যামিনী কিশোর রায়ের কবিতা
২৮শে ফেব্রুয়ারী ,২০০১; বিদায়ী দিন
আজ আমাদের বিদায় ,
বিদ্যালয় থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাব
উচ্চ শিক্ষার আশায় ।
আজ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে মোরা সমবেত হয়েছি
কেউ বিদায় নিতে আর কেউ বিদায় দিতে ,
সবাই বড় বিষন্ন বড় ব্যথিত
বিদায়ের করুণ গীতে ।।
মনে পড়ে আজ সুদূর অতীতের কথা
দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে এসেছিলাম নতুন মুখ হয়ে
হেসে খেলে আর শিক্ষার আলোয়
গেলরে পাঁচটি বছর বয়ে ।
আজ সময় এসেছে বিদায় নিয়ে যাওয়ার
চলে যেতে হবে আজ তাই ,
শুধু স্মৃতি হয়ে রবে স্মুতিময় দিন
রয়ে যাওয়ার কোন উপায় নাই ।।
~: বৃষ্টি ছাত্রাবাসে :~ ১৬২
বৃষ্টি ছাত্রাবাসে আসো বন্ধু
ওই না পন্থ দিয়া ,
শান্তি নগরের শান্ত পরিবেশ
জুড়াইবে তোমার হিয়া ।
হেথায় এসে দেখ তুমি
কেমন করে আছি ,
কোলাহলের চেয়ে মশা বেশি
সবচেয়ে কম মাছি ।।
জানালা খুললেই দেখতে পাবে
ওই পাকা রাস্তায় ,
কত রকমের মানুষ গুলো
এদিক ওদিক যায় ।
দেখতে যদি চাও গো তুমি
এসো আশ্বিন মাসে ,
কেমন করে আছি আমি বৃষ্টি ছাত্রাবাসে ।।
~: অতীত স্মরণে :~ ১৬৩
কি দিন গেলো
কি দিন এলো
কি দিন আবার আসে ?
যেদিন চলে যায়
সেই ভালো মনে হয়
অতীত স্মৃতি শুধুই চোখে ভাসে ।।
যখনি অতীত স্মরণে আসে
অতীত স্মৃতি চোখে ভাসে
কত কথাই মনে পড়ে যায় ।
মনে পড়লে অতীত কথা
বুকে জাগে গোপন ব্যথা
বুক ভরে অব্যক্ত বেদনায় ।।
~: মা :~ ১৬৪
বাংলাতে মা কথাটি
বড়ই মধুর ,
মা বলে ডাকলেই হৃদয় ভরে যায়
থাকি যেথায় নিকট বা দূর ।
মা বলে ডাকি থাকি যখন
দূর বা দুঃখে ,
নিমিষেই যন্ত্রণা দুর হয়ে যায়
বুক ভরে যায় দারুণ সুখে ।।
অতি বৃহৎ নয় সে শব্দ
ক্ষুদ্র শব্দ মা ,
মায়ের তুলনা মায়েই শুধু
তার তুলনা কভু হয় না ।
~: ২২ শে আষাঢ়,১৪০৯ :~ ১৬৫
দাদা ও বৌদি ,ধন্য হউক তোমাদের দম্পতি জীবন;চির স্মরণীয় হউক ২২শে আষাঢ় ,
জীবন ভরে উঠুক ফুলে ও ফলে
এই প্রার্থণা করি বার বার ।
ভুলে যাও অতীতের স্মৃতি কথা
যত দুঃখময় গান ,
নতুন ভাবে শুরু করো নতুন জীবন
আনন্দে খুশিতে ভরিয়ে তোল প্রাণ ।।
স্বর্গীয় সুখে ভরিয়ে তোল তোমাদের জীবন
মনে অতীত স্মৃতি রেখো নাকো আর ,
বার বার ফিরে আসুক ২২শে আষাঢ়
তোমাদের জীবনে ; নিয়ে নতুন উপহার ।
~: ধনন্জয় :~ ১৬৬
ধনন্জয়
করিও না ভয় ,
এগিয়ে যাও সামনের দিকে
হবেই তোমার জয় ।
ভয় ভীতি তুচ্ছ করে
কাজে দাও হাত ,
কেটে যাবে সকল আঁধার
আসিবে রাঙ্গা প্রভাত ।।
শংসয় রেখো না মনে
রেখো না কোন দূর্বলতা ,
ঠিক ঠিক করে যাও কাজ
পাবে সফলতা ।
কত কথাই বলেছি তোমায়
আজ আর নয় ,
শুরু করো কঠোর সংগ্রাম
বন্ধু ধনন্জয় ।।
~: বাল্য স্মৃতি :~ ১৬৭
ছেলে বেলায় ভর দুপুরে
নেমেছি কত পুকুরে ,
কেটেছি কত সাঁতার ,
সেই দিন কি কভু ফিরে পাব আর ।
হৈ হুল্লোর ছুটোছুটি
খেয়েছি কত লুটোপুটি ,
ছিল না মনে শংসয়
সেই দিন আর ফিরে আসিবার নয় ।।
বাল্য বন্ধু ছিল যারা
পাশে আজ নেই তারা ,
জানি না আজ আছে কে কোথা
শুধু বুকে জাগে গোপন ব্যথা ।
ছেলে বেলার দিন গুলি
কখনো যাই নি ভুলি ,
কখনো ভুলে যাব না
যদিও সেই দিন আর ফিরে পাব না ।।
~: প্রীতি উপহার :~ ১৬৮
তুমি এলে আজ মোদের মাঝে
নতুন রূপে নব বধু সাঝে ।
স্নিগ্ধ শুভ্র হাসিতে ভরিয়ে দিলে কুটির মোদের
তোমার হাসি রৌদ্র সম শারৎ রোদের ।
আগমনে তোমার নিষপ্রাণ গৃহ পেল বুঝি নতুন প্রাণ ,
তোমাকে ঘিরেই গৃহে বাজে আজ যত সুমধুর গান ।
হে গৃহ লক্ষ্মী ধন্য কর গৃহ তোমার আগমনে
ছড়িয়ে দাও সুমধুর শান্তির বাণী সবার মনে ।
স্বপ্নীল আবেশে গড়িয়ে তোল মোদের পরিবার
তোমারে বরিতে রচিলাম কবিতা লহ প্রীতি উপহার ।
~: বিয়ে বাড়ি :~ ১৬৯
ধুম ধুম ধুম
চারিদিকে বিয়ের ধুম ,
বর কনের অস্থিরতা
পাড়া পড়শীর নেই ঘুম ।
কাটেনা প্রহর দিবস - যামিনী
বর - কনের আসে না চোখে ঘুম ,
নতুন সাজে নব রূপে
বাড়িতে আসে কত কুটুম ।।
কনে ভাবে কখন আসবে বর
বর ভাবে কখন দেখব কনে ,
কখন যে আসবে শুভ ক্ষণ
কখন দেখা হবে দু'জনে ।
কেউ রাঁধে মাংস পোলাও
কেউ চাপে হাড়ি ,
হৈ হল্লা আনন্দ সরগোল মিলিয়ে
মহাধুম ধাম বিয়ে বাড়ি ।।
~: অহেতুক দম্ভ :~ ১৭০
হে মানুষ করছো কেন এত
গর্ব অহংকার ,
আসবে যেদিন মরণের ডাক
এ গর্ব সেদিন থাকবে নাতো আর ।
কালো - ধলো ,উচ্চ - নীচ
সেদিন সবাই একাকার ,
রূপের বড়াই ধনের দম্ভ
সেদিন থাকবে নাতো আর ।।
কেন এত ছিঃ ছিঃ কর
অসুন্দর ক্ষর্বাকৃতি দেখে ,
কৃত্রিম রূপ বাড়াও কেন
ছাই ভস্ম মেখে ।
মিছামিছি কর কেন
জাত ও জাতির অহংকার ,
স্রষ্টার কাছে সবাই সমান
এই দীন ও দুনিয়ার ।।
~: অফুরন্ত আশা :~ ১৭১
অফুরন্ত আশা করে
মানুষের মন ,
কত আশা পূরণ হয়
কত থাকে অপূরণ ।
হায় রে বিচিত্র জীবন
হায় রে আশা ,
বুকের ভেতর গোপনে গোপনে
শুধু বাঁধে বাসা ।।
ফুরিয়ে যায় সব কিছু
ভেঙ্গে যায় বাসা ,
সব কিছু চলে যায়
থাকে শুধু আশা ।
হৃয়া মাঝে আশা জাগে
শুধু নিশি দিন ,
আশা ছিল আশা আছে
থাকবে চিরদিন ।।
তথ্যঃ ১৭/০৬/২০০৭ ইং তারিখে দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল কবিতাটি ।
~: ৩১ শে অক্টোবর ,২০০১ :~ ১৭২
৩১শে অক্টোবর,২০০১;স্মরণীয় রাত
এই রাতে ঝড়ের প্রকোপে আমার বই খাতা,
কবিতার ডায়েরি ,গল্পের পান্ডুলিপি
সবই এলোমেলো ছিন্ন ভিন্ন ।
এই রাতে দেখেছি আমি প্রকৃতির রূপ
ভয়ঙ্কর কালো মূর্তি - সর্বনাশী রূপে ,
সে এক প্রলয়কারী মূর্তি - প্রকৃতির
আঘাত হানে খড়গ হাতে ।।
নিমিষেই কাঁপিয়ে তোলে ধরণীর বুক
বৃক্ষ - লতা খড় কুটোর মত উড়ে ,
চারিদিকে প্রলয়ের ভয়ঙ্কর মূর্তি
ঝড়ের কি উদ্মাদনা নৃত্যগীত ।
আমি দেখেছি সেই রাতে ঝড়ের দুর্বার গতি
যে গতি মানে না কোন বাঁধা বিপত্তি ,
যেন দুরন্ত এক টগবগে তরুণ
ছুটে চলে সম্মুখে যোদ্ধার মত ।।
নিমিষেই লন্ড ভন্ড করে দিল চারপাশ
চুরমার করে দিল জনপদ কত ,
পশ্চিমের বুড়ো বট গাছটা উপড়ে পড়ল
যেন এক লতার মত ।
নিমিষেই বদলে গেল প্রকৃতির রূপ
চারিদিকে শুনি করুণ আর্তনাদ ,
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়া বই খাতা কুড়িয়ে এনে
দীপের আলোয় তাপ দিয়ে শুকাই সারা রাত ।।
~: শারদ রাতে একাকি :~ ১৭৩
জেগে আছি নির্ঘুম চোখে
একাকি শারৎ রাতে ,
দুর প্রবাসে নিঃসঙ্গতায়
জেগে আছি তারাদের সাথে ।
একাকি শূন্য ঘরে
বসে আছি বাতায়ন পাশে ,
ফুটফুটে জ্যোৎস্নায়
প্রকৃতি বুঝি খুশিতে হাসে ।।
কোথা থেকে ক্ষণে ক্ষণে
ভেসে আসে বিরহী বাঁশির সুর ,
প্রিয়জন পাশে নেই আজ
রয়েছে দুর থেকে বহু দুর ।
চোখের পাতায় আজ ভেসে ওঠে
কত চেনা চেনা মুখ ,
এমন শারৎ রাতে একাকি
গভীর বেদনায় ভরে যায় বুক ।।
প্রিয় হারা বেদনায় দূর অজানায়
ডেকে ওঠে পিউকাহা পাখি ,
একরাশ ব্যথা নিয়ে নির্ঘুম চোখে
জেগে আছি শারদ রাতে একাকি ।
~: প্রেমের স্মৃতি :~ ১৭৪
মনে পড়ে আজও সেই
মন দেওয়ার ক্ষণ ,
বদ্ধ ঘরে তুমি আর আমি
মুখোমুখি শুধু দু'জন ।
ছিলাম তুমি আর আমি
দু'জনে পাশা - পাশি ,
মুখে তোমার ছিল না কথা
ছিল শুধু সলজ্জ হাসি ।।
ভালবাসি ভালবাসি
বলিলে যখন ,
ভাবিনি এত সহজে
পাবো তোমার মন ।
যখনি আমার এ হাতে
রাখলে তোমার কোমল হাত ,
মনে হল আজ বুঝি পেলাম হাতে
পূর্ণিমার চাঁদ ।।
সেই মন দেওয়ার স্মৃতি টুকু
যখনি মনে পড়ে ,
কিযে সুখ বুকে জাগে
তোমায় বুঝাব কি করে ।
~: এগিয়ে চল :~ ১৭৫
হে তরুণ
বীর দর্পে এগিয়ে চল ,
মুক্ত মনে নির্ভয়ে
মুক্তির কথা সদাই বল ।
ঘুণে ধরা এই সমাজটাকে
গড়িয়ে তোল নতুন করে ,
আত্ম হুতি দিতে শেখো
নির্দিধায় দেশের তরে ।।
গুড়িয়ে দাও সে সমাজটাকে
যে সমাজের নেইকো ভিত্তি ,
ভেঙ্গে ফেল নিয়ম কানুন ,
যে নিয়মের নেইকো নিক্তি ।
হওরে তরুণ অগ্রগামী
পিছিয়ে থেকো না আর ,
পরোয়া করো না বাঁধা বিপত্তি
সংস্কার কর যত কুসংস্কার ।।
শত বাঁধা ছিন্ন করে
জোর কদমে এগিয়ে চল ,
মুক্ত মনে নির্ভয়ে
মুক্তির কথা সদাই বল ।
~: স্মৃতি :~ ১৭৬
অতীতের স্মৃতি গুলো
কভু হয় না মলিন ,
মনের খাতায় স্মৃতির পাতায়
রয়ে যায় জীবনের স্মতিময় দিন ।
কত কিযে ঘটে যায়
জীবনের বাঁকে ,
কত কথা কত ব্যথা
স্মৃতির পাতায় জমে থাকে ।।
কত হাসি কত গান
কত চেনা সুর ,
স্মৃতির জমানো কথা
যেন ব্যথাতুর ।
কত আশা ভালবাসা
সৌহার্দ্য প্রীতি ,
হাসি কাঁন্না ,বিরহ মিলন নিয়েই তো
মোদের জীবন স্মৃতি ।।
~: জন্ম দিন :~ ১৭৭
আজিকার এই জন্ম দিনে
কাননে কাননে ফুল ফুটুক ,
ফুলের মত হাসি আর সুবাসে
তব জীবন ভরিয়ে উঠুক ।
বার বার আসুক ফিরে
তব জন্ম দিন ,
নব দিগন্তের সূর্যের মত
জীবন হউক স্বপ্ন রঙিন ।।
এই জন্ম দিনে তব প্রাণ
খুশিতে উঠুক ভরি ,
আনন্দময় হউক ভাবী জীবন
এই কামনা করি ।
তথ্যঃ বামুনিয়ার বন্ধু পারভেজের জন্ম দিন উপলক্ষে লিখা হয়েছিল কবিতাটি । নীলফামারীতে মেসে থাকা অবস্থায় লিখা হয়েছিল কবিতাটি ।
~: গানের পাখি :~ ১৭৮
শিশুদের বলি আমি
গানের পাখি ,
হেরিলে হাসি খুশি শিশুদের
জুড়ায় দু'আঁখি ।
আধো আধো কথা তাদের
মনে হয় গান ,
শুনিলে আধো কথা
জুড়ায় পরাণ ।।
শিশুরা সুন্দর পবিত্র
যেমন সুন্দর পবিত্র ফুল ,
শিশু ও ফুল সব চেয়ে সুন্দর
নিশ্চয়ই নির্ভুল ।
শিশুরা যখন পথে চলে হেলে দুলে
অপলক চোখে চেয়ে থাকি ,
তাইতো শিশুদের বলি আমি
গানের পাখি ।
তথ্যঃ বৃষ্টি ছাত্রাবাসে থাকাকালীন নীলফামারীর শান্তি নগরের ছোট্ট মেয়ে সুস্মি কে উদ্দেশ্যে করে লিখা হয়েছিল কবিতাটি ।
~: অগ্রহায়ণ প্রান্তরে :~ ১৭৯
মাঠে মাঠে ভরপুর
সোনালী রঙের ধান ,
দেখি কৃষকের মুখে হাসি
শুনি কন্ঠ ভরা গান ।
আনন্দের পশরা নিয়ে অগ্রহায়ণ এলো
আনন্দময়ীর বেশে ,
শস্যের সমাহারে বিপুল উল্লাসে
আমাদের এই রূপসী দেশে ।।
মাঠের মানুষের ব্যস্ততা
কৃষাণীর মিষ্টি হাসি ,
অগ্রহায়ণ প্রান্তরে ধূসরের খেলা
বড় ভালবাসি ।
প্রকৃতি এমন খেলা খেলে
কোন সে দুরে ,
সে এই রূপসী দেশে অগ্রহায়ণ প্রান্তরে
রৌদ্রজ্জল পড়ন্ত দুপুরে ।।
~: পুজার আগমনে :~ ১৮০
পড়েছে আনন্দের সাড়া
পুজা এলো তাই ,
চারিদিকে খুশির জোয়ার
যেদিকে তাকাই ।
ধূপ ধুনার গন্ধে
ভরিছে বাতাস ,
পুজার আগমনে খেলিছে খেলা
শরতের নির্মল নীলাকাশ ।।
সর্বত্র শান্তি শুচিতা ভাব
পুজার আগমনে ,
পুজা এনেছে শ্রদ্ধা ভক্তি
মানুষের সনে ।
পুজার আগমনে সবার প্রাণ
খুশিতে উঠুক ভরি ,
মানুষে মানুষে হউক সৌহার্দ্য ভাব
এই কামনা করি ।।
~: যাদুকর :~ ১৮১
স্বপ্নের দেশে এলোরে ভাই অচিন যাদুকর
যাদুকরটা যেমন লোভী তেমন স্বার্থপর ।
মাথায় তার লম্বা টুপি মুখ ভর্তি দাড়ি
রাজ কণ্যাকে যাদু বলে হাতে নিয়ে দেন সাগর নদী পাড়ি ।
চলেন তিনি সাগর নদী ডিঙ্গিয়ে পাহাড়
রাজ্যের বুকে নেমে এল আর্ত হাহাকার ।
সব শুনে এক ঘোড়ায় চড়ে ছুটলো রাজ কুমার
রাজ কণ্যাকে আনবে ফিরে এই পণ তার ।
বহুপথ পাড়ি দিয়ে রাজকন্যার কাছে পৌঁছিল কুমার
এবার বুঝি মরবে যাদুকর নিস্তার নেই আর ।
অবশেষে যাদুকরের বুকে কুমার বসিয়ে দিল কোপ
যাদুকর ঢলে পড়লো মৃত্যুর কোলে ঘুচে গেল লোভ ।
তথ্যঃ এই কবিতার মাধ্যমে জনকন্ঠ পত্রিকায় ঝিলিমিলি বিভাগে প্রথম নাম প্রকাশিত হয় । একটা ছবির উপর নির্ভর করে লিখতে হয়েছিল কবিতাটি ।
~: বিদ্যালয়ের স্মৃতি :~ ১৮২
এইতো সেই বিদ্যালয়
দাঁড়িয়ে আছে ঠাঁয় ,
ছাত্র জীবনের সেই স্মৃতি গুলো
সে কি ভুলা যায় ।
এইতো সেই বিদ্যালয়
আজও ডাকে হাত বাড়িয়ে ,
কালের সাক্ষী স্বরূপ গোটা কয়েক গাছ
আজও আছে দাঁড়িয়ে ।।
জমিয়েছি কত আড্ডা
ঐ পুকুর পাড়ে গাছ তলায় ,
হাসি খুশি কত কথা কত গান
সে কি ভুলা যায় ।
ঐ তো সেই খেলার মাঠ
সেথায় খেলেছি কত খেলা ,
খেলতে খেলতে বন্ধুদের সাথে
কেটে গেছে কত বেলা।।
আজও ভাসে চোখের পাতায়
কত চেনা চেনা মুখ ,
মনে পড়লে সেই সব দিনের কথা
গভীর বেদনায় ভরে যায় বুক ।
~: দেওনাই নদীর বাঁকে :~ ১৮৩
মনে পড়ে আজও সেই শিমুল তলীর মাঠ
যেখানে খেলেছি হা ডু ডু , ডাংগুলি ,
যেখানে কেটেছে মোর কত সোনালী সময়
সময়ের ব্যবধানে সেই দিন গুলি যাইনি ভুলি ।
হারিয়ে যাওয়া দিন গুলি
আজও বারে বারে পিছু ডাকে ,
আজও মন ফিরে যায় হৃদয়ের টানে
আঁকা বাঁকা সেই দেওনাই নদীর বাঁকে ।।
মনে পড়ে সেই কবেকার কথা
রাশি রাশি বালুচর ,
মিছে মিছি রান্না বান্না ,চড়ুই ভাতি
খেলার ছলে বাঁধা ছোট্ট মাটির ঘর ।
সেদিনের সেই খেলার সাথীরা
আজ যে কে কোন খানে ,
আজ তারা ভুলে যেতে পারে মোরে
ভুলি নি তাদের আমি সময়ের ব্যবধানে ।।
সেদিনের সেই সোনালী সময়
আজও হাত ছানিতে ডাকে ,
ইচ্ছে করে ছুটে যাই বার বার
আঁকা বাঁকা সেই দেওনাই নদীর বাঁকে ।
~: হেমন্তের আগমন :~ ১৮৪
শরতের শেষ
হেমন্তের শুরু ,
তাই তো দেখি ফুলে ফুলে
ছেয়ে গেছে ছাতিম তরু ।
চারিদিকে চেয়ে দেখি
শুরু হয়েছে ধান পাকা ,
ধান কাটা শুরু হবে
মাঠগুলো হবে ফাঁকা ।।
দূরে ভেসে যায় সাদা ছেঁড়া মেঘ
আকাশ সুনির্মল ,
নদীর বুকে জেগেছে চর
কমে গেছে পুকুর নদীর জল ।
হেমন্তের আগমনে নতুন ধানে
হাসি গানে ভরিছে দেশ ,
চারিদিকে সুখের ছোঁয়া
লাগছে কিন্তু বেশ ।।
~: জনতার জয় :~ ১৮৫
হে জনতা হও একতা
করো না অশুভ শক্তিরে ভয় ,
সয়েছিস কত লাঞ্চনা আঘাত
আর নয় আর নয় ।
যখন যায় যে ক্ষমতায় ,সেই হয় তখন
বাঘ হীন বনে শিয়াল রাজা ,
রাজ্যের জনতা মরুক আর বাঁচুক
রাজকোষের সম্পদে হয় নিজে তরতাজা ।।
জনতার জোরে পায় ক্ষমতা
বাড়ে মনোবল পায় যত শক্তি ,
জনতাই করে নিঃস্বকে ক্ষমতাসীন
শেষে জনতাই করে সম্মান ভক্তি ।
এই কি রীতি ,নিয়ম নীতি
এ তো বড় অনাটার ,
নিঃস্ব হয় শক্তিশালী
আবার তারাই করে জনতার বিচার ।।
হে জনতা হও একতা হবে তোমার জয়
এবার এসেছে সময় ,
তুলে দাও জয়ের মালা যোগ্য নেতার গলে
অকৃতজ্ঞ কৃতঘ্নরে নয় ।
~: ঘোমটা পরা বউ :~ ১৮৬
গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে
চলছে গরুর গাড়ী ,
ছৈয়ের ভেতর ঘোমটা পরা বউ
যাচ্ছে বাপের বাড়ী ।
গরুর গলায় ঘুঙগুর
ঠুনঠুন বাজে ,
পথিকেরা চায় গাড়ী পানে
ঘোমটা আরও একটু তুলে দেয় বধু লাজে ।।
গাড়ীর সম্মুখে বসে গাড়োয়ান
হাঁকায় গরুর গাড়ী ,
বহু দিন পর শ্বশুরালয় থেকে
বধু যাচ্ছে বাপের বাড়ী ।
গাড়ীর মধ্যে বসে বধু
ভাবে কত কথা ,
বাল্যের সখিদের মনে পড়ে যায়
জাগে কত গোপন ব্যথা ।।
~: পৌষের শীতে :~ ১৮৭
বাংলার এই
পৌষ মাসে ,
হিম বুড়ি এদেশে আসে ।
কুয়াশার ঘন জালে
সূর্যটা লুকিয়ে থাকে ,
রাত হয় ভোর তবু উঠতে চায় না মন
বেড়ায় পড়ে দাঁড় কাক ডাকে ।।
পৌষের শীতে
উহুঃ কি জার ,
লেপ কাঁথা কম্বল যা আছে সম্বল
নেই জড়ায়ে তবুও কাঁপে হাড় ।
বুড়োবুড়ি কাঁপে থর্ থর্
জ্বালায় আগুনের কুন্ড ,
দামাল ছেলে ঘুরে পাড়াময়
যেন শীত হীন পাষুন্ড ।।
পৌষের শীতে বড় মিঠে
গরম পিঠে,গুড় মুড়ি ,খেঁজুর রস ,
রসের লোভে দামাল ছেলে
লাফিয়ে উঠে শীতকেও করে বস্ ।
থুবথুবে প্রকৃতি
পৌষের শীতে ,
পৌষের শীত আসে পৃথিবীতে
এক নব জীবন স্পন্দন দিতে ।।
~: শীতের আগমনে :~ ১৮৮
শীত এসেছে শীত এসেছে
গরম কাপড় চাই ,
কিনতে হবে চাদর - কম্বল
হাতে টাকা পয়সা নাই ।
গরীব - দুঃখী চিন্তা করে
ভাবেন কত কথা ,
ছেলে মেয়ের কাপড় নাই
বুকে বড় ব্যথা ।।
শীত এসেছে শীত এসেছে
ছড়িয়ে কুয়াশা ,
শীতের সকালে পিঠে খাব
মনেতে জাগে কত আশা ।
ঝির ঝির ,ঝির ঝির
বইছে শীতের শীতল হাওয়া ,
প্রচন্ড শীতে, শীতের প্রকোপে
কারো হয় নাকো নাওয়া ।।
শীত এসেছে প্রকৃতির বুকে
তাই নতুন বাড়তা জাগে ,
শীতের আগমনে সবার প্রাণ
ভরিছে গভীর অনুরাগে ।
~: অর্থাভাব :~ ১৮৯
তোদের মত মোদেরও তো
মেধা আছে ভাই ,
তোদের অর্থ - মেধা দুটোই আছে
মোদের মেধা আছে ,অর্থ তো আর নাই ।
পুষ্প যেমন ঝরে পড়ে
প্রকৃতির স্বভাবে ,
শত মেধা নষ্ট হয়
তেমনি অর্থ অভাবে ।।
কচি চারা বৃক্ষ হয়
পেয়ে একটু আহার্য্য ,
আমরাও তেমন হতে পারি
একটু খানি পেলে সাহায্য ।
তোদের মত মোদেরও আছে
কত রঙ বেরঙের সাধ ,
মোদের সকল সাধ পূর্ণ হবে
পেলে একটু খানি সাহায্যেরই হাত ।।
মোরা শত মেধায় গড়তে পারি
সুন্দর ধরণী ,
উজান স্রোতে বাইতে পারি
দাঁড় হীন তরণী ।
ঘুচিয়ে দিতে পারি বিশ্বের
যত দ্বন্দ্ব ভাব ,
যদি একটু খানি কাটিয়ে উঠি
মোদের অর্থাভাব ।।
চাও যদি কেউ মোদের ভাল
বাড়িয়ে দাও হাত ,
শত মেধার বিকাশ ঘটাই
পূর্ণ করি প্রাণের যত সাধ ।
~: শিউলী ঝরানো রাত :~ ১৯০
শিউলী ঝরানো রাত
এলো বুঝি ফিরে ,
তাই কাঁশ ফুল দেখি ঐ
দেওনাই নদীর তীরে ।
সারা রাত ধরে শিশির ঝরে পড়ে
কোমল দূর্বাঘাসে ,
প্রভাতের আলোয় ঝলমলিয়ে ওঠে
মনে হয় সূর্যটা বুঝি হাসে ।।
চারিদিকে দেখি ঐ সবুজে ঘেরা মাঠ
কচি কচি ধান ,
পরিস্কার পরিচ্ছন্ন প্রকৃতি হাসে
শুনি কৃষাণের কন্ঠে গান ।
ঝাঁক ঝাঁক বলাকা
উড়ে ঐ নীলাকাশে ,
শাপলা পদ্ম কাঁপে
মৃদু মন্দ বাতাসে ।।
সাঁই সাঁই উড়ে চলে
দল বেঁধে বুঁনো হাঁস ,
শিউলী ঝরানো রাত এলো বুঝি
তাই পাই এর পূর্বাভাস ।
তাং ১৩/০৬/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।

