপমান -আঘাত
শোধ নিও না করে তাকে অপমান ।
ফুলের মত ফুটে থাকো
বিলিয়ে দাও সুবাস ,
নিজ সৌন্দর্যে পরকে মজাও
করো নাকো প্রতিদানের আশ ।।
প্রতিদান চেয়ো নাকো কারো কাছে
হোক সে প্রতিদান স্থুল বা ক্ষীণ ,
গোপনে গোপনে করে যাও সৎ কাজ
পরের হিতে ;চিরদিন ।
~: হেমন্ত গোধূলি :~ ১১৬
হেমন্তের গোধূলি বেলায়
কি শিহরণ হৃদয়ে জাগে ,
চারিদিকে বাজে যেন নবান্নের গান রাগে অনুরাগে ।
চারিদিকে মাঠে দেখি
পাকা পাকা ধান ,
এবার আসবে কৃষকের ঘরে
হাসি আর গান ।।
রাখাল চলে গরু লয়ে
পথে ধূলি উড়ায় ,
ভরা মাঠের পানে চেয়ে
কৃষকের চোখ জুড়ায় ।
ক্ষেতের পানে চেয়ে কৃষকের
দুলে স্বপ্ন গুলি ,
অপরূপ সাজে এসেছে আজ
হেমন্ত গোধূলি ।।
~: প্রয়োজন :~ ১১৭
বড় স্বার্থের জন্য ছোট স্বার্থ
ত্যাগের প্রয়োজন ,
বড় অনুষ্ঠান করতে হলে
করতে হয় বড় আয়োজন ।
সুপরিচিত আর পরিচিত
এক বস্তু নয় ,
সুপরিচিত হতে হলে অতিরিক্ত
গুণের প্রয়োজন হয় ।।
ধন থাকলেও অমর হওয়া
যায় না কভু এই পৃথিবীতে ,
প্রয়োজন হয় কৃতিত্বপূর্ণ কাজের
করতে হয় মহৎ কাজ পরের হিতে ।
পৃথিবীতে কোন বস্তুই
অপ্রয়োজনীয় নয় ,
বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে
প্রতিটি বস্তুরই প্রয়োজন হয় ।।
~: ব্যর্থতা :~ ১১৮
ব্যর্থতা আছে তাই
চেষ্টা করে যাই ,
বার বার চেষ্টা করি
যদি সাফল্য পাই ।
যদি ব্যর্থতা না থাকতো
কেউ চেষ্টা করতো কি আর ,
ব্যর্থতা আছে বলে
চেষ্টা করি বার বার ।।
যতই করি সংগ্রাম - চেষ্টা
সদা সারাক্ষণ ,
পৃথিবীতে আছে তবু
ব্যর্থতারও অনেক প্রয়োজন ।
~: জোনাকি :~ ১১৯
ঝোঁপের কাছে রাতের আঁধারে
মিটি মিটি জ্বলে ,
ঝাঁক ঝাঁক রকেটের মত
এদিক ওদিক চলে ।
ঝাঁক বেঁধে চলে ওরা
এদিক ওদিক উড়ে ,
এখান থেকে ওখানে যায়
মনের হরষে ঘুরে ।।
সন্ধ্যা হলেই দেখি ওদের
জ্বলে ঝোঁপের কাছে ,
স্বতন্ত্র -স্বনির্ভর তারা
ওদের নিজের আলো আছে ।
:~ নারিকেল :~ ১২০
পৃথিবীতে আছে এক
সুন্দর আজব ফল ,
চারিদিকে তার বেড়ি আর বাঁধ
অন্তরালে সুস্বাদু জল ।
চারিদিকে আবরণী
মধ্যে সুস্বাদু শ্বাস ,
মনের হরষে খেতে পারি
ফলে বারো মাস ।।
~: রবীন্দ্র নাথ :~ ১২১
হে অমৃতের সন্তান
চির অমর তুমি ,
বিশ্বের বিরাট বিস্ময়
অমৃত নিয়েছ চুমি ।
অভিজাত বংশধর হয়েও
ছিলে সাধারণ মানুষের মত ,
বাঁধাধরা শিক্ষা লওনি তবু
নিলে জীবনের শিক্ষা যত ।।
বিদ্যালয়ের ডিগ্রী নেইকো তোমার
তবুও ডিগ্রী ধারীদের ঘটেছে পরাজয়
তোমার কাছে;তুমি রইলে অটল ভাবে
করলে বিশ্ব জয় ।
যারা বাংলা সাহিত্যকে ছেড়ে
বিদেশী সাহিত্যকে বেসেছিল ভাল ,
তুমি দেখিয়ে দিলে বাংলা সাহিত্যের গৌরব
বিশ্বময় ছড়িয়ে দিলে আলো ।।
সাহিত্যের সব খানেতেই অবদান তোমার
তোমার হাতের পরশ সবখানে ,
বিশ্বের বিরাট বিস্ময় তুমি
এতো সকলেই জানে ।
সাহিত্যের সব শাখায় অবদান তোমার
কি শিল্পী সুরকার ,
তোমার তুলনা শুধুই তুমি
নেই তো কেউ আর ।।
~: হেমন্তের দুপুরে :~ ১২২
হেমন্তের দুপুরে উদাসী পথিক আমি
পথে চলি একা ,
যা দেখেছি তা নয়;যা দেখি নি
তাই হয় আজ আমার দেখা ।
আমি দেখি আজ দু নয়ন ভরে
রূপসী প্রকৃতি রূপসী বাংলার ;
উদাসী পথিক আমি তাই
সাথে কেউ নাই আর ।।
মাঠের পর মাঠ ক্ষেত আর ক্ষেত
পাকা পাকা ধান ,
আমি দেখি,কৃষাণ কাটে ধান দল বেঁধে
কন্ঠে বাজে ক্লান্তি নাশা গান ।
আকাশের গায় নেই কোন মেঘ
হেমন্তের এই রৌদ্রজ্জ্বল দুপুরে ,
বাঁকা চাঁদ তাকিয়ে আছে
হিমালয়ের চূড়াটা দেখি ওই উত্তরে ।।
বাঁকা চাঁদ যেন এক খন্ড মেঘ
ঝুলে আছে সুনীল আকাশে ,
মিঠে রোদ ভালই লাগে
হেমন্তের দুপুরে শান্তির ছোঁয়া মৃদু বাতাসে ।
আমি হেটে চলি নদীর ধার দিয়ে
রেল লাইন ধরে ,মেঠোপথ ধরে ,
চারিদিকে কোলাহল কলরব
আনন্দ এসেছে বুঝি আজ কৃষকের ঘরে ।।
ঐ বিল থেকে ,নদীর ধার থেকে
হঠাৎ করে উড়ে যায় বক ,
আমি থমকে দাঁড়াই ,চেয়ে দেখি
সাদা সাদা ধূসর পালক ।
কেউ এমনি ভাবে চেয়ে দেখে কিনা জানি না;
আমি শুধু দেখি ,একাকি পথে চলি ,
দু নয়ন ভরে দেখি বাংলার প্রকৃতি
আপন মনে একাকি কথা বলি ।।
হেটে চলে যাই বহুদুরে
দুরে আরো দুরে ,
পিছন ফিরে দেখি ঠিকই আছে
হিমালয়ের চূড়াটা উত্তরে ।
মৃদু সুরের মুর্ছনা জাগে অন্তরে
গাছের পাতা নড়ে মৃদু বাতাসে ,
আমি উদাসী পথিক ,পথে চলি একা
নীলের মেলা যেন সারাটা আকাশে ।।
ঐ দুরে মাঠে কৃষাণেরা ধান কাটে
কৃষক ফসলের চারা বুনে ,
আমি গেয়ে যাই গান আনমনে
এ গান শুধু পথই শুনে ।
কি এক ইশারায় পথ চলি আমি
গেয়ে যাই গান অজানা সুরে ,
হেমন্তের দুপুরে হেটে যাই চলে যাই
দুরে বহু দুরে ।।
~:ঈদের দিনে :~ ১২৩
আজ ঈদ এসেছে ঈদ এসেছে
মোদের সবার ঘরে ,
দীর্ঘ দিন পরে রে ভাই
দীর্ঘ দিন পরে ।
শান্তির আভায় খুশির ছোঁয়ায়
আজ ভরবে সারা দেশ ,
সব খানেতেই মহা ধুমধাম
আনন্দেরই রেশ ।।
আজ মোদের সবার ঘরে
ঈদের আনন্দ,
সব খানেতেই শুচিতা ভাব
নেই কো কোন দ্বন্দ্ব ।
ধনী গরিব সবাই মিলে
ঈদ গাহে তে যাই ,
ভেদাভেদ তুলে দিয়ে
সাম্যের গান গাই ।।
আজ কে ঈদের দিনে রে ভাই
হিংসা - দ্বেষ ভুলি ,
ঈদ গাহে তে চল সবাই
করি কোলাকুলি ।
~: ফাল্গুনী রাত :~ ১২৪
আজ এসেছে ধরণীতে
ফাল্গুনী রাত ,
শীতের জড়তা কেটে গেছে
ঐ দেখি আকাশের গায় বাঁকা চাঁদ ।
মেঘহীন আকাশে তারার মেলা
ধরণীর বুকে যেন আলোর বন্যা ,
আঙিনায় মাদুর পেতে এই রাতে
বসে গল্প করে কৃষকের কন্যা ।।
শান্ত চাঁদের আলোয় একাকি পথিক
পথে হেটে চলে ,
উদাসী মন নিঃসঙ্গতায়
এই রাতে কত কথাই বলে ।
চারিদিকে যেন সুখের কোলাহল
সব খানে যেন শুধু আনন্দ সুখ ,
ফাল্গুনী রাতের মধুর বৈচিত্র্যে
গভীর আবেগে ভরে ওঠে বুক ।।
এমন দিনে এমন রাতে
স্বপ্ন দেখি কত রাশি রাশি ,
মনের নদীতে বহে স্বপ্নের ঢেউ
মন হয়ে যায় উদাসী ।
~: আমার চাওয়া :~ ১২৫
আমি চাই একটি
সুন্দর - স্বপ্নের দেশ ,
যেখানে থাকবে না কোন
হিংসা -দ্বন্দ্ব -দ্বেষ ।
যেখানে থাকবে না
অন্যায়- শোষণ -অবিচার ,
জাতিভেদ -দাঙ্গা- অত্যাচার ,
থাকবে না শুধু বাঁধন মায়া- মমতার ।।
যেখানে রবে শুধু
সুখ -শান্তি -আশা ,
বিরহ ব্যথা থাকবে না
থাকবে বুক ভরা ভালবাসা ।
যেখানে থাকবে মানুষের চোখে
সদা রঙিন সুখের স্বপ্ন ,
কুকর্ম করবে না কেউ
থাকবে শুধু সুকর্মে মগ্ন ।।
যেখানে যাবে সবার সনে
মনের কথা মুক্ত ভাবে বলা ,
যেখানে যাবে স্বাধীন ভাবে
নির্ভয়ে পথ চলা ।
আমি যাহা চাই সবে বলেছি
আর নেইকো বলার লেশ ,
আমি চাই এমনি একটি
সুন্দর স্বপ্নের দেশ ।।
~: নবীন বরণ :~ ১২৬
হে নবীন তোরা এলে আজ
নতুন রূপে মোদের মাঝে ,
নতুন সুরের মুর্ছনায় তাই
আগমনী গান কন্ঠে বাজে ।
তোরা এলে মোদের কুটিরকে
ভরিয়ে দিতে ,
স্বপ্নে দু চোখ ভরিয়ে নিতে
জাগাতে কুটির নতুন গীতে ।।
মনের মধ্যে কত আশা
আজ জাগছে বারে বার ,
শক্ত ভাবে হাল ধর
পিছিয়ে থেকো না আর ।
তোদের আগমনে ধন্য হউক
নতুন নব দিন ,
নতুন ভাবে নতুন জীবন
শুরু কর হে নবীন ।।
~: জয় ধ্বনি :~ ১২৭
তোরা জয়ধ্বনি কর্ তোরা জয়ধ্বনি কর্
তুলে দাও ভেদাভেদ আপন আর পর ।
সত্য আর ন্যায়ের তোরা জয়োগান গাও
ঝাঁপিয়ে পড় বিপদ মাঝে সংগ্রামী পথে যাও ।
অন্তরের যত হিংসা দ্বেষ কুটিলতা ভুলে
এগিয়ে যাও সামনের দিকে জ্ঞান চক্ষু খুলে ।
তোদের পদ শব্দে ধরণী কাঁপবে থর্ থর্
তোরা জয়ধ্বনি কর্ তোরা জয়ধ্বনি কর্ ।।
আপন গতিতে ছুটে চল বীরের মত যুদ্ধ কর্
করিস না ভয় বুলেট বোমা আরো বিষাক্ত শর ।
জয়ের মালা গলায় পরে নব উপহার ধর্
তোরা জয়ধ্বনি কর্ তোরা জয়ধ্বনি কর্ ।
~: মনে হয় স্বপ্ন :~ ১২৮
তোমার আমার ভালবাসা
মনে হয় স্বপ্নের মত ,
রাতের আঁধারে দেখি যেমন
ভুলে যাই কত ।
যতগুলো দিন হায়
কেটেছিল এক সাথে ,
সব গুলোই মনে হয় মিছে
এই গভীর আঁধার রাতে ।।
আজ কত দুরে তুমি
চলে গেলে ,
অতীতের স্বপ্ন স্মৃতি মুছে দিয়ে
আমাকে একাকি ফেলে ।
আজ তাই যখনি তোমায়
মনে হয় ,
মনে হয় যেন সবই স্বপ্ন
বাস্তব ওতো নয় ।।
~: বিদায় লগ্ন :~ ১২৯
যাহা বলিতে চাই
সবে ভুলে যাই ,
আজি এ বিদায় লগনে ।
হারিয়ে যায় মনের ভাষা
রয়ে গেল কত আশা
ঘনায়ে এল মেঘ বুঝি গগনে ।।
হৃদয়ের যত সুর
হয়ে যায় বেদনা বিধুর ,
আজি এ বিদায়ের ক্ষণে ।
চারিদিকে নীরবতা
জাগে কত গোপন ব্যথা ,
ভাষা হীন এ মনে ।।
~: স্মরনিকা :~ ১৩০
আমারে তুমি মনে রেখো
যেয়ো নাকো ভুলে ,
স্মৃতির খাতায় রয়েছি আমি
দেখিও খাতা খুলে ।
যত ব্যস্ততায় থাকো না তুমি
থাকো না নানান কাজে ,
আমি রয়েছি সব খানে
সকল কাজের মাঝে ।।
ফাল্গুনী রাতে পেঁচার ডাকে
আমারে পাবে খুঁজে ,
স্বপ্ন হয়ে দু'চোখে রব
দেখিও দু'চোখ বুঁজে ।
আমারে তুমি খুঁজে পাবে
কোন পূর্ণিমা রাতে ,
নতুবা হেমন্তের গোধূলি বেলায়
নয়তো শরতের স্নিগ্ধ প্রভাতে ।।
আমি রব জোনাকি হয়ে
দেখিও সন্ধ্যায় কোন ঝোঁপ ঝাড়ে ,
বর্ষণ মুখর সন্ধ্যায় স্মৃতির খাতা খুলিও
আমাকে পড়বে মনে বারে বারে ।


