ছোট বেলায় মন্ডবে মন্ডবে ঘুরে বেড়াতাম ,কতই না মজা হত । আজ ঠাকুর দেখছি ফেস বুকের পাতায় আর কলকাতার ডি ডি বাংলার পর্দায় । সে দিনের সোনালী দিন গুলো বার বার পিছু ডাকে কিন্তু ফিরবার পথ নেই ।
অফিসের অনেকেই ছুটি নিয়ে গেছে বাড়িতে । পোশাক শিল্পে ঈদের ছুটি ছাড়া অন্যান্য সম্প্রদায়ের কোন ধর্মীয় ছুটি নেই । একেই বলে অসম্প্রদায়িক দেশ ! আমি এদিকে থাকলেও মন পড়ে আছে বাড়িতে । আগে অনেকেরই খবরাখবর নিতাম কিন্তু আমার খবর কেউ তেমন নেয় না , তাই এখন আর ঘনিষ্ঠ লোক ছাড়া খবর নেই না ।
প্রতিনিয়ত বাড়িতে কল দিচ্ছি । পরিবারের খোঁজ খবর নিচ্ছি । অফিসের তেমন কেউ নেই , সাথে করে পুজা দেখতে যাওয়ার মত । আগে জয়দেব পুরে থাকাকালীন অনেক পুজা দেখেছিলাম ।
শ্রীপুরে তেমন পুজা দেখতেছি না । মাওনা বাজারে একটা আর এম সি বাজারে একটা পুজা মন্ডব দেখেছি । বরমী বাজারে নাকি বেশ কয়েকটি পুজা হয় । যাওয়ার মত সঙ্গি পাচ্ছি না । সুপ্রিয় অষ্টমীতে আটজন মিলে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিল । আজ নবমীতে বৌদি আর পায়েল অন্যদের সাথে ঠাকুর দেখতে গিয়েছে । মা গেছে শিমুল তলী মন্ডবে পুজা দিতে । সুপ্রিয় ছিল বাড়িতে । বিকালে সে বের হয়েছে একাকি পুজা দেখার জন্য । রাতে ডোমারে গিয়েছে । রাত দশটার পর নিমোজ খানায় এসে দেখে অন্যান্য পাড়া থেকে অনেকেই আরতি দিচ্ছে ,আমাদের পাড়া থেকে কেউ নেই ।
আমাদের পাড়া থেকে কেউ থাকবে না ,সেটা সুপ্রিয় মানতে নারাজ । তাই পাড়ার হয়ে সুপ্রিয় আরতি দেওয়া শুরু করেছে । তার আরতি দেখে তো সবাই মুগ্ধ । অনেকে খুশি হয়ে টাকা পুরস্কৃত করেছে । তার বন্ধু বান্ধবীরা তো মহা খুশি ।
কমিটি বক্সে বসেছিল জয়হরি দা ।সুপ্রিয় দেখছে ,জ্যাঠা কাউকেই পুরস্কৃত করছে না । মনে মনে ভাবল ,কৃপন জ্যাঠুকে ভাঙ্গাতে হবে । সুপ্রিয় জয়হরিদার নামে পাড়ার হয়ে অন্য একজন আরতি প্রতিযোগীকে টাকা পুরস্কৃত করেছিল ।
এ শুনে তো জয়হরি দা লজ্জায় পড়ে গেছে । পরের বার থেকে দু একজন কে পুরস্কৃত করতে শুরু করেছে তার জ্যাঠু ।
সুপ্রিয় আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ওম ট্রেডার্স এর পক্ষে তার বাবার নামেও টাকা পুরস্কৃত করেছে । তা ছাড়া ওম ট্রেডার্স এর পক্ষ থেকে নাকি কিছু গিফট ও কিনে দিয়েছে দাদা । যেগুলো আরতি প্রতিযোগীদের মাঝে বিতরণ করা হবে ।
সুপ্রিয় আমাকে বলল ,কাকু পাড়ার হয়ে যদি দু' একজন এমন কাজ না করে ,তবে পাড়ার সুনাম হবে কি করে ।
মানুষ বংশ গত ভাবে অনেক কিছু লাভ করে । ছোট বেলায় দেখেছি , নিমোজখানার দুর্গাপুজায় ঠাকুরদা কত কিছুই না করেছে । হাই স্কুল প্রতিষ্ঠার সময়ও তো কম সহযোগীতা করে নি । ছোট নদীটার উপর সুপারি গাছ কেটে সাঁকো তৈরি করেছে বছরের পর বছর ।
বাবা পালা গান লিখে পাড়ার সুনাম বৃদ্ধি করেছিল । বিনা টাকায় চিকিৎসা করে অনেকেরই অসুখ সারিয়ে তুলেছিল ।
দাদা পাড়ায় বিদ্যুৎ লাইন এর ব্যবস্থা করেছিল । ঈশ্বরের কৃপায় উদ্যোগ নিয়ে পাড়ায় গীতাঞ্জলি সেবা আশ্রম নামে একটা মন্দির প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি । সেই মন্দিরের পুজারী হল মা আর সভাপতি হল দাদা । ইতিমধ্যে মন্দিরের সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে । আমাদের জমির উপর রাস্তা নির্মান করতে দিয়েছি ,ফলে প্রায় তেইশ লাখ টাকা ব্যয়ে ঠাকুর দাদার নামে ছোট নদীটার উপর ব্রীজ হয়েছে ।
সেই পরিবারের ছেলে সুপ্রিয় । ইতিমধ্যে ভাল রেজাল্ট করে , ভাল ক্রিকেট ,ফুটবল খেলে , দলের ক্যাপ্টেন হিসাবে , স্কুল ক্যাবিনেট নির্বাচনে সবার চেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ,গান বাজনায়, কম বয়সে নিমোজ খানা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে দলের মালিক হয়ে ,কবিতা লিখে ও ধর্মীয় কাজে অনেক জনপ্রিয় ও পরিচিতি লাভ করেছে ।
যার প্রপিতা মহ ,পিতা মহ , পিতামহী ,বাবা ,কাকু এমন ,সে তো ভাল কিছু চিন্তা করবেই ,এটাই স্বাভাবিক । পাড়ার সুনামের জন্য তার এমন কাজ দেখে সত্যিই আমি গর্বিত । ঈশ্বর যেন তার দ্বারা অনেক বড় মহৎ কাজ ঘটাতে পারে ,এটাই প্রার্থণা করি ।

0 Comments