যামিনী কিশোর রায়ের কবিতা
~: পাড়া গাঁর বুকে :~ ১৩১
ভাল লাগে না
এত কোলাহল ,
টিপ কলের
স্বাদ হীন জল ।
আধুনিক যানের
তীব্র আওয়াজ ,
বাসি পঁচা
শাক - মাছ ।।
ইচ্ছে করে ছুটে যাই
মোর পাড়া গাঁর বুকে ,
যেখানে কেটেছে কিশোর বেলা
শান্ত - মধুর সুখে ।
এত বদ্ধ হাওয়া
ঘন বসতি মাঝে ,
দিন কেটে যায়
নানান কাজে ।।
সকল বাঁধা ছিন্ন করে
ছুটে যেতে ইচ্ছে করে ,
সবুজ শ্যামল পাড়া গাঁর বুকে
ছোট্ট ওই কুঁড়ে ঘরে ।
~: দুরন্ত কবি :~ ১৩২
দুরন্ত কবি আমি ,কবিতার ছন্দে
জাগাইব ধরা ,
প্রাণের সঞ্চার ঘটাইব তাদের বুকে
যারা প্রাণহীন মরা ।
আমি মুক্ত , আমি স্বাধীন
মুক্ত মনে কবিতা লিখি ,
বৃহৎ - ক্ষুদ্র সবাইকে আমি
সমান চোখে দেখি ।।
যা সত্য সঠিক
তাই আমি বলি ,
আমি দুর্বার - দুরন্ত
স্বগৌরবে চলি ।
আমি করি কবিতার ছন্দে
অত্যাচারীর বুকে আঘাত ,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলি
করি অন্যায়ের প্রতিবাদ ।।
আমি দেই ভীরুকে সাহস
আশা হীনে আশা ,
কবিতার ভাষায় প্রতিবাদ করি
লাঞ্চিত - বন্ঞ্চিতদের দেই ভালবাসা ।
আমি জানি সবাই সমান
সকল মানুষ ভাই - ভাই ,
ঘুমন্তদের জাগাতে কবিতা লিখি
আমার দিলে ভয় - ভীতি নাই ।।
আমি দুরন্ত কবি ; কবিতায়
প্রতিবাদের ঝড় তুলি বার বার ,
আমি চাই যেন সবাই পায়
সমান সমান ন্যায্য অধিকার ।
আমি তুলে ধরি কবিতায়
কঠিন বাস্তবের প্রতিচ্ছবি ,
দুরন্ত পনায় মগ্ন আমি
আমি দুরন্ত কবি ।।
~: স্বপ্ন পুরী :~ ১৩৩
স্বপ্নের রাজ্য স্বপ্ন পুরী
মন চায় সদা ঘুরি ,
সদা যাই সেথা ছুটে
সেথা স্বপ্ন থাকে দু' চোখ জুড়ি ।
স্বপ্ন পুরী স্বপ্নের নগরী
কৃতি উত্তর বঙ্গের ,
সেখানে গেলে দুর হয় জ্বালা যন্ত্রণা
সারা অঙ্গের ।।
সাধ জাগে স্বপ্ন পুরীতে ডুবে থাকি
সদা স্বপ্নের আবেশে ,
দেখিবে একদিন শ্রেষ্ঠ স্থান হবে
স্বপ্ন পুরী ; সারাটি দেশে ।
তথ্যঃ ২০০১ সালে মিরজাগন্ঞ্জ দ্বিমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের এস.এস .সি পরীক্ষার্থীরা স্বপ্ন পুরীতে বনভোজনে যাই ২০০১ সালের ২৩ শে জানুয়ারী ।
বনভোজন থেকে ফিরে আসার পথে বাসে বসেই লিখেছিলাম কবিতাটি ।
~: বিদায়ের ডাক :~ ১৩৪
আজ বিদায়ের ডাক এসেছে
যেতেই হবে ভাই ,
বিদায় নিয়ে যেতে হবে
নাই রে সময় নাই ।
আজ মোদের যেতে হবে
দুর পারাপারে ,
বিদায়ের ঘন্টা বাজে ঐ
শুধুই বারে বারে ।।
আজ কে হৃয়া তলে বাজে
বেদনারই সুর ,
চারিদিকে নীরবতা
বেদনা বিধুর ।
কি বলে যে বিদায় নেব
নেই কো কোন ভাষা ,
রয়ে গেল কত কথা
রইল কত আশা ।।
বিদায় লগ্ন ঘনায়ে এল
তাই তো চলে যাই ,
সুখে থাকো মনে রেখো
ভুলিও না ভাই ।
তথ্যঃ ২৮ শে ফেব্রুয়ারী ,২০০১ইং ; এস. এস .সি পরীক্ষার্থী অর্থাৎ আমাদের বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে লিখেছিলাম কবিতাটি ।
~: এই তো জীবন :~ ১৩৫
সংগ্রামই জীবন ,জীবনই সংগ্রাম
জীবন মানেই আশা ;
প্রেম - অপ্রেম , জ্বালা - যন্ত্রণা
জীবন মানেই ভীরু ভালবাসা ।
জীবনের মানে এক গুচ্ছ বোধ
জীবনের মানে ভালো ,
জীবনের মানে জয় - পরাজয়
ব্যর্থতা - অন্ধকার আলো ।।
জীবন মানেই সুখের স্বপ্ন
দুঃখের নির্মম পাহাড় ,
জীবনেই মানেই - ব্যর্থতা -নিরাশা - দুর্গম পথ
তবুও চেষ্ঠা বার বার ।
জীবন মানেই দীর্ঘ নিঃশ্বাস
খুশিতে ভরা মন ,
নিত্য সংগ্রাম - সংঘর্ষ নিয়েই
এই তো শ্বাশত জীবন ।।
~: জেগে ওঠো :~ ১৩৬
জেগে ওঠো হে নবীন - তরুণ
তোল প্রলয়ের ঝড় ,
দু'হাত দিয়ে শক্ত ভাবে
অত্যাচারীর গলা চেপে ধর্ ।
নিঃচিহৃ - নিঃশেষ করে দাও ওদের
যারা লোভী স্বার্থপর ,
বজ্র কন্ঠে গম্ভীর স্বরে
প্রলয়ের ধ্বনি কর্ ।।
নিজ হাতে আজ তুলে লওরে
যত আছে আইন ,
এগিয়ে যাওরে সামনের দিকে
করো না ভয় বুলেট বোমা মাইন ।
মানিস নারে মিথ্যে আইন
করিস নারে ভয় ,
অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও
এগিয়ে যাও দুর্বার - দুর্জয় ।।
যারা ভদ্রতার মুখোস পরে
আওড়ায় ছলের বুলি ,
ওদের কে আজ জব্দ করো
ওদের মুখোশ ফেল খুলি ।
জেগে ওঠো হে নবীন - তরুণ
গাহো শান্তির বাণী ,
ধূলির ধরণী রে শান্তিতে রাখো
স্বর্গের সুষমা আনি ।।
~: চাষীর ছেলে :~১৩৭
আমি ভাই চাষীর ছেলে
করি জমি চাষ ,
মাঠে মাঠে ফসল বুনি
বারোটি মাস ।
মাঠে মাঠে কাজ করি
করি না কাজে হেলা ,
কাজের মধ্যে ব্যস্ততায়
কেটে যায় মোর বেলা ।।
খুব সকালে উঠি আমি
অলসতা মোর নাই ,
লাঙল জোয়াল কাঁধে নিয়ে
মাঠের পানে যাই ।
শান্তিতে ভাই বাস করি
ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে ,
মাঠের মধ্যে কাজ করি
গানের সুরে সুরে ।।
চাষীর ছেলে বলেই আমি
হতে চাই চাষী ,
সবার মুখে আহার যোগাই
দেশকে ভাল বাসি ।
~: শর্সে ক্ষেত :~ ১৩৮
হলুদের সমারোহ
ঐ দুরে শর্সে ক্ষেতে ,
সেথা ফুলের গন্ধে বাতাসের ছন্দে
দিবানিশি মৌমাছি রয় মেতে ।
দুপুরের রোদে শর্সে ক্ষেতে
রোদের ঝিলিক লাগে ,
ছুটে যেতে সেথা
হৃদয়ে বড় সাধ জাগে ।।
মন চায় একাকার হয়ে যাই
মৌমাছিদের সনে ,
দিবানিশি মেতে রই
শর্সে ক্ষেতে মধুর গুঞ্জনে ।
হলুদ ,হলুদ শুধু হলুদ
নাহি কো সেথা শ্বেত ,
আগুনের ফুলকি সম দেখা যায় দুরে
শুধু শর্সে ক্ষেত ।।
~: কঠোর আহবান :~ ১৩৯
এগিয়ে আসো হে নবীন - তরুণ
ঘুচাও সংঘাত দ্বন্দ্ব ,
যা সত্য সঠিক তাই কর
লোকে বলে বলুক মন্দ ।
তোরা যদি জাগিস রে ভাই
জাগবে ধরণী ,
উজান স্রোতে এগিয়ে যাবে
প্রাণ হীন তরণী ।।
দিবানিশি সংগ্রাম করো
বুকে রাখো দৃঢ় মনোবল ,
শত বাঁধা বিপত্তিতে
থাকো অবিচল ।
স্বর্গের সুষমা নিয়ে এসে
ঘর করো উজ্জ্বালা ,
জীবন যুদ্ধে জয়ী হয়ে
কন্ঠে পরো বিজয়ের মালা ।।
সুপ্তি ভেঙ্গে জেগে ওঠো
গাহো শান্তির গান ,
দৃঢ় প্রত্যয়ে এগিয়ে আসো
শুনে কঠোর আহবান ।
~: শান্তির গান :~ ১৪০
সব কিছু ভুলে আজ
এসো শপথ করি ,
কাঁধে কাঁধ, হাতে হাত রেখে
সবাই দেশটারে গড়ি ।
হিংসা - নিন্দা - শত্রুতা যত
থাক্ পিছে পড়ি ,
এক সাথে চলি সবাই
হাতে হাত ধরি ।।
অতিতের রেষারেষী
সবি যাই ভুলি ,
সকল কে আপন করে নেই
হৃদয় মন্দিরের দোর খুলি ।
শত্রু মিত্র হই একাকার
সকলি ভাই ভাই ,
এক সুরে এক সাথে
শান্তির গান গাই ।।
উদার কন্ঠে ডাকি তাই
এসো এ পথে ,
নতুন জীবন শুরু করি
নতুন শপথে ।
তথ্যঃ দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবিতাটি ।
~: বিদায় বেলা :~ ১৪১
তোমারে আর পিছু ডাকবো না
এই বিদায়ের ক্ষণে ,
অশ্রু সিক্ত নয়নে চেয়ে আছি
বড় ব্যথা ভাষাহীন এ মনে ।
ওগো ,যাবার বেলায় বলছি তোমায়
হৃদয়ের বন্ধন দৃঢ় রাখো ,
শত অপরাধ আজি ক্ষমা কর
মনে কোন দ্বন্দ্ব রেখো নাকো ।।
ছল ছল দুনয়ন ,বড় ব্যথিত হৃদয়
গোপনে গোপনে বলে কত কথা ,
বলি বলি করে হয় না বলা
চারিদিকে শুধু নীরবতা ।
আজ তুমি চলে যাবে
কত দুর পারাপারে ,
অতীত স্মৃতি কি কভু
পড়বে মনে বারে বারে ।।
এই বিদায় বেলা তোমায়
কি দেব উপহার ,
কি বলে যে বিদায় দেব
অন্তরে কোন ভাষা নেই বুঝি আর ।
~: গ্রামের ছেলে :~ ১৪২
আমি ভাই গ্রামের ছেলে
গ্রামেতেই রই ,
অতি সাধারণ মানুষ আমি
অসাধারণ নই ।
গাঁয়ের মধ্যে বাস করি
ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে ,
হিংসা নিন্দা নেইকো আমার
সরল অন্তরে ।।
চাষীর সাথে থাকি আমি
চাষীর সাথেই বাস ,
আদর্শ চাষী হব
এইতো আমার আশ ।
শিক্ষা দীক্ষায় জ্ঞানী হয়ে
গাঁয়ে ফিরে এসে ,
কৃষি কাজ করব আমি
দেশ কে ভাল বেসে ।।
পরোপকারী তোমরা যারা
চাও দেশের উন্নতি ,
কৃষি ক্ষেত্রে ফিরে এসো
কৃষিতে হউক মতি ।
~: মিরজাগঞ্জ :~ ১৪৩
মিরজাগঞ্জের হাসি খুশি ভরা সেই
দিন গুলো আজ আর নেই ;
কোথায় যেন হারিয়ে গেল
সোনালী দিন গুলো সেই ।
কে যে এখন কোথায় আছে
নেই তারা আজ কোন খবরে ,
দু'এক জন চলে গেছে পরপারে
ঘুমিয়ে আছে যে কবরে ।।
সেদিনের সেই দিন গুলো কভু
ফিরে কি আসে আর ,
স্মৃতির খাতায় রয়ে যাবে চিরদিন
শুধু পড়বে মনে বার বার ।
প্রতিদিন নিয়ম মাফি ঠিক ঠিক সময়ে
বিদ্যালয়ে মোরা যেতাম ,
কখনো কখনো বন্ধু বান্ধবীরা মিলে
বসে রশিদদার দোকানে সস্তা নাস্তা খেতাম ।।
বিদ্যালয়ের আয়া ফাতেমা দাদী
দপ্তরী দাদা জশিয়ার ,
ওদের সাথে কত মজা করিতাম
আজ তারা নেই আর ।
বিদ্যালয়টি এখন আধুনিক হয়েছে
মাঠের ধারে পুকুরটি আজো আছে ঠাঁয়,
পুকুরের পাড়ে কত সময় কেটেছে
বসে গাছের শীতলও ছায় ।।
কত স্বপ্নের রোদ ওঠে এই বিদ্যালয়ে
কত স্বপ্ন মেঘে ঢেকে যায় ,
কত জন এলো গেল ,কত জন আসবেই
বিদ্যালয়টি শুধু রয়ে যায় ।
সেই সহপাঠীরা আজ নেই তবু
আসন গুলো আজও খালি নেই ,
এসেছে নতুন শিক্ষাদানে নতুন শিক্ষক
শুধু নেই পুরনো শিক্ষক সেই ।।
কত কাল হল গত
সময় বয়ে যাবে এভাবেই ,
কোথায় যেন হারিয়ে গেল সেই দিন গুলো
আজ আর নেই ।
~: ভুলে যাও :~ ১৪৪
ভুলে যাও অতীত কথা
যত দুঃখ ময় গান ,
অযথা পাইবে ব্যথা
শুধু কাঁদিবে ব্যথিত পরাণ ।
অতীত স্মৃতি আগলে বুকে
কেঁদে কেঁদে করো না জীবনের ক্ষয় ,
ভাবিও না এ ধরা শুধুই পাষাণ
শুধুই দুঃখময় ।।
যাহা গেছে তাহা কি আর
ফিরে আসে কভু ?
কেন তবে যাতনা সহিবে তুমি
দিবস যামিনী কাঁদিবে তবু ।
অতীত কে পিছে ফেলে
জীবনকে সাজাও নতুন করে ,
এ জীবনে কত কাজ বাকি আছে
কেন অকালে তবে পড়বে ঝরে ।।
অতীত স্মৃতি আগলে বুকে
কেন অযথা কেঁদে মরো ,
দৃঢ় প্রত্যয়ে বুক বেঁধে
নতুন জীবন শুরু করো ।
~: নব বর্ষা :~ ১৪৫
এলোমেলো মেঘের দল
ভরি তুলেছে আকাশ ,
চারিদিকে গুমোট ভাব
নিস্তব্ধ বাতাস ।
বৃক্ষরাজী দাঁড়ায়ে ঠাঁয়
করে বর্ষারে আহবান ,
বিজলী ঝিলিক মারে
শুনি শুধু গুরুগুরু তান ।।
ডোবার ধারে ভেকের দল
এই ডাকে এই থামে ,
বৃষ্টির প্রতীক্ষায় প্রহর গুণে
কখন বৃষ্টি নামে ।
লোকালয়ে অস্থিরতা
নব বর্ষার নব রূপে হায় ,
পক্ষী কূল ব্যস্ত সমস্ত
নীড়ে ফিরে যায় ।।
ক্ষণিক তিমির নেমে আসে
ধরণীর বুকে ,
এখনি শুরু হবে বর্ষণ বুঝি
পরবে ফোটিক জল চাতকের মুখে ।
মেঘের তীব্র নাদ
বিদ্যুতের ঝলকানী ,
চারিদিকে শুনি শুধু
গভীর ঝন্ ঝনানী ।।
অঝোরে বৃষ্টি নামে
বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি ,
নব বর্ষার নব রূপ
মাদকতা করলো বুঝি সৃষ্টি ।
~: আবার যদি ফিরে আসি :~ ১৪৬
আবার যদি ফিরে আসি
নতুন রূপ ধরে ,
এই বাংলায় আসি যেন
ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে ।
আবার যদি ফিরে আসি
এই জলাঙ্গীর দেশে ,
কলার ভেলায় ঘুরে বেড়াব
বাণের জলে ভেসে ।।
আবার যদি ফিরে আসি
নতুন জীবন লয়ে ,
এই বাংলায় আসি যেন
বাঙালি সন্তান হয়ে ।
নতুন জনম নিয়ে যদি
আসি মানুষ বেশে ,
স্বপ্নের বাংলায় আসি যেন
এই চির সবুজের দেশে ।।
~: সময় :~ ১৪৭
সময় শুধু চলে যায়
কারো কথা না শুনে ,
যা করার আরম্ভ করো
করো না ভুল শুধু প্রহর গুণে ।
করি করি করে শুধু
গত হয় কাল ,
জমে ওঠে কাজের স্তুপ
জমে জঞ্জাল ।।
অলসতায় যে কাজ মোরা
ফেলে রেখে দেই ,
পরে দেখি কাজ আছে
সময় আর নেই ।
জীবন অমূল্য ,বিদ্যা অমূল্য
আরো অমূল্য সময় ,
সময়ের সদ্ব্যবহার করো
অযথা করো না অপচয় ।।
~: অভয় বাণী :~ ১৪৮
সত্য পথে চল রে তরুণ
করো না কারো ভয় ,
সত্য পথের সত্য পথিক
হবেই তোদের জয় ।
বাঁধা বিঘ্ন পায়ে ঠেলে
বীর দর্পে এগিয়ে চল ,
ঝাঁপিয়ে পড় বিপদ মাঝে
মুক্ত মনে কথা বল ।।
আশার প্রদীপ বুকে জ্বেলে
ছড়িয়ে দাও জ্ঞানের আলো ,
বিকশিত হও ফুলের মত
দুর করে দাও আঁধার কালো ।
শক্ত হাতে ধর রে হাল
ঝড় এলেও ছাড়িস না ,
মৃত্যু যদি আসে আসুক
তবুও হার মানিস না ।।
পরের তরে যদি কভু
দিতেই হয় ;আপন জীবন কোরবানী ,
তবু নিজে মরে পরকে জাগাও
শোনাও ওদের অভয় বাণী ।
~: ভোটের জন্য পায়ে ধরা :~ ১৪৯
ভোটের জন্য নেতা নেত্রী
ধরে ভোটারের পায় ,
ভোট শেষে পতিজ্ঞা প্রতিশ্রুতি
সবি ভুলে যায় ।
ভোটের আগে নেতা নেত্রী
কত কথাই বলে ,
ভোট শেষে ভুলে যায় সব
জনগন কে এড়িয়ে তখন চলে ।।
ভোটের জন্য ভোটারের কাছে
কত আসে যায় ,
ভোটের পরে তখন তাদের
পাত্তা পাওয়াই দায় ।
এটা দেব ,ওটা দেব
শোনায় কত রব ,
ভোট আসলে পায়ে ধরে
দেশের নেতা নেত্রী সব ।।
~: প্রলয়ের দিন :~ ১৫০
প্রলয়ের দিন বুঝি আসছে ঘনায়ে
তাই এর পূর্বাভাস পাই ,
সবখানেতেই লেগে গেছে দ্বন্দ্ব সংঘাত
দু'চোখ তুলে যেদিকে তাকাই ।
দিন দিন চারিদিকে শুধু
জমছে মিথ্যার পাহাড় ,
পলে পলে ঘনায়ে আসছে ধ্বংসের দিন
বাঁচিবার পথ নেই বুঝি আর ।।
মোরা যতই গাই শান্তির গান
প্রচার করি শান্তির বাণী ,
তবুও বাড়ছে পাপের বোঝা
হচ্ছে ধর্মের গ্লানি ।
সচেতন যতই হই না কেন
বাঁচাতে এই জগৎ ,
দিন দিন শীর্ণ হবে মানুষ
সৎ হয়ে যাবে অসৎ ।।
এমনি ভাবেই পৃথিবী ধ্বংস হবে একদিন
বেদ ,কোরাণ,পুরানে লেখা আছে তাই ,
দিন দিন এগিয়ে আসছে প্রলয়ের দিন
দু'চোখ তুলে যেদিকে তাকাই ।
~: ধৈর্য্য ধরে থাকো :~ ১৫১
ঐ আকাশে মেঘ জমেছে
করিস নারে ভয় ,
জেনে রাখিস মনে প্রাণে
এই মেঘ চিরস্থায়ী নয় ।
ঝড় উঠবে আঘাত হানবে
থেমে যাবে শেষে ,
আবার উঠবে সোনার রবি
পুব আকাশে হেসে ।।
ঝড়ের সময় চুপটি করে
থাকিস যেমন ঘরে ,
বিপদ এলে ধৈর্য্য ধরিস
থাকিস ধৈর্য্য ধরে ।
মেঘের মত সকল বিপদ
কেটে যাবে শেষে ,
আবার উঠবে সোনার রবি
পূব আকাশে হেসে ।।
তথ্যঃ ২০০১ সালে কলেজ জীবনের প্রথম লিখা কবিতা এটি । এইচ এস সি তে পড়ার সময় ,নীলফামারী সরকারী কলেজে পড়াকালীন লিখা হয়েছিল কবিতাটি ।
~: জীবনাবসান :~ ১৫২
একদিন থেমে যাবে
সব সুর সবগুলো গান ,
দু'চোখের আলো নিভে যাবে
ঘটবে জীবনাবসান ।
একদিন থেমে যাবে
যত চাওয়া ,পাওয়া ,আশা ,
একদিন ছেড়ে যেতে হবে
সাধের সুন্দর বাসা ।।
যেদিন আসবে মরণের ডাক
যেতে হবে সব কিছু ছাড়ি ,
সুন্দর পৃথিবী পড়ে রবে
পড়ে রবে কত সুন্দর নর নারী ।
ধনের গর্ব আভিজাত্যের দম্ভ
শেষে হয়ে যাবে চূর্ণ ,
বিদায়ের বেলা সবি পড়ে রবে
থাকবে দু'হাত শুধু শূন্য ।।
সেই দিন বড় ছোট,আমীর মিসকিন
সকলি হবে সমান ,
তবে কেন এত হিংসা নিন্দা
গাই গ্লানির গান ।
সব কিছু যদি ছেড়ে যেতে হয়
যেদিন ঘটবে জীবনাবসান ,
তবে এসো শান্তির পথে
গাই সাম্যের গান ।।
~: অসময় : ~ ১৫৩
একদিন তোমায় ভালবেসেছি
তুমি মোরে ভাল বাসো নি ,
কত দিন তোমায় কাছে ডেকেছি
কভু তুমি কাছে আসো নি ।
সে সময়টি ছিল আমার
বড় দুঃখ ,বড় যন্ত্রণাময় ,
আমি চেয়েছি বারে বারে তোমারে
তুমি বলেছিলে ," তা কি হয় "।
গর্ব করে বলেছিলে
আমি বামন ,তুমি নাকি চাঁদ ,
আমার চাওয়াই তোমার কাছে
সবচেয়ে বড় অপরাধ ।
তোমার কথা শুনে আমার
বুকে বেঁধেছিল শূল ,
সেদিন থেকে ভেঙ্গেছে মোর
মনের সব গুলো ভুল ।
দীর্ঘ কয়েক বছর পর হঠাৎ দেখি
তুমি আমার কাছে ছুটে এলে ,
জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে জর্জরিত হয়ে
সব গর্ব মাটিতে ফেলে ।
কিন্তু বড় দেরি করে এলে
এযে বড় অসময় ,
যখন চেয়েছি তখন আসো নি ,
এখন নতুন করে তাকি আর হয় ।
~: বর্ষণ মুখর ক্ষণে :~ ১৫৪
চারিদিকে বর্ষার ঘনঘটা
শুধু ঝর ঝর বারিধারা ঝরে ,
এমন বর্ষণ মুখর ক্ষণে বিষন্ন হৃদয়ে
গোপনে গোপনে কত কথাই মনে পড়ে ।
চারিদিকে থমথমে ভাব
ঝরে শুধু অবিরাম বৃষ্টির ধারা ,
প্রকৃতি বুঝি আজ সুপ্ত ধ্যানে মগ্ন
কোথাও নেই কোন সাড়া ।।
এমন ক্ষণে হৃদয় বড় বিষন্ন মলিন
কত স্মৃতি ভেসে ওঠে রাশি রাশি ,
মনে হয় কত কথা কত গান
কত বিস্মিত স্মৃতি যায় যে ভাসি ।
মনে হয়ে যায় উদাসী বাউল
এমন বর্ষণ মুখর ক্ষণে ,
কত কথাই এলোমেলো আজ
এই উদাসী বাউল বিষন্ন মনে ।।
~: পলাশ ডাঙ্গার মাঠে :~ ১৫৫
পলাশ ডাঙ্গার মাঠে প্রায়ই দেখা হত
একটি মেয়ের সাথে আমার চলার পথে ,
কিন্তু বড় দুঃখের বিষয় ,
কোন দিন তার পরিচয় নিতে পারি নি কোন মতে ।
কয়েক বছর ওখানে ছিলাম তাই
মনে আছে আজও কিছু চিহ্ন ,
তার সাথে প্রতিদিন দেখা হত একই সময়ে একই জায়গায় তবে গন্তব্য স্থানটা ছিল ভিন্ন ।।
কোথায় যে যেতো ওই মেয়েটি
প্রতিদিন প্রত্যেক প্রাতে ,
একাকি ; হয়তো বিশেষ কোন কাজে
সঙ্গি ছিল না তার সাথে ।
দেখা হলেই মিষ্টি হেসে পাশ কেটে যেত
কোন দিন কোন কথা বলে নাই ,
হয়তো সে মনে করেছিল আমি আগে কথা বলি
আমিও তো চেয়েছি তাই ।।
কখনো মনে হয়েছিল এবার পরিচয়টা নেব
কিন্তু দেখা হলেই হত না লওয়া পরিচয় ,
তাছাড়া বয়সটা ছিল কম ,অভিমানটা ছিল বেশি
এভাবেই কেটে যেতে লাগল সময় ।
কোন এক ছুটির দিনে বাড়িতে চলে আসি
ছুটির পরে আবার পলাশ ডাঙ্গায় যাই ,
আবার একই সময়ে একই পথে চলি
কিন্তু সেই মেয়েটির কোনই দেখা নাই ।।
ভেবেছিলাম এবার তার পরিচয়টা নেব
দুজনার মাঝে দুরত্বটাকে কমাবো ,
প্রতিদিন হবে কিছু আলাপন
গল্পের আসর জমাবো ।
কেটে গেল দীর্ঘ কয়েক বছর এভাবেই
কোন দিন দেখা হল না তার সাথে সেই পথে ,
চুপি চুপি অনেক খুঁজলাম তবুও
সাক্ষাৎ হল না কোন মতে ।।
হয়তো তার সব দায়িত্ব শেষ করে
সে চলে গেছে অন্য কোথা ,
কোনদিন কথা বলা হল না তার সাথে
হৃদয়ে আমার এটাই বড় ব্যথা ।
অবশেষে পলাশ ডাঙ্গা থেকে চলে এলাম
গাঁয়ের বাড়িতে আমার ,
মাঝে মাঝে মনে হয় সেই মেয়েটির কথা
চোখের পাতায় ভেসে ওঠে মুখচ্ছবি তার ।।
জীবনে চলার পথে কত জনেরই সাথে দেখা হয়
অনেকেরই পরিচয় জুটে ,
কিন্তু সেই মেয়েটির পরিচয় পাইনি কোন দিনও
তবুও তার ছবি চোখের পাতায় ভেসে উঠে ।
কোথায় যে হারিয়ে গেল সেই মেয়েটি
জীবনে হয়তো দেখা হবে না আর ,
কোন দিন কোন কথা হয়নি বলা
তবুও তারে মনে পড়ে আজও বার বার ।।
~: আহবান :~ ১৫৬
ভয় করো না ভয় করো না
পিছিয়ে থেকো না আর ,
প্রতিবাদ করতে শেখো
হাতে নিয়ে মুক্ত তলোয়ার ।
শোষণ - অত্যাচার সইবি কত
নর্দমায় পড়ে কাঁদবি কত ,
যতই সইবি ততই পাইবি
অনাদর - আঘাত শত শত ।।
ছিনিয়ে নিতে ন্যায্য অধিকার
পাষাণের ন্যায় হও রে শক্ত ,
প্রয়োজনে মরতে শেখো
দিতে শেখো তাজা রক্ত ।
বাস করে এই পৃথিবীতে
কতই খাবি মার ,
সংগ্রাম কর অহর্নিশি
ছিনিয়ে নিতে ন্যায্য অধিকার ।।
জ্বলবি কত ক্ষুধার জ্বালায়
খাটবি কত গাধার মত ,
মানুষ হয়ে মানুষের কাছে
করবি কেন মাথা নত ।
যা সয়েছিস আর সইবি না
মিথ্যা আঘাত অপমান ,
প্রতিবাদ করতে শেখো
শুনে এই উদ্দাত্ত আহবান ।।
~: একুশে ফেব্রুয়ারী :~ ১৫৭
শত শহীদের রক্তে রাঙানো
একুশ ভুলি কিসে ,
বাঙ্গালী জাতি কাঁদে আজও
রক্ত ঝরার বিষে ।
মুখের ভাষা কেড়ে নিতে
শোষক চক্র করলো বাড়াবাড়ি ,
বাংলা মায়ের অশ্রু ভেজা
একুশে ফেব্রুয়ারী ।।
রাষ্ট্র ভাষা বাংলা মোদের
বাংলা মাতৃ ভাষা ,
এই ভাষাতেই মিটাই মোরা
প্রাণের পিপাসা ।
সালাম,বরকত জীবন দিল
এই ভাষারই জন্য ,
মাতৃ ভাষা বাংলাকে পেয়ে
হয়েছি মোরা ধন্য ।।
বাংলা মোদের রাষ্ট্র ভাষা
অনেক ত্যাগে কেনা ,
বাংলা মোদের মায়ের ভাষা
সবার চিরচেনা ।
একুশে ফেব্রুয়ারী শত শহীদের
রক্তের প্রতিদান ,
বাংলা পেল বিশ্ব সভায়
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মান ।।
তথ্যঃ ২০০২ সালে শহীদ দিবস উপলক্ষে লিখেছিলাম কবিতাটি । নীলফামারীর কবি , নাট্যকার ও সাংবাদিক মনি খন্দকারের সাথে সাক্ষাৎ করার সময় কবিতাটি তাঁকে দেখিয়েছিলাম , তিনি বেশ প্রশংসা করেছিলেন কবিতাটির । নীলফামারীর শিল্পকলা একাডেমীর অফিসে বসে আমি আর শফিকুল সাক্ষাৎ করেছিলাম কবি মনি খন্দকারের সাথে ।
~: প্রতিবাদ :~ ১৫৮
ফসলের মাঠে কাজ কর নিশিদিন
গায়ে ঝরে কত ঘাম ,
সবারই মুখে তুলে দাও অন্ন
তবুও হয় তোদের বদনাম ।
তোমরা চাষা দেশের আশা
মুখে গাও কত গান ,
চিরদিনই শুধু পেয়েছ অনাদর অবহেলা
কি পেয়েছ প্রতিদান ?
গাধার মত খেটে মরো তবুও
দু'বেলা দু'মুঠো জোটে নাকো ভাত ,
অধিকার পাওনা ছিনিয়ে নাও
শুরু কর কঠোর প্রতিবাদ ।
তোদেরই অন্নে পালিত হয়
রাজ্যের মিসকিন থেকে রাজা ,
নিজের অন্ন বিলিয়ে দিয়ে
পরকে কর তাজা ।।
উপকারের বদলে অপকার পাও
আদরের বদলে আঘাত ,
ছিনিয়ে নাও ন্যায্য পাওনা
অন্যায়ের কর প্রতিবাদ ।
হে চাষা দেশের আশা
আর সইবি কত আঘাত ,
এখন থেকেই শুরু কর
অন্যায়ের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ ।।
~: আমি দুরন্ত :~ ১৫৯
যা খেলেছিস আর খেলিস না
মিথ্যা খেলা আর ,
জাহান্নামে পাঠিয়ে দেব
অনলে পুড়ে করব ছারখার ।
আমি দুরন্ত উঠলে জেগে
হানব আঘাত দারুণ বেগে ,
বজ্রপাত ঘটাব ওই
কালো কঠিন মেঘে ।।
আমি দুরন্ত অকুতোভয়
জেনে রাখিস আমার জয় ,
হবেই হবে জীবন যুদ্ধে
নেই তো আমার কোন ক্ষয় ।
ভন্ডামি আর করিস নারে
ভদ্রতার মুখোস পরে ,
ভন্ডামি তোর ঘুচে দেব
খুলব মুখোস ঘাড়টি ধরে ।।
জানিস না তুই চিরদিনে
দুরন্তদের হয়েছে জয় ,
দুরন্তরা হাসি মুখে মরতে জানে
তাই তো আমি অকুতোভয় ।
~: ভালবাসা :~ ১৬০
দু'টি দেহ এক মন
একটাই আশা ,
কিছু চাওয়া কিছু পাওয়া
এরই নাম ভালবাসা ।
ভালবাসা এক নদী
বয়ে চলে নিরবধি ,
থামে না গতি ধারা
কখনো ভাটা আসে যদি ।।
হারালে ভালবাসা তবুও ছাড়ে না আশা
গোপনে গোপনে মন ভালবাসা চায় ,
ভালবাসা কামনার চির শিখা
চির দিন শুধু জ্বলে যায় ।