Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

করোনা নামক মহাপ্লাবন আসছে

তারিখঃ২৪/০৩/২০২০ ইং
বাংলাদেশে মার্চ মাসের ৮ তারিখে করোনা ভাইরাস সনাক্ত করা হয়েছে । আজ ২৪ তারিখ । এ পর্যন্ত ৩৯ জন আক্রান্ত কে সনাক্ত করা হয়েছে । মারা গেছে ৪ জন । গতকাল সরকারী আর বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে যাতে করে মানুষ ঘরে থাকে ,রাস্তায় যেন বের না হয় । জনগন করছে তার উল্টো । গতকাল থেকেই উৎসবের মত শুরু হয়েছে । লোকজন যে যেমন পারছে ,বাড়ির দিকে ছুটছে । ট্রেনে,বাসে উপচে পড়া ভিড় । 
                                                           

প্রবাসীরা যেমন দেশে ফিরে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি করেছে ,তেমনি আমার মনে হয় লোকজন গ্রামে গিয়ে করোনার সংক্রমণ অনেক বৃদ্ধি করবে । আমরা শুধু দোষ দিচ্ছি যারা বিদেশ থেকে এসেছে তাদের উপর কিন্তু যারা এভাবে বাড়িতে যাচ্ছে তারা কি দায়ী হবে না ? 
সরকারের উচিৎ ছিল গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া । দেশে যদি দিনকে দিন করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়ে যায় ,সে ক্ষেত্রে সরকার অনেকাংশে দায়ী থাকবে । কিছু কিছু মন্ত্রী এমন সব বক্তব্য দিচ্ছে যা খুবই হাস্যকর ও ভিত্তিহীন । সারা বিশ্ব যখন করোনা নামক মহামারীতে আক্রান্ত তখন আমাদের উচিৎ ছিল আরো আগে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা ।



 

আমরা মনে হয় অনেক দেরি করে ফেলেছি । করোনা নামক মহাপ্লাবন আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে । আমরা যদি  এর গতিপথ ঘুরিয়ে দিতে না পারি ,তবে এদেশে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়ে যাবে । আমরা বাঙালি,বড়ই আবেগ প্রবণ । কিন্তু আবেগ দিয়ে তো আর করোনা মোকাবেলা করা যাবে না । আমরা সরকারের কথা না মেনে দলে দলে বাড়ির দিকে ছুটছি । ভাবছি যা হবার বাড়িতে হবে । কিন্তু এটা ভাবছি না,আমাদের মাধ্যমে ভাইরাস গ্রামের বা বাড়ির মানুষের মাঝে ছড়িয়ে যেতে পারে । 
আমাদের বিবেক বোধ কম তাই ভাল মন্দ সহজে বুঝতে পারি না । সরকার অফিস ছুটি দিয়েছে বাড়িতে বা বাসায় থাকার জন্য । আমরা সেটাকে উৎসব ছুটি মনে করে গ্রামের দিকে ছুটছি । আমি মনে করি  এদেশের গ্রাম গুলোই সবচেয়ে নিরাপদ । কিন্তু এত মানুষের ছুটাছুটি দেখে মনে হচ্ছে গ্রাম গুলি আর নিরাপদ থাকলো  না । যারা গ্রামে যাচ্ছে তাদের উচিৎ হবে দূরত্ব  বজায় রেখে চলা । কমলাপুর স্টেশনে যে ভীড় দেখলাম ,সেখানে যদি কেউ আক্রান্ত ব্যক্তি থাকে ,তাহলে তো অনেক বড় সর্বনাশ হয়ে যাবে । বরিশাল গামী লঞ্চ বা স্টিমার গুলোতেও তিল ধারণের জায়গা নেই । 
করোনা এখন সারা বিশ্বে একটি ভয়ংকর নাম । করোনার কথা শুনলেই সবাই আঁতকে উঠে । এক করোনার ভয়ে ভীত বিশ্ববাসী । দুনিয়ার ক্ষমতাধর দেশ গুলো করোনাকে সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছে । জানি না আমাদের মত দেশে করোনার হিংস্র থাবার আঘাত পড়লে কি অবস্থা হবে । দিন দিন করোনা গ্রাস করছে পুরো বিশ্ব কে । ভারতের মত দেশে লক ডাউন শুরু হয়ে গেছে । জনতার উপর ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী লাঠি চার্জ করতেও দ্বিধা করছে না । আমরা বাংলাদেশীরা  বীরের জাতি । তাই কারো কথাই কর্ণপাত করছি না  । গ্রামের মানুষ তো দূরের কথা ,শহরের লোকেরাও সচেতন হচ্ছে না ।
আমরা সময় হারিয়ে ফেলছি । সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে । অথচ সরকার কঠোর কোন পদক্ষেপ এপর্যন্ত নিচ্ছে না । সরকারী ও বেসরকারী অফিস বন্ধ ঘোষণা করেছে কিন্তু পরিবহন বন্ধ করে নি । 

পোশাক শিল্পের মত আরো কিছু কল কারখানার এখনো বন্ধ ঘোষণা করা হয়নি । মনে হয় সরকারের কাছে এসব কলকারখানায় কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের কোন মূল্য নেই । পোশাক শিল্প থেকে বৈদেশিক মূদ্রা আসে দেশের মোট ৮২% । মালিকেরা চাচ্ছে সরকার কিছু  একটা ঘোষণা করুক । ওদিকে সরকার চাচ্ছে মালিকেরা ব্যবস্থা গ্রহণ করুক । কিন্তু আমরা যারা এসব শিল্পে জড়িত তাদের কি হবে । আমি একটা জিনিস বুঝি না ,এসব শিল্প কারখানা খোলা রেখে দেশে লক ডাউন কার্যকর করবে কিভাবে ।


 

আমরা আর যাই করি না কেন,আমাদের হাতে খুব বেশি সময় নেই । যা করবার এখনি করতে হবে । করোনা নামক মহাপ্লাবন দ্রুত গতিতে আমাদের দিকে ধেয়ে আসছে । এর গতিপথ যদি সময় মত ঘুরিয়ে দিতে ব্যর্থ হই .তখন কিন্তু আমাদের বাঁচার পথ বন্ধ হয়ে যাবে । আমাদের কাল ক্ষেপণের আর কোনই সুযোগ নেই । কিন্তু সরকারের এমন পদক্ষেপ দেখে মনে হচ্ছে ওটা কোন ব্যাপারই নয় । এক এক জন মন্ত্রী হাস্যকর মন্তব্য করেই চলছে যা জাতি তাদের কাছে কোন ভাবেই সেটা আশা করে না । এক মন্ত্রী তো বলেই ফেলেছেন ,আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী । আর একজন বলেছেন , চিন্তা করার কারণ নেই ,আমাদের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা আছে । আর একজন বলেছে,মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর নেতৃত্বে আমরা করোনাকে পরাজিত করেছি । দেশে  এখনো করোনার ভয়াল থাবা পড়েই নি অথচ উনি বলে বসলেন করোনা পরিাজিত হয়েছে । 
গত বছরের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহরে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয় । এর পর দ্রুত সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে । সে হিসাবে আমরা অনেক সময় পেয়েছিলাম কিন্তু কাজে লাগাতে পারি নি । তাছাড়া সরকারের দৃষ্টি ছিল একটি বিশেষ দিবস পালন করার দিকে । আমাদের দেশের সব মন্ত্রী,এমপি চেয়ে থাকে প্রধান মন্ত্রীর দিকে । নিজে থেকেই যে ভাল একটা উদ্যোগ নেবে ,সে জ্ঞান মনে হয় তাদের নেই । এজন্য আমরা আম জনতা এখন কোন কিছু হলেই প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষন করার চেষ্ঠা করি । কেননা অন্যদের উপর আমাদের ভরসা কম অথবা তারা সেটুকু আস্থা অর্জন করতে ব্যর্থ
 হয়েছে । 
করোনার মত মহামারীতে যখন বিশ্বের উন্নত দেশ গুলো কাবু হয়ে যাচ্ছে ,সেখানে আমাদের দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী দিনের পর দিন হাস্য রসের কথা বলেই যাচ্ছেন । উন্নত দেশে যে যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাকে সেই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় । আমাদের দেশে হয় উল্টো । যে যত তেল মর্দন করতে পারে সে তত উপরে উঠতে পারে । নচিকেতার গানের লাইনের মত, আজকে যে কয়লা মন্ত্রী,কাল কে সে শিক্ষা । এক জন ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র যদি হয় কোন দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রী ,তবে সেই দেশের স্বাস্থ্য খাতের বারোটা বাজবে এটাই স্বাভাবিক । তার কথার সাথে ডাক্তার বা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মত মিলবে না এটাই স্বাভাবিক ঘটনা ।


 

আমাদের উচিত কারো উপর ভরসা না করে ,নিজেকে সাবধানে ও নিরাপদে রাখা । এটা  এমন এক মহামারী,এই রোগে আক্রান্ত হলে কোন চিকিৎসা পাওয়া যাবে এমন সম্ভাবনা এদেশের বেশির ভাগ লোকের ক্ষেত্রে খুবই কম । কেউ মারা গেলে নিকট আত্মীয় পর্যন্ত কেউ দেখতে যেতে চায় না ,সেখানে আমাদের দেশে যে কি হবে ,তা সময়েই বলে দেবে । এজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে । আমাদের সামনে একটা কঠিন সময় আসতেছে ।  ইতিমধ্যে বিশ্বের অন্যান্য দেশে যে হারে মানুষ মারা যাচ্ছে ,সে হারে আমাদের দেশে শুরু হলে আমরা লাশের মিছিল দেখব । 
দিন দিন করোনা নামক মহাপ্লাবন দ্রুত এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে । একটু ভুল হলে আর রক্ষা নেই । মহাপ্লাবন যখন আসবে কোন বাঁধ দিয়ে আটকানো কঠিন হয়ে যাবে । এখনো সময় আছে ,যা করার এখনোই করতে হবে । নিজে বাঁচতে হবে এবং অন্যকেও বাঁচাতে হবে । আমাদের উচিৎ সচেতনতা বৃদ্ধি করা । যে যার অবস্থান থেকে আসুন সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি । 

Post a Comment

0 Comments