যামিনী কিশোর রায়ের কবিতা
~: নিষপ্রয়োজন: ~ ১৯১
যখন চেয়েছিলাম
তখন আসো নি ,
ভালবাসা দিয়েছিলাম
কভু ভাল বাসো নি ।
তোমাকে যখন আমার
ছিল বড় প্রয়োজন ,
ভালবাসা দাও নি
দাও নি মোরে মন ।।
কত স্বপ্ন ছিল বুকে
ছিল কত আশা ,
পৃথিবীর বুকে তুমি আর আমি
বাঁধব ছোট্ট সুখের বাসা ।
আমার আহবানে সে সময় যদি
দিতে তুমি সাড়া ,
বড় ভাল হত আমার
খুশিতে হতাম আত্মহারা ।।
আজ সেদিন নেই আর
নেই যে সময় ,
বড় দেরি করে এলে
এখন তা কি আর হয় ।
এখন পারব না ভাল বাসতে তোমায়
পারব না দিতে এই মন ,
তোমার আজ নেই কোন দরকার
তুমি শুধুই নিষপ্রয়োজন ।।
তাং ২৭/০৬/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: মায়ের ভালবাসা :~ ১৯২
মায়ের স্নেহ - ভালবাসা
মায়ের মুখের হাসি ,
মায়ের হাতের রান্না - বান্না
বড় ভালবাসি ।
জীবনের যত জ্বালা
শত দুঃখ শত ব্যথা ,
নিমিষেই হয়ে যায় দূর
শুনিলে মায়ের সুমধুর কথা।।
হয়তো দেশে নয় তো দুরে
যেখানেই থাকি ,
শান্তি পাই মনে মনে
যখনই মা বলে ডাকি ।
মায়ের স্নেহ -আশীর্বাদ
মায়ের ভালবাসা ,
পেয়ে হই ধন্য
আর করি না কোন আশা ।।
তাং ২৭/০৬/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: সঙ্গ :~ ১৯৩
বাস্তব বড় নির্মম বড় নিষ্ঠুর
জীবন বড় বৈচিত্র্যময় ,
এই সংসার মাঝে স্রষ্টা ছাড়া
কেউ কারো নয় ।
যতক্ষণ কিছু দিতে পারি
যতক্ষণ করি কিছু দান ,
তখন সবাই ভালবাসে
ততক্ষণ করে সম্মান ।।
ভাগ্য দোষে যদি কোন দিন
সংসারে অভাব ঘনিয়ে আসে ,
এড়িয়ে তখন চলে সবাই
কেউ ভাল না বাসে ।
দুঃখের কথা শুনলে কেউ
করে নানান ভঙ্গি ,
সুখের ভাগ সবাই নেয়
দুঃখের সময় হয় না কেউ সঙ্গি ।।
বিপদ মাঝে পড়লে কেউ
অনেকে মুখ টিপে হাসে ,
বিপদে কেউ না দিলেও সঙ্গ
শুধু স্রষ্টা থাকেন পাশে ।।
তাং ২৭/০৬/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: বর্ষার বারি ধারা :~ ১৯৪
বর্ষার বারি ধারা
সারাদিন ঝরছে ,
আজ তাই বারে বারে
তারে মনে পড়ছে ।
বসে আছি আনমনে
একাকি ঘরে ,
বাল্যের স্মৃতি গুলো
যায় মনে পড়ে ।।
ঝর ঝর ঝরে বারিধারা
বুক জুড়ে শুধু হাহাকার ,
পাশে আজ নেই সে
আসবে না কভু সে তো আর ।
তবু তারে মনে পড়ে
আজি এ বরষায় ,
বসে আছি উদাসী মনে
তবু তার আশায় ।।
তাং ২৮/০৬/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: শ্রাবণ দিনে :~ ১৯৫
শ্রাবণের বারি ধারা
অবিরাম ঝরছে ,
অতীতের স্মৃতি গুলো
আজ মনে পড়ছে ।
চারিদিক নিস্তব্ধ
নেই কোলাহল ,
ঝর ঝর ঝরছে
শুধু বিরাম হীন জল ।।
শ্রাবণের বারি ধারা
ঝরঝর ঝরে ,
কত কিযে আজ তাই
যায় মনে পড়ে ।
এমন শ্রাবণ দিনে
কত কথা মনে ভাসে ,
গোপনে গোপনে কাঁদে যে হৃদয়
অতীত স্মৃতি শুধু স্মরণে আসে ।।
তাং ২৩/০৯/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: কঠোর প্রতিবাদ :~ ১৯৬
তুই কি এতই শক্তি হীন
নেই কিরে তোর বল ,
আছেই যদি শক্তি সাহস
তবে বুক ফুলিয়ে শির উচিয়ে চল ।
প্রতিবাদ করো অন্যায়ের রে
সত্যকে নে মেনে ,
সত্য চিরদিনই চির সুন্দর
এই কথাটা রাখ্ জেনে ।।
সইবি কত অন্যায় রে
সইবি কত আঘাত ,
রক্ত বিন্দু শরীরে থাকতে
করো অন্যায়ের কঠোর প্রতিবাদ ।
বাঁচার মত বাঁচতে হলে
প্রতিবাদ করতে হয় ,
যারা প্রতিবাদ করতে জানে
জীবন যুদ্ধে তাদেরই হয় জয় ।।
মরার মত বেঁচে থেকে
সইবি কত আঘাত ,
বাঁচার মত বাঁচতে চাইলে
শুরু করো কঠোর প্রতিবাদ ।
তাং ২৩/০৯/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: বীর সৈনিক :~ ১৯৭
হে বীর সৈনিক
দুর্বার - দুর্জয় ,
এগিয়ে চল বীর দর্পে
নেই তোর কোন ক্ষয় ।
এ জীবন যুদ্ধে
আসুক বাঁধা বিপত্তি ,
বাহু বলে মেধা বলে
করো তার নিষ্পত্তি ।।
তবু তুই হুঁশিয়ার
সাবধান সাবধান ,
বীর দর্পে এগিয়ে চল
যায় যায় যাক প্রাণ ।
নেই তোর কোন ভয়
হবে না কোন ক্ষয় ,
বীরেরা মরতে জানে
দুর্বার - দুর্জয় ।।
এগিয়ে চল সম্মুখে
অবিরত দৈনিক ,
বিজয় নিশান হাতে নিয়ে
হে বীর সৈনিক ।
তাং ২৩/০৯/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: তোমাকে :~ ১৯৮
এমন চৈত্রের চাঁদিমায়
দক্ষিণা মৃদু হাওয়ায় ,
তুমিই বল একাকী কি ভাল লাগে
তোমাকে ছাড়া হায় !
বৈশাখী ঝড়ে অন্তর কাঁপে
দুরু দুরু করে বুক ,
এমন ক্ষণে তুমি ছাড়া
কে দিবে মোরে শান্ত্বনা সুখ ।।
বর্ষার বর্ষণ মুখর ক্ষণে
আকুল করা বৃষ্টি ভেজা দিনে ,
কে দিবে সঙ্গ মোরে
বল তুমি হীনে ।
শরতের নীলাকাশে সবুজের সমারোহে
মন ভরে নির্মল বাতাসে ,
এমন আকুলতায় বড় ব্যাকুলতায়
তুমি ছাড়া কে এসে দাঁড়াবে পাশে ।।
বড় শান্ত বড় মনোরম
হেমন্তের ঐশ্বর্যময় গোধূলি বেলা ,
হেমন্তের গোধূলি বেলায় লাগে না ভাল
তুমি ছাড়া শুধু একেলা ।
শীতের কুয়াশায় হিমেল হাওয়ায়
ভাল লাগে মিষ্টি রোদ্দুরে ,
সব ভাল লাগা মিছে মনে হয়
যদি তুমি থাকো দুরে ।।
আমি চাই শুধু তোমাকে
জ্যোৎস্না স্নাত বসন্ত সন্ধ্যায় ,
তুমি ছাড়া কিছু লাগে না ভাল
শুধু একাকী হায় ।
তাং ২৬/০৯/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: স্থান :~ ১৯৯
তুমি রয়েছো দূর নীলিমায়
শরতের নীলাকাশে ,
তুমি রয়েছো সবুজের সমারোহে
ভোরের নির্মল বাতাসে ।
তুমি রয়েছো ফুলের মাঝে
ভ্রমরের গুঞ্জনে ,
তুমি রয়েছো ফুলের হাসিতে
ফুটন্ত ফুলের বনে ।।
গ্রাম্য মেয়ের সহজ সরল হাসিতে
কৃষাণের মুক্ত গানে ,
তুমি রয়েছো রঙ ধনুর সাতটি রঙে
পাখির মিষ্টি মধুর তানে ।
হেমন্তের গোধূলি বেলায়
শীতের হিমেল হাওয়ায় ,
তুমি রয়েছো শ্রাবণের বারিধারায়
জ্যোৎস্না স্নাত বসন্ত সন্ধ্যায় ।।
শুকতারা রয়েছে যেমন
ওই গগনে ,
তেমনি রয়েছো তুমি
আমার এই মনে ।
তাং ২৮/০৯/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: বসন্ত সন্ধ্যায় :~ ২০০
সেদিন দেখেছিনু
দাঁড়িয়ে তারে ,
জ্যোৎস্না স্নাত বসন্ত সন্ধ্যায়
পুকুরের পাড়ে ।
দাঁড়িয়ে ছিল সে
হাসি মাখা বদনে ,
চুল গুলো খোলা ছিল
প্রাণবন্ত উচ্ছাস মনে ।।
তারে কাছে পেতে ইচ্ছে করে
আজি এ বসন্ত সন্ধ্যায় ,
যদি এমন লগ্নে তারে কাছে পেতাম
কেমন হতো হায় ।
ফুটেছে আজ বনে বনে
কৃষ্ণচূড়া শিমুল ,
যদি কাছে থাকতো সে এমন ক্ষণে
মধুময় হতো জীবন নিশ্চয়ই নির্ভুল ।।
প্রাণের অভিসারে যদি পেতাম তারে
কেমন হতো হায় !
তারে মনে পড়ে বারে বারে
আজি এ বসন্ত সন্ধ্যায় ।
তাং ২৮/০৯/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: সন্দেহ :~ ২০১
মানুষ হয়ে যারা
মানুষেরে করে ঘৃণা ,
মনেতে সন্দেহ জাগে
তারা মানুষ কিনা ?
পরের দুঃখ দেখে যারা
মুখ টিপে হাসে ,
হীন - অমানুষ - স্বার্থপর তারা
তাদের কেউ ভাল না বাসে ।।
অন্যের ভাল চায় কিনা তারা
মনে জাগে সন্দেহ ,
বড় কিছু হলেও তাদের
প্রকৃত ভাল বাসে না কেহ ।
নিজ স্বার্থ নিয়ে যারা
আত্মমগ্ন রয় ,
তারা যে মানুষ কিনা
মনে সন্দেহ হয় ।।
পরের বিপদ দেখলে যারা
বিপদ মাঝে ছুটে আসে ,
নিঃসন্দেহে মানুষ তাদের
বড় ভাল বাসে ।
তাং ৩০/০৯/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: জুঁই নামের সেই মেয়েটি :~ ২০২
জুঁই নামের সেই মেয়েটি
আমায় দেখলে হাসে ,
সে নাকী মনে প্রাণে
আমায় ভাল বাসে ।
তার নাকী মনের মধ্যে
একটি শুধু আশা ,
আমায় নিয়ে বাঁধতে চায়
ছোট্ট সুখের বাসা ।।
জুঁই নামের সেই মেয়েটি
মিষ্টি মধুর হাসে ,
সময় সুযোগ পেলেই সে
মোদের বাড়ি আসে ।
ভালবাসার ধ্যানে নাকী
আছে সে মগ্ন ,
আমায় নিয়ে দেখে নাকী
মজার মজার স্বপ্ন ।।
যেমন সাহস সেই মেয়েটির
তেমন তার হাসি ,
সেদিন পথের বাঁকে বলল আমায়
তোমায় ভালবাসি ।
আমায় বলে তুমি যদি
একবার কথা দাও ,
ফাঁকি দিয়ে সবার চোখে
হব মোরা উধাও ।।
তাং ০১/১০/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: ফেলের যন্ত্রণা :~ ২০৩
পরীক্ষায় পাশ করলে
সবাই ভালবাসে ,
ফেল করলে পরে
মুখ টিপে হাসে ।
না বুঝে না শুনে কিছু
কত কথাই বলে ,
দুধের মাছি বন্ধু বান্ধবীরা
এড়িয়ে তখন চলে ।।
খেলায় যদি থাকে হার - জিত
পরীক্ষায় থাকে ফেল - পাশ ,
সব কথা বুঝি তবু
করি কেন এত উপহাস ?
আমি তাই বলে যাই
অযথা দিয়ো না আঘাত - কুমন্ত্রণা ,
পরীক্ষায় ফেল না করলে কেউ
বুঝবে না কভু ফেলের যন্ত্রণা ।।
তাং ১৯/১০/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: খোকন সোনা :~ ২০৪
খোকন সোনা খোকন সোনা
ফোকলা মুখে হাসে ,
ফোকলা মুখের মধুর হাসি
সবাই ভালবাসে ।
এ কোল থেকে ও কোলে যায়
এ হাত থেকে ও হাত ,
বুকের মধ্যে ধরে রাখি
পায় না যেন আঘাত ।।
কাঁন্না শুনলে খোকন সোনার
সবাই ছুটে আসি ,
খোকন সোনার মধুর হাসি
বড় ভালবাসি ।
তাং ১৯/১০/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: ভুল :~ ২০৫
কি করলাম আর কি পেলাম
কি দিলাম মাসুল ,
জীবন সায়াহ্নে এসে মনে হয়
ভুল সবি ভুল ।
বন্ধু -বান্ধবী, স্ত্রী - পুত্র
সাধের সুন্দর ঘর ,
কেহই নহে আপনার যেন
সব গুলোই পর ।।
শত চেষ্টায় শত কষ্টে
বাঁধলাম সাধের বাসা ,
জীবন সায়াহ্নে ছাড়তে হবে সব
ছাড়তে হবে আশা ।
সারা জীবন ধরে
দাঁড়িয়ে জীবন নদীর কূলে ,
শুধুই কুড়ালাম নুড়ি - বালি
কোন ভুলে তারে ভুলে ।।
আসল ছেড়ে নকল ধরেছি
বুঝি নি কভু কোনটা মূল ,
জীবন সায়াহ্নে এসে মনে হয়
ভুল সবি ভুল ।
তাং ১৯/১০/২০০৩ ইং
শান্তি নগর , নীলফামারী ।
~: নিঃসঙ্গতা :~ ২০৬
আজি এ নিঃসঙ্গ
বেদনা বিধুর ক্ষণে ,
একাকী বসে আছি
একাকী উদাস মনে ।
অতিত স্মৃতি মনে পড়ে
আজ শুধু বার বার ,
জানি সে সব সোনালী দিন
কভু আসবে না ফিরে আর ।।
উঁকি মারে অতিত স্মৃতি
মনের জানালায় ,
হাসি খুশি কত কথা কত গান
আজ মনে পড়ে যায় ।
মনে পড়ে এ নিঃসঙ্গ ক্ষণে
কত স্মৃতি কত কথা ,
মনে পড়লে অতিত স্মৃতি
বুকে জাগে গোপন ব্যথা ।।
জীবনের খেলা ঘরে
কত কিযে ঘটে যায়,
বসে ভাবি আজ শুধু
একাকী নিঃসঙ্গতায় ।
তাং ২৪/১০/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: নারী :~ ২০৭
হও অগ্রগামী
হে নারী,
কেন এত দুর্বলা তুমি
শক্ত হাতে ধর তরবারি ।
তুমি কি এতই দুর্বলা
নেই কি তব বাহুতে বল ,
থাকবে কেন এত পিছিয়ে
নরের পাশাপাশি চল্ ।।
তুমিও মানুষ স্রষ্টার সৃষ্টি
রক্তে মাংসে গড়া ,
সাজিয়েছ তাই আপন হস্তে
পুষ্পের আলিপনায় ধরা ।
নিশ্চুপ থেকো না হে নারী
বুঝিয়ে নাও ন্যায্য অধিকার ,
হও অগ্রগামী সর্বক্ষেত্রে
পিছিয়ে থেকো না আর ।।
তাং ২৬/১০/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
তথ্যঃ ১৮/০৩/২০০৭ ইং তারিখে দৈনিক যুগের আলো পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে কবিতাটি ।
~: দুঃখের মাঝে বসবাস :~ ২০৮
যার বসত ভাই
দুঃখের মাঝে ,
তার কি আবার
দুঃখ আছে ?
দুঃখের মাঝে বাস করি ভাই
সুখের করি আশ ,
দুঃখের মাঝেই সুখে আছি
দুঃখের মাঝে বসবাস ।।
চাতক যেমন জলের জন্য
করে উর্ধ্ব পানে মুখ ,
দুঃখের মধ্যে বাস করি তাই
অণ্বেষণ করি সুখ ।
আকাশচারী হলেও চিল
মাটির দিকে ঝুঁকে ,
দুঃখের মাঝে বাস করেও
আছি বড় সুখে ।।
তাং ২৮/১০/২০০৩ ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~: জেনে রাখো :~ ২০৯
কথা দিয়ে যারা
কথা রাখে না ,
বিধাতাও তাদের
ভালবাসে না ।
পরের দুঃখ দেখে যারা
মুখ টিপে হাসে ,
কখনো কেহ তাদের
ভাল না বাসে ।।
ধনের মানুষ আর মনের মানুষ
কখনো এক নয় ,
একটি কথা জেনে রাখো
অহংকারীর পতন হয় ।
আশা করা ভাল তবে
বেশি আশা ভাল নয় ,
বেশি ভাল বাসলে পরে
বেশি দুঃখ পেতে হয় ।।
ভেবে চিন্তে কাজ কর
করিয়া ভেবে নাকো ,
মনের মধ্যে সজীবতা
সর্বদা ধরে রাখো ।
তাং ২৯/১০/২০০৩ ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: স্মৃতির জানালা :~ ২১০
আজি এ মেঘ মেদুর
বর্ষণ মুখর ক্ষণে ,
বসে আছি বাতায়ন পাশে
নিস্তব্ধ ভাষাহীন মনে ।
রিম ঝিম ঝর ঝর
শুধু বারিধারা ঝরে ,
স্মৃতির জানালা গিয়েছে খুলে
তাই কত কিযে যায় মনে পড়ে ।।
আজ শুধু ঝরে বারিধারা
নেই কোন রোদ্দুর ,
মনে পড়ে অতিতের স্মৃতি কথা
যেখানে পড়ে আছে কত দুর্গম পথ বন্ধুর ।
জীবনের বাঁকে বাঁকে আছে পড়ে
কত সোনালী দিন ,
আজ ওঠে ভেসে ভেসে চোখের পাতায়
হয় নি আজও তা মলিন ।।
কত স্মৃতি কত কথা
ভিড়ছে আজ স্মৃতির জানালায়,
এমন বর্ষণ মুখর ক্ষণে
কত চেনা মুখ মনে পড়ে যায় ।
তাং ২৯/১০/২০০৩ইং
শান্তি নগর ,নীলফামারী ।
~: আক্ষেপ :~ ২১১
দুঃখ পাই মনে মনে
প্রাণে বড় আক্ষেপ ,
উত্তর বঙ্গের প্রতি
কারো নেই কোন পদক্ষেপ ।
ক্ষমতায় যাওয়ার আগে অনেকেই কত
আওড়ায় ছলের বুলি ,
ক্ষমতা পেলে গন্তব্যে গেলে
সবি যায় ভুলি ।।
ওরা কি জানে না অভুক্তের বেদনা
কত বেদনা অন্তরে লুকিয়ে ,
ক্ষমতা পেলে সবি যায় ভুলি
সব পাট যায় চুকিয়ে ।
এক দেশ মাতৃকার সন্তান তবুও
অনাদরে থাকে উত্তর বঙ্গের লোক ,
উত্তর বঙ্গের লোক বড় শান্ত - নিরীহ
কখনো করে না কোন গোল যোগ ।।
তাই বলে কি তারা পাবে না কভু
তাদের ন্যায্য অধিকার ,
একটাই প্রশ্ন জাগে মনে
তাই প্রশ্ন করি বার বার ।
হে কর্ণধার হও বিবেক বান
নাও সমান সুষ্ঠ পদক্ষেপ ,
ঘুচিয়ে দাও অভুক্তের বেদনা
ঘুচাও উত্তর বঙ্গের আক্ষেপ ।।
তাং ২৯/১০/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~: ঈদ :~ ২১২
ঈদ মানেই খুশি
ঈদ মানেই আনন্দ,
ঈদ মানেই শুচিতা
মিটে যায় দ্বন্দ্ব ।
ঈদ মানেই দুর থেকে
দেশে ফিরে আসা,
ঈদ মানেই সম্প্রীতি
প্রেম-ভালবাসা ।।
ঈদ মানেই ঈদ কার্ড
নতুন উপহার,
ঈদ মানেই জাগরণ
আসে বার বার ।
ঈদ মানেই স্মৃতি কথা
অতীতে ফিরে যাওয়া,
ঈদ মানেই হাসি-খুশি
ফিরনি সেমাই খাওয়া ।।
ঈদ মানেই কোলাকুলি
নতুনের সাড়া,
ঈদ মানেই বন্ধন
আনন্দে আত্মহারা ।
তাং ২৯/১০/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~: আত্মোপলব্ধি :~২১৩
মানুষের হাসি মাখা মুখ দেখে
কিযে ভাল লাগে,
দুঃখ,ভ্রারাক্রান্ত,মলিন ব্যথাতুর মুখ দেখলে
গোপন ব্যথা বুকে জাগে ।
পরের দুঃখে ,দুঃখ পাই
নিজের দুঃখে হাসি,
পরের সুখে সুখী হই
মানুষেরে বড় ভালবাসি ।।
শত আঘাতে হারাই না ধৈর্য্য
সহিতে পারি না অপমান,
মানুষে মানুষে হানাহানি দেখে
বুকে বাজে বেদনার গান ।
পৃথিবীতে যখন শান্তি বিরাজ করে
আনন্দে ভরে যায় বুক,
অনাহারির মুখে আহার তুলে দিয়ে
পাই যে বড় সুখ ।।
মানুষে মানুষে দেখি যখন সৌহার্দ্য ভাব
সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে,
ইচ্ছে হয় গড়ে তুলি সাম্য সমাজ
এই বিশ্ব মানবের তরে ।
তাং০১/১১/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~:ছেলে বেলা :~২১৪
রিম ঝিম ঝিম বৃষ্টির সুর
লাগে কি সুমধুর !
ঝর ঝর বৃষ্টি ঝরে
কত কথাই আজ মনে পড়ে ।
নিশ্চিন্ত,ঝামেলা মুক্ত ছেলে বেলা
জ্যোৎস্নালোকিত রাত,হাসি খুশি ভরা গ্রাম্য মেলা ।
সেই ঘুড়ি ওড়ানো দিন,চড়ুই ভাতি
জ্যৈষ্ঠের দ্বিপ্রহর,গল্প শোনা চাঁদনী রাতি ।
মনে পড়ে নবান্ন উৎসব,পৌষ পার্বণে পিঠে খাওয়ার ধুম,
পালা গান,কবি গান শোনা,রাত জাগা নেই চোখে ঘুম ।
খেলার সাথীদের মনে পড়ে আজ,মনে পড়ে কত খেলা ,
আর কি ফিরে পাব কভু সেই ছেলে বেলা ।
তাং ০৫/১১/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~:আত্ম কথা :~২১৫
আমি যামিনী গভীর যামিনীর মতই গভীর
আমি বাঁধন হারা মুক্ত পাখি উন্নত শির ।
জীবনের যত বেদনা যত দুঃখ হাসি দিয়ে ঢাকি
তাইতো সদা সর্বদা হাসি মুখে থাকি ।
ছন্দে ছন্দে গেয়ে চলি উৎফুল্ল মম প্রাণ
কলুষিত সমাজকে জাগিয়ে তুলব ছড়িয়ে মধুর ঘ্রাণ ।
আমার চোখে সবাই সমান হিন্দু মুসলমান
তাই আমি গাই মানবতার জয়োগান ।
আমি জানি ধরণীর সবাই সমান,সকলি ভাই ভাই
আমার দিলে কোন জাতিভেদ নাই ।
মানুষেরে আমি ভাই বড় ভাল বাসি
মানুষের আপদে বিপদে তাইতো ছুটে আসি ।
মানুষের হাসি মাখা মুখ দেখে জুড়ায় মম প্রাণ
আর্তনাদ শুনলে বুকে বাজে বেদনার গান ।
আমি দেই ভীরুকে সাহস,আশাহীনে আশা
দীন দুঃখীদের পাশে গিয়ে দাঁড়াই দিতে ভালবাসা ।
প্রাণের টানে ছুটে যাই দীন দুঃখীদের মাঝে
সর্বদা ব্যস্ত থাকি নানা রকম কাজে ।
প্রেম ও প্রীতির বন্ধন গড়িতে চাই মানুষের সনে
চিরস্থায়ী ঠাঁই পেতে চাই আমি মানুষের মনে ।
তাং১৩/১১/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~:প্রিয়া হীন ঈদের দিন :~২১৬
ঈদ আসছে তাই চারিদিকে
বইছে খুশির জোয়ার ,
আমি ভাবি প্রিয়ার জন্য
কি কিনব উপহার ?
অনেক ভেবে প্রিয়ার জন্য
কিনলাম ঈদ কার্ড,
প্রিয়ার মুখে ফুটবে হাসি
যেন খুশির হাট ।।
ঈদের দিনে প্রিয়া এসে বসবে পাশে
হবে কিযে আনন্দ,
দিনটি যাবে হাসি গানে
এতে নেই যে কোন দ্বন্দ্ব ।
অবশেষে ঈদ এলো
প্রিয়া এলো না ,
কি কারণ তার না আসার
বুঝা গেল না ।।
সব আনন্দ হল পন্ড
এবার ঈদের দিনে ,
ভেঙ্গে গেল স্বপ্ন সাধ
আমার প্রিয়া হীনে ।
সবার মুখে সুখের হাসি
যে দিকে তাকাই,
প্রিয়া হীন ঈদের দিনে
শুধু আমার মুখে হাসি নাই ।।
তাং১৭/১১/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~: স্বপ্নের মায়াজাল:~২১৭
মনেতে বুদ্ বুদ্ সদৃশ
জাগে কত আশা,
স্বপ্নেরা এলো মেলো
বুকেতে বাঁধে বাসা ।
কত আশা স্বপ্ন সাধ
মনে ঘুরপাক খায়,
কত আশা বাঁধে বাসা
কত স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় ।।
তবু হায় জড়িয়ে যায় জীবন
স্বপ্নের মায়াজালে,
স্বপ্ন দেখি আশা করি
থামেনা জীবন ধারা কোন কালে ।
স্বপ্ন মুক্ত মানব জীবন
নহে কো কোন কালে,
মানব জীবন ঘিরে আছে
স্বপ্নের মায়াজালে ।।
তাং২০/১১/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~: মতিভ্রম:~ ২১৮
ইচ্ছে নাই তবুও যাই
এ নহে মতিভ্রম,
যাওয়া আসা,বিদায় মিলন
নিয়েই তো মানব জনম ।
ইচ্ছে নাই তবুও যাই
তবুও যেতে হয়,
এ সংসার মাঝে সবই অস্থায়ী
চিরস্থায়ী কেহ নয় ।।
সাত রঙে রঙিন
মনেতে জাগে কত আশা,
জানি সব কিছু ছেড়ে যেতে হবে
তবুও বাঁধি কত সাধের সুন্দর বাসা ।
কত রহস্যে গড়া মোদের
এ মানব জনম,
একদিন সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে হবে
এ নহে মতিভ্রম ।।
তাং২৩/১১/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~:দূরবস্থা :~২১৯
এই কি সেই শিক্ষাঙ্গন
নোংরামিতে ভরা,
শিক্ষার পরিবেশ নেইতো এখন
হয়ে গেছে জীর্ণজরা ।
শিক্ষা দিবে কে কাকে
শিক্ষাই নেবে কে ?
জুটি বেঁধে গল্প করে
শিক্ষাঙ্গনে আসে যে ।।
প্রেমের নামে গল্প করে
চরিত্রের নেই ঠিক,
এই কি সেই শিক্ষাঙ্গন
ধিক্ শত ধিক্ ।
শিক্ষাঙ্গনে চলছে এখন
দূর্নীতি চাঁদাবাজি,
শিক্ষাঙ্গনের এ দূরবস্থা
হয়েছে কেন আজি ?
সবই যেন উল্টা পাল্টা
কিছুই নেই ঠিক,
এই কি সেই শিক্ষাঙ্গন
ধিক্ শত ধিক্ ।
তাং২৩/১১/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
~:রূপসী :~২২০
মেয়েটি দেখতে রূপসী
চরিত্রের নেই ঠিক,
শত ঘৃণা তাকে জানাই
ধিক শত ধিক ।
ডুবে ডুবে জল খায়
চুপি চুপি প্রেম করে,
শত প্রেমিক তার তরে
আফসোস করে মরে ।।
ছিম ছাম চেহারা
সে দেখতে রূপসী,
এবার নাকি করেছে সে প্রেমের সেঞ্চুরী
ছি ছি ছি ।
আমি তারে বলি কি
রূপ থাকা ভাল তবে বেশি রূপ ভাল নয়,
পৃথিবীতে রূপসীরা
কোন কালে সুখী নয় ।।
তাং১০/১২/২০০৩ইং
শান্তি নগর,নীলফামারী ।
তথ্যঃ১৮/০২/২০০৮ইং তারিখে দৈনিক যুগের আলোয় প্রকাশিত হয়েছে এ কবিতাটি ।
