Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

মধুটিলা ইকো পার্ক ভ্রমণ

তারিখঃ১৭/০১/২০২০ ইং 
গতানুগ‌তিক নিয়‌মে চল‌তে চল‌তে মা‌ঝে মা‌ঝে খুব বির‌ক্তি চ‌লে আ‌সে জীব‌নে । তাই মা‌ঝে ম‌ধ্যেই কোথাও হ‌তে একটু ঘু‌রে আস‌তে হয় । ঘোরাঘু‌রির জন্য দরকার ই‌চ্ছে শ‌ক্তি আর অর্থ । অ‌নে‌কের অর্থ আ‌ছে কিন্তু ই‌চ্ছে শ‌ক্তি নেই । ছোট্ট এ জীব‌নে যা দেখব সেটাই তো পরম পাওয়া হ‌য়ে র‌বে । অ‌নে‌কে আবার ভ্রমণ বিমুখ । ঘোরাঘু‌রি‌তে তা‌দের মন নেই ,তারা মনে ক‌রে ঘোরাঘু‌রি ক‌রে অর্থ অপচয় ক‌রে কি হ‌বে । তারা এটা বুঝ‌তে চায় না,এ জীবন এক‌দিন ফু‌রি‌য়ে যা‌বে । সে‌দিন এ অর্থ আর কোন কা‌জে আস‌বে না । 
আম‌ি জব ক‌রি একটা পোশাক কোম্পানী‌তে । এ অ‌ফি‌সের যারা উর্ধ্বতন র‌য়ে‌ছেন ,‌কোন দিন দে‌খি নি তা‌দের বাৎস‌রিক পিক‌নিক বা ভ্রম‌ণের ব্যাপা‌রে কোন উৎসাহ । এরা যেন যন্ত্রমানব,কা‌জের বাই‌রে তা‌দের কোন উৎসাহ নেই । তারা যেন একপ্রকার রোবট ।
আমা‌দের পা‌শের অ‌ফিস থে‌কে উ‌দ্যোগ নি‌য়ে‌ছে এবার শেরপুর জেলার,না‌লিতা বা‌ড়ি থানার মধু‌টিলা ই‌কোপা‌র্কে যা‌বে । আমা‌কেও ব‌লে‌ছে । ১১০০ টাকা ক‌রে দি‌তে হ‌বে । টাকাটা কোন ব্যাপার না । দি‌য়ে দিলাম । এমন সু‌যোগ হাতছাড়া করাটা ঠিক হ‌বে না । যখন রংপুর কারমাই‌কেল ক‌লে‌জে অনা‌র্সে প‌ড়ে‌ছিলাম । প্রথম বর্ষ আর ৩য় ব‌র্ষে দুইটা বড় সু‌যোগ মিস ক‌রে‌ছিলাম । 

প্রথম ব‌র্ষে ট্যুর ছিল চট্টগ্রাম,রাঙ্গামা‌টি,কক্সবাজার,‌সেন্টমা‌র্টিন । সাত দি‌নের ট্যুর ছিল । ফি ছিল  জন প্র‌তি ৩৫০০ টাকা । বা‌কি টাকা ডিপার্ট‌মেন্ট দে‌বে । আমরা ছিলাম বোটানী ডিপার্ট‌মেন্ট এ ১২০ জন ছাত্র ছাত্রী । সা‌রেরা বার বার ব‌লে‌ছিল যাওয়ার জন্য ,‌কিন্তু যে‌তে পা‌রি নি অ‌র্থের অভা‌বে । ১২০ জ‌নের ম‌ধ্যে গি‌য়ে‌ছিল মাত্র চ‌ল্লিশ জন ।  সে সময় ৩৫০০ টাকা আমার কা‌ছে অ‌নেক বড় ব্যাপার ছিল ।  সেই  টাকা দি‌য়ে আ‌মি তখন তিন চার মাস চল‌তে পারতাম । ৩০০ থে‌কে ৫০০ টাকায় এক একটা টিউশ‌নি  করাতাম । চার থে‌কে পাঁচ শত টাকা ছিল রু‌মের সিট ভাড়া ।


 

প্র‌তি‌দিন মিল বাবদ দেওয়া লাগ‌তো দশ থে‌কে বা‌রো টাকা । বুয়া‌কে দেওয়া লাগ‌তো ১২৫ টাকা । চাউল নি‌য়ে আসতাম বা‌ড়ি থে‌কে । হাজার বা‌রো শ টাকা দি‌য়ে মাস চ‌লে যেত । সে সময় পা‌রিবা‌রিক অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল,বাড়‌তি টাকা ব্য‌য়ের চিন্তা কল্পনাও কর‌তে পারতাম না । সেই ২০০৬-৭ সা‌লের দি‌কে অ‌নে‌কের কা‌ছে ৩৫০০ টাকা সামান্য হ‌লেও আমার কা‌ছে ছিল অ‌নেক বড় ব্যাপার । ৩য় ব‌র্ষে ট্যুর ছিল পাঁচ দি‌নের । স্থান ছিল সি‌লেট,‌মৌলভী বাজার । ২৫০০ টাকা ক‌রে দেওয়া হ‌য়ে‌ছিল জন প্র‌তি । তবুও যে‌তে পা‌রি নি । 
আজ যখন ছোট একটা জব কর‌ছি,তখন আর না কর‌ছি না । ১৭ ই জানুয়ারী আমা‌দের যাওয়ার দিন  ধার্য্য হল । ছয়টা বা‌সে তিন শ জ‌নেরও বে‌শি যাত্রী রওনা দিলাম । সকাল আটটার দিকে আনসার রোড থেকে রওনা দিলাম মধুটিলার উদ্দেশ্যে । শীতের সকালে কুয়াশাময় পরিবেশের মধ্যে চলতে বেশ ভালই লাগছে । ছাত্র জীবনের শেষ ট্যুর ছিল বঙ্গ বন্ধু কৃষি বিশ্ব বিদ্যালয়ে । সেটা ছিল গাজীপুর ভাওয়াল বদরে আলম সরকারী কলেজ থেকে শ্রীপুরে । সেটা ছিল ২০১৩ সালের দিকে । আজ প্রায় সাত বছর পর ট্যুরে যাচ্ছি তবুও সেটা চাকুরিজীবি হিসেবে । মাঝ খানে সাতটি বছন কেটে গিয়েছে,কোথাও এভাবে আর যাওয়া হয়ে উঠে নি । 

জীবন সংগ্রামে সংগ্রাম করতে করতে সব কিছুই যেন ভুলতে বসেছি । কবিতা লেখা বন্ধ করেছি সেই কবে । আগের মত আর গান শোনা হয়ে উঠে না,বই পড়া আর বই কেনা হয়ে উঠে না কত দিন । 
ভাবছি আবার নতুন করে সব শুরু করব । সময়টাকে পরতে পরতে উপভোগ করতে হবে । এ ছোট্ট জীবনে সময় খুব কম,তাই সময়টাকে কাজে লাগাতে হবে । 
পথি মধ্যে আমাদের সকালের নাস্তা দেওয়া হল ভুনা খিচুড়ি । প্রায় বারোটার দিকে আমরা পৌঁছে গেলাম আমাদের কাংখিত সেই মধুটিলা ইকোপার্কে  । সেখানে আমাদের সব গাড়ি পার্কিং করে  যারা রান্নার কাজের দায়িত্ব নিয়েছিল,তারা রান্নার  কাজে লেগে পড়লো । আমরা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে ঘুরতে বের হলাম  । আমি,মানিকদা,অনিক,সজীবদা আর মহিউদ্দিন ভাই এই পাঁচ জন এক সাথে ঘুরতে বের হলাম ।



 

আমরা ঘুরছি আর ছবি তুলছি । চারিদিকে পাহাড়ি পথ । এক পথ দিয়ে উঠে আর এক পথ দিয়ে নেমে যাই । পাহাড়ি উঁচু নিচু জায়গায় বেশ ভালই লাগছে । কেমন যেন অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার মনে হচ্ছে । দুইটার দিকে আমাদের খাওয়ার পর্ব শুরু হল । খাওয়ার পর আমরা আবার হাটতে শুরু করলাম । এবার আমাদের সাথে যোগ হল শুভাশীষ দা,মিলনদা,গৌতম দা,সাথী চৌধুরী,জাহাঙ্গীর ভাই এবং একজন নার্স । সর্ব শেষ টিলাটি আমরা জয় করে ফিরে এলাম । ওদিকে লটারীর ড্র অনুষ্ঠিত হল । এরপর গান আর নাচের পর্ব চলল । বিকাল চারটার দিকে আমরা ফেরার জন্য রওনা দিলাম । সারা দিন খুব মজা করলাম। জীবনের খাতায় নতুন এক অভিজ্ঞতা যোগ হল । 
মধুটিলা ইকোপার্কঃ
১৯৯৯ সালে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার উত্তরে এবং জেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তরে সীমান্তবর্তী গারো পাহাড় এলাকায় ময়মনসিংহ বন বিভাগের ব্যবস্থাপনাধীন পোড়াগাঁও ইউনিয়নের মধুটিলা ফরেস্ট রেঞ্জের সমেশ চূড়া বীটের আওতায় ৩৮০ একর পাহাড়ি টিলার ওপর ‘মধুটিলা ইকো পার্ক’ নামে মনোরম পিকনিক স্পট গড়ে তোলা হয়েছে। গারো পাহাড় এলাকায় নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক নৈসর্গিক ওই পিকনিক কেন্দ্রে এখন হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুদের পদচারণায় ভরে উঠেছে। প্রতি বছর শীত মওসুমে ও বসন্তকালে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষা সফর ও বনভোজনে বাস, মাক্রোবাস, প্রাইভেট কার করে হাজার হাজার ভ্রমণ পিপাসুরা বেড়াতে আসছে।


এখানে রয়েছেঃ
ইকোপার্কে প্রবেশ পথে সুদৃশ্য প্রধান ফটক, ডিসপ্লে মডেল, তথ্য কেন্দ্র, গাড়ি পার্কিং জোন, ক্যান্টিন, ওয়াচ টাওয়ার, মিনি চিড়িয়াখানা, মনোরম লেক ও বোটিং, স্টার ব্রিজ, স্ট্রেম্পিং রোড বা সুউচ্চ পাহাড়ে উঠার জন্য ধাপ রাস্তা (সিঁড়ি), মিনি শিশু পার্ক, মহুয়া রেস্ট হাউজ, স্টিলের ছাতা, ইকো ফ্রেন্ডলি বেঞ্চ, আধুনিক পাবলিক টয়লেট, পার্কের প্রবেশ পথ ধরে যাওয়া বিভিন্ন সড়কের পার্শ্বে স্থাপন করা হয়েছে হাতি, হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সিংহ, বানর, কুমির, ক্যাঙ্গারু, মৎস্য কন্যা, মাছ, ব্যাঙসহ বিভিন্ন জীব জন্তুর ভাস্কর্য। এ ছাড়া আরও রয়েছে বিরল প্রজাতি, পশু পাখি আকৃষ্ট, ওষুধী ও সৌন্দর্য বর্ধক প্রজাতির গাছের বাগান, মৌসুমী ফুলের বাগান এবং সাত রঙের গোলাপ বাগান। পার্কের উঁচু টিলার ওপর ৩ কামরা বিশিষ্ট সুদৃশ্য বাংলো বা ‘মহুয়া রেস্ট হাউজ’ ব্যবহার করতে হলে ময়মনসিংহ অথবা শেরপুর বন বিভাগ অফিস থেকে প্রতিদিনের জন্য 5 হাজার 5০০ টাকা এবং 3০০ টাকা ভ্যাটসহ মোট 5 হাজার 8০০ টাকায় ভাড়া নিতে হবে।



যেভাবে যাবেনঃ
ঢাকা মহাখালী বাসস্ট্যান্ড থেকে শেরপুর জেলা সদরে বেশ কিছু ভাল বাস সার্ভিস রয়েছে।জন প্রতি ভাড়া হচ্ছে ২২০ টাকা। এরপর শেরপুর জেলা সদরের লোকাল বাস স্ট্যান্ড থেকে নালিতাবাড়ি উপজেলার নন্নী বাজার পর্যন্ত লোকাল বাসে জন প্রতি ২০ টাকায় যাওয়া যাবে। এছাড়া ঢাকা মহাখালি থেকে সরাসরি নালিতাবাড়িতেও কিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। সেসব সার্ভিসে চড়ে শেরপুর জেলা শহরে না এসে সরাসরি নালিতাবাড়ি উপজেলা মহরে নামতে পারেন। এরপর নালিতাবাড়ি শহর থেকে মধুটিলা ইকো পার্ক পর্যন্ত রিক্সা বা ব্যাটারি ও সিএনজি চালিত অটোরিকশায় যাওয়া যাবে। 

এতে জনপ্রতি ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা এবং রিজার্ভ ভাড়া নেবে ১২০ থেকে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া শেরপুর জেলা শহর থেকে ভাড়ায় চালিত সিএনজি অটোরিকশা অথবা মাইক্রোবাস ভাড়া করেও ইকো পার্কে যাওয়া যাবে। দিন চুক্তি ভাড়া নেবে ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া মধুটিলা ইকোপার্ক থেকে ভোর ৬ টায় প্রতিদিন ঢাকার মিরপুর পর্যন্ত এবং মিরপুর থেকে প্রতিদিন বেলা ২টায় ইকোপার্ক পর্যন্ত যাতায়াত করছে। আর যারা ঢাকা থেকে নিজস্ব গাড়িতে আসতে চান তারা ময়মনসিংহ পার হয়ে সরাসরি শেরপুরের নকলা উপজেলা থেকে শেরপুর জেলা সদরে না এসে নালিতাবাড়ি উপজেলা হয়ে মধুটিলা যাওয়া যাবে।

Post a Comment

0 Comments