নামঃ নাপা শাক/ লাফা শাক/ Mallow
বৈজ্ঞানিক নাম - Malva Parviflora
দেশের উত্তরাঞ্চলের নীলফামারী জেলার অন্যতম মুখরোচক ও জনপ্রিয় তরকারি এক ধরনের গাছ নাপা শাক নামে পরিচিত। অনেকেই লাফা শাকও বলে। এটির বৈজ্ঞানিক নাম ম্যালোভা পারভিফ্লোরা বা ম্যালো পাতা নামে পরিচিত।
এই শাকের বৈজ্ঞানিক নাম হলো ম্যালো পাতা। এই জনপদের মানুষের প্রিয় ও সুস্বাদু একটি শাক। এটি সহজেই আবাদ হয়।’ আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকরা জানান, নাপা শাকের অনেক ভেষজ গুণও রয়েছে। এছাড়াও বাড়ির পাশে অল্প জমিতে বীজ ফেলে জৈব সার দিয়ে এই শাক ফলানো যায়। এতে কৃষকের তেমন বড় ধরনের খরচ হয় না। সেচ, নিড়ানি দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। উত্তরাঞ্চলের বাজরে চাহিদাও যথেষ্ট। এটি শীতকালে চাষ হয়ে থাকে।
এই শাক ভাজি, রান্না দুইভাবেই খাওয়া যায়। আপনাদের জন্য রেসিপি ও নামকরণসস বিস্তারিত দিয়েছি। কখনো সম্ভব হলে খেয়ে দেখবেন। যারা খেয়েছেন তারা স্বাদ জানাতে পারেন এতে অন্যরা উৎসাহী হবে।
অতি দ্রুত প্রায় লাফিয়ে শাকটি বড় হয় তাই একে লাফা শাক বলা হয়। এলাকাভেদে নামের
পরিবর্তন হতে পারে। অন্যকোন নাম থাকলে জানাবেন।
ধরণ : শাকটি কিছুটা পাট শাকের মতো, পিচ্ছল ধরণের। পাট শাকের মতো ভাজি বা ঝোল
করে খাওয়া যায়। বিশেষ করে শীতের সকালে লাফা শাকের ঝোল আর নতুন আলুর ভর্তার
স্বাদ লোভনীয়।
রসনা তৃপ্ত করে, সুস্বাদু ঘরে ঘরে জনপ্রিয় ঔষধি গুণ সম্পন্ন বাহের দ্যাশের নাপা শাক
মাছে-ভাতে বাঙালীর রসনাতৃপ্ত করার অন্যতম সহজ খাবার হলো শাক। বিভিন্নভাবে রান্না করে খাওয়া হয় শাক। শাকের ঝোল বা ঘোণ্ট, শাকভাজা বা চচ্চড়ির মতো পদ লোভনীয়। প্রায় সারাবছরই বিভিন্ন জাতের শাক চাষ হয়। তাই শাক যেন মৌসুমভিত্তিক খাদ্যের তালিকায় থেকেই যাচ্ছে। এই শাকের সঙ্গে নতুন আলু ভর্তার কি যে স্বাদ, যেন মুখে লেগেই থাকে।
এই শাক প্রথম রান্না নিয়ে প্রচলিত গল্পটি এ রকম- শীতের কোন এক সময় পুঁটি মাছ ধরে এনে এক গেরস্ত তার বউকে রান্না করতে বলে মাঠে কাজ করতে যায়। বউ মাছ রেখে বাড়ির অন্য কাজ করতে থাকে। এই ফাঁকে বাড়ির হাঁস-মুরগি সেই মাছ খেয়ে ফেলে। গেরস্তের বউ মাছ কাটার জন্য এসে দেখে কোন মাছ নেই। তখন সে দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। গেরস্ত বাড়িতে এলে তাঁকে শারীরিক নির্যাতন করবে ভেবে রান্নার জন্য বাড়ির উঠানের পাশে অপরিচিত শাক তুলে রান্না করে রাখে। গেরস্ত বাড়ি ফিরলে বউ তাকে রান্না করা সেই অপরিচিত শাক দিয়ে ভাত খেতে দেয়। গেরস্ত গরম গরম ভাতের সঙ্গে এ শাক খেয়ে খুবই তৃপ্তি পায়। খেতে খেতে বলে, এত সুন্দর শাক খাওয়ার পর অন্য কোন তরকারি খাওয়ার প্রয়োজন নেই। মাছ দিয়ে খাওয়ার কথা সে ভুলে যায়।
এতে গেরস্তের বউ তো মহাখুশি।
খাওয়ার পর গেরস্ত জানতে চায়- কি শাক, কোথায় পেয়েছে সে এই শাক? বউ বলে উঠানের পাশেই যে গাছগুলো নলপল নলপল করে বেড়ে উঠেছে, সেই গাছের পাতা এই শাক। গেরস্ত বলে নলপল করে যেটা ওঠে তার নাম নাপা। সেই থেকে নাকি এর নামকরণ হয়েছে ‘নাপা’। এর কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখা কেউ বলতে পারে না। এই শাককে কোথাও নাপা, কোথাও লাপা বলা হয়ে থাকে। এই নাপা শাক দু’জাতের- নাপা বা লাপা ও হাপা। নাপা শাকের পাতা একটু ছোট কাটা কাটা গোল আকৃতির আর হাপা শাকের পাতা বড় বড়, নাপার দ্বিগুণ আকারে হয়ে থাকে। শীতের সময় বপনের দিন থেকে মাত্র দুই মাস এ শাকের আয়ু। তারপর আস্তে আস্তে শুকিয়ে মরে যায়। স্যাঁতস্যাঁতে এবং ছায়াযুক্ত স্থানে বেশি ফলন হয়। কেউ ভাজি করে, কেউ ঝোল করে, আবার অনেকে খাওয়ার সোডা দিয়ে রান্না করে খায়। এই খাবার সোডা দিয়ে রান্না করার পর কোথাও শোলকা, কোথাও প্যালকা, কোথাও ছ্যাকা আবার কোথাও প্যালকানিও বলা হয়ে থাকে।
কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার ও অসমের গোয়ালপাড়া এলাকার মানুষের কাছে এই শাক দারুণ প্রিয়। তবে বাংলাদেশে এই নাপা শাক একমাত্র ‘বাহের দ্যাশে’র ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
আমার মা ভাজি করতেন ও প্যালকা, শোলকা রাঁধতেন। আমার খুব প্রিয় সে ডিস।
প্যালকা ঃ
শাক দিয়ে রান্না করা ‘শোলকা’র মতো আরও একটি জনপ্রিয় খাবার “প্যালকা’’। এটা রংপুর অঞ্চলের নিজস্ব একটা খাবার। কারণ, দেশের অন্য কোথাও “প্যালকা’’ খাওয়ার কথা শোনা যায় না। তবে রংপুরের সব এলাকায় এটা রান্না হয় তাও নয়। অন্য সব শাকের মতো নয় “প্যালকা’’ রান্না প্রক্রিয়া। এটি রান্নারও স্বকীয়তা আছে।
প্যালকার মূল উপকরণ মূলত বতুয়া শাক, নাপা শাক, সজনা পাতা, খাবার সোডা ইত্যাদি। শাক পরিষ্কার করে, কুচিকুচি করে একসঙ্গে হাড়িতে নিয়ে পরিমাণ মতো লবণ, কাঁচামরিচ, পানি এবং সামান্য খাবার সোডা এক সাথে মেশানো হয়। এরপর হাড়িতে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল দেয়া হয়। মাঝে মাঝে নেড়ে দেয়া হয়। প্যালকা র উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি রান্না করতে কোনো তেল ব্যবহার করা হয় না। খাবার সোডা শাক কে খুব ভালো ভাবে সিদ্ধ হতে সাহায্য করে। যেহেতু প্যালকা মুল উপাদান মৌসুমী শাক তাই মৌসুম ভেদে এর বিভিন্নতা দেখা যায়। প্যালকা সাধারণত গরম গরম ভাতের সাথের সাথে পরিবেশিত হয়। বিভিন্ন শাক থাকার জন্য এটি খুব উচ্চ ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বিশিষ্ট খাবার। এতে প্রচুর খাদ্যপযোগী আশ ও পাওয়া জায়।
প্যালকার মূল উপকরণ মূলত বতুয়া শাক, নাপা শাক, সজনা পাতা, খাবার সোডা ইত্যাদি। শাক পরিষ্কার করে, কুচিকুচি করে একসঙ্গে হাড়িতে নিয়ে পরিমাণ মতো লবণ, কাঁচামরিচ, পানি এবং সামান্য খাবার সোডা এক সাথে মেশানো হয়। এরপর হাড়িতে ঢাকনা দিয়ে জ্বাল দেয়া হয়। মাঝে মাঝে নেড়ে দেয়া হয়। প্যালকা র উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি রান্না করতে কোনো তেল ব্যবহার করা হয় না। খাবার সোডা শাক কে খুব ভালো ভাবে সিদ্ধ হতে সাহায্য করে। যেহেতু প্যালকা মুল উপাদান মৌসুমী শাক তাই মৌসুম ভেদে এর বিভিন্নতা দেখা যায়। প্যালকা সাধারণত গরম গরম ভাতের সাথের সাথে পরিবেশিত হয়। বিভিন্ন শাক থাকার জন্য এটি খুব উচ্চ ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বিশিষ্ট খাবার। এতে প্রচুর খাদ্যপযোগী আশ ও পাওয়া জায়।
প্যালকার রন্ধন প্রণালীতে ভিন্নতা রয়েছে। রংপুরেরই অঞ্চলভেদে এর রন্ধন প্রণালীতে ভিন্নতা দেখা যায়।
শোলকাঃ
উত্তর বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী এবং পুরোনো খাবার গুলোর মধ্যে শোলকা একটি।আঞ্চলিক ভাষায় শোলকা অন্য নাম থাকতে পারে।
যার প্রধান উপকরন হলো সজিনা পাতা এবং বিভিন্ন ধরনের শাক পাতা।নাম শুনতে কিছুটাখারাপ হলেও এটি কিন্তুু স্বাদের দিক থেকে অতুলনীয়।এটি সাধারণত ভাতের সাথে কিংবা সুপ হিসেবে খাওয়া যায়।শুধুমাত্র সবুজ শাক দিয়ে তৈরি হওয়ার কারনে এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন।
ধারণা করা হয় বেগম রোকেয়ার "চাষার দুক্ষু" প্রবন্ধে যে শাক পাতা সিদ্ধ করে খাওয়ার কথা বলা হয়েছে এটি সেই শাক।
* উপকরন:---
১.সোডা।
২.কাঁচামরিচ।
৩.রসুন।
৪.লবন।
৫.বিভিন্ন ধরনের শাকপাতা(সজিনা পাতা,কুমড়ো পাতা,লাউ পাতা,কচু পাতা,ডাটা পাতা,মিষ্টি আলু পাতা,হেলেঞ্চা,চিচিঙ্গা পাতা,কাঁকরোল পাতা,তেলা কচু[মাকাল পাতা ও দেয় কেউ ],পাট পাতা)
কুচিকুচি করে কাটা।
* প্রস্তুত প্রণালী:---
প্রথমে একটি পাতিলে পানি দিয়ে তাতে সোডা,কাটা কাঁচামরিচ,রসুন,লবন দিয়ে কিছুক্ষন জাল দিতে হবে,পানি উতলে আসলে তা কিছুটা বাদামি রং ধারন করবে,এরপর সবগুলো শাকপাতা কুচি অল্প অল্প করে দিয়ে নাড়তে হবে।সবগুলো মিশ্রন দেওয়া হয়ে গেলে হালকা আচে তা রান্না করুন এবং নীচ থেকে ঘন ঘন নাড়তে হবে।খেয়াল রাখতে হবে, পুড়ে না যায়।এভাবে সবটুকু পানি শুকিয়ে আসলে সেটি আঠালো হয়ে আসবে,বুঝবেন রান্না হয়ে এসেছে। চুলা থেকে নামিয়ে পরিবেশন করুন।
নাপা / লাফা শাকের ঝোল রান্নাঃ
* উপকরনঃ
নাফা শাকঃ এক আটি:/ ৫০০গ্রাম পরিমান ( কেটে ধুয়ে পরিষ্কার করা)
রশুনঃ ৩টি কোয়া থেতলে নেয়া
শুকনা মরিচঃ ২টি
আদাঃ আধা ইঞ্চি পরিমান থেতলে নেয়া
লবনঃ ২চা চামচ / স্বাদমত
পানিঃ ১ লিটার পরিমান।
তেলঃ ২চা চামচ
প্রনালীঃ
একটি পাত্রে তেল দিয়ে আদা, রশুন ও শুকনা মরিচ লাল করে ভাজুন।
এবার ১ লিটার পানি দিয়ে বলক আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করুন।
পানি বলক আসলে শাক দিয়ে দিন। ৩০-৬০ মিনিট রান্না করুন।
গরম গরম পরিবেশন করুন।






0 Comments