Boiragir Chala, Sreepur, Gazipur.
বেশ কিছু দিন থেকে শ্রীপুরে রয়েছি জীবিকার তাগিদে । শ্রীপুর থানাটি বেশ ভালই লাগে । প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই ভাল । চারিদিকে গাছপালায় ঢাকা । এখানে দেখার মত অনেক স্থান রয়েছে । দেখতে হলে শুধু দেখার েমত চোখ আর ইচ্ছে থাকতে হবে । আমি সময় পেলেই বেড়িয়ে পড়ি ঘোরার জন্য ।ছুটির দিনে অনেকেই সাড়া দিন বাসায় শুয়ে,বসে সময় কাটায় । কেউ কেউ ঘুমিয়ে সময় পার করে । আমি সময় কাটাই সৃজনশীল কাজে নয়তো ঘুরে বেড়িয়ে ।
কয়েক বছরের ছোট্ট জীবনে ঘুমিয়েই যদি তিন ভাগের এক ভাগ সময় নষ্ট করি ,তবে জীবনে দেখলাম টা কি ? সেই ছোট বেলা থেকেই আমার ঘোরাঘুরির নেশা । একটু সময় আর সুযোগ পেলেই তাই ঘুরতে বেড়িয়ে পড়ি । আমার সাথে অনেকেই জব করে ,তাদের অনেকেই এখন পর্যন্ত শ্রীপুর শহরটা দেখে নি । অথচ দুই তিন কিলোমিটার গেলেই শ্রীপুর থানা শহর । আমি যেখানে থাকি ,সেখান থেকে কিছু দূরেই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সাফারী পার্ক । আমাদের অফিসের অনেকেই রয়েছে যারা আজ পর্যন্ত সাফারী পার্কে যায় নি । তারা শুধু অফিস করে আর ছুটির দিনে বাসায় বসে বসে সময় পার করে । মাঝে মাঝে ভাবি ,তারা জীবনে তবে দেখলো টা কি ? তাদের কাছে হয়তো এটাই জীবন । আমার কাছে এটা কোন জীবন নয় । যেখানেই থাকি ,জব করব,ঘুরব,দেখব এটাই তো জীবন । মরার আগে কিছু তো দেখে যাই । সুকুমার রায়ের কবিতার মত ষোল আনাই মিছে করে কি লাভ ।
আমাদের অফিস থেকে বৈরাগীর চালা পোস্ট অফিস কয়েক কিরোমিটার পরেই ।সুকন্ঠ প্রায়ই সে অফিসে চিঠি পোস্ট করার জন্য যায় । সে আমাকে বলেছিল,জায়গাটা নাকি বেশ ভালই । বললাম এর পর যেদিন যাবেন ,আমাকে বলবেন । আজ সে বলল ,যাবেন নাকি বৈরাগীর চারা পোস্ট অফিসে । বললাম ,চলেন ঘুরে আসি । একটা রিকশা চুক্তিতে ভাড়া নিয়ে রওনা দিলাম আমরা । বিশ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে । গিয়ে দেখি এটা একটা সাব অফিস । পোস্ট মাস্টারের বাড়ির বাড়ান্দায় পোস্ট অফিস । যার যখন দরকার এসে চিঠি পোস্ট করে যায় । বেশির ভাগই আসে বিভিন্ন কোম্পানী আর প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান থেকে । ব্যক্তিগত চিঠি পোস্ট করার জন্য কেউ আসে না বললেই চলে । এখন আর সেই চিঠির দিন নেই । কবে পেরিয়ে গেছে সেই সব দিন । একটা সময় ছিল,একটা চিঠি পাওয়ার জন্য মানুষ কত গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতো । কত ছন্দ,কত কাব্যিক ভাষা দিয়ে চিঠি লেখা হত । আজ প্রযুক্তির কল্যাণে সবই হারিয়ে গেছে ।
বৈরাগীর চালার পোস্ট মাস্টারের সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম । বৈরাগীর চালার ইতিহাস নিয়ে অনেক কথা হল । অনেক কিছু জানতে পারলাম । শ্রীপুর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম । আমার মত এত আগ্রহ নিয়ে হয়তো পোস্ট মাস্টার চাচার সাথে কেউ কখনো কথা বলে নি । বুঝতে পারলাম,আমার সাথে কথা বলে উনি অনেক খুশি । অনেক দিন পর অনেক স্মৃতি রোমন্থন করতে পারলেন । বুঝলাম চাচা স্মৃতির কথা স্মরণ করতে পেরে বেজায় খুশি । কেউ হয়তো আজকাল তার স্মৃতি কাহিনী শুনতে চায় না । স্মৃতির কথা অন্যের কাছে বললে অনেক সময় নিজেকে খুবই হালকা লাগে । মনটা ফ্রেশ হয়ে যায় । আজ নতুন জায়গায় বেড়াতে এসে খুবই ভাল লাগল । চারিদিকের প্রাকৃতিক পরিবেশটা দেখতে পারলাম। মাঝে মাঝে নতুন জায়গায় ঘুরতে গেলে নিজেক ফ্রেশ লাগে ,নতুন করে উদ্যম ও প্রেরণা পাওয়া যায় ।
আসার সময় পোস্ট মাস্টার বার বার আমাকে আবারও বেড়াতে যেতে বলল । বুঝলাম,আমার মত দর্শক-শ্রোতা পেয়ে তিনি আজ বেজায় খুশি । একজন প্রবীন লোকের কাছে জানার ও শেখার অনেক কিছুই থাকে । আমরা অনেকেই তাদের কে এড়িয়ে চলি । আমাদের উচিত,তাদের কাছ থেকে জ্ঞানের ভান্ডার সংগ্রহ েকরে নেওয়া । আজ নতুন জায়গায় নতুন পরিবেশে পোস্ট মাস্টারের সাথে কথা বলে অনেক জ্ঞান অর্জন করলাম । শ্রীপুর সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম । আমি যেন আজ হঠাৎ করে চাচার সাথে পঞ্চাশ বছর আগের দিনে ফিরে গিয়েছিলাম । নতুন জায়গায় ঘুরতে গিয়ে নতুন কিছু শিখলাম । তাই যারা অযথা সময় নষ্ট করছেন ,তাদের কে বলতে চাই , ঘোরার জন্য বেড়িয়ে পড়ুন । চার দেওয়ালের কাছে নিজেকে বন্দী করে রাখবেন না ।























0 Comments