বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী সনাক্ত হয় ৮ ই মার্চ,২০২০ ইং । মাদারীপুরের শিবচর থানাকে প্রথম লক ডাউন ঘোষণা করা হয় । দেশে সাধারন ছুটি ঘোষণা করা হয় ২৬ শে মার্চ থেকে ৪ঠা এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১০ দিন । প্রথমে সাধারন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল সরকারী এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠান গুলোকে । ২৫ শে মার্চ সন্ধ্যায় প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণা শোনার পর পোশাক শিল্প বন্ধ ঘোষণা করা হয় ।
৫০০০ কোটি টাকা ২% সার্ভিস চার্জ এ পোশাক শিল্পে দেওয়ার ঘোষণা শোনার পর পোশাক শিল্প মালিক সমিতি বিজিএমইএ কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় । ২৪ শে মার্চ থেকে লোকজন যে যার মত গ্রামের দিকে ছুটতে শুরু করেছিল ।
আমাদের গ্রামের একটা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সান এবং ডোমারের দেশ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন করোনা বিষয়ে জোর প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে ।
আমার একজন ছাত্র গোপাল মূখ্য ভূমিকা পালন করছে । তারা লিফলেট,মাস্ক বিতরন ও মাইকিং করা শুরু করেছে । দেশের অনেক জ্ঞানী,গুনী ও বিজ্ঞরজনেরা যখন করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে ধারণা করতে পারে নি ,আমাদের স্বেচ্ছা সেবকরা তখন থেকে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে । এলাকার অনেকেই তাদের এমন কাজের সমালোচনা করেছে । কেউ কেউ তাদের কাজ গুলোকে পাগলামী মনে করছে ।
২৫ শে মার্চ গোপালের বিকাশ একাউন্টে ১০০০ টাকা পাঠিয়ে দিলাম । ওরা আমাকে সংগঠন দুটির উপদেষ্টা করেছে । তারা পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছে মানুষকে সচেতন করার জন্য । কেউ কেউ তাদের বিরোধীতা শুরু করেছে । ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৬ টি পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরন করা হয়েছে । ২৭ তারিখে ২৭ টি পরিবারকে দেওয়া হয়েছে । চাল,ডাল,আলু,তেল ও সাবান বিতরন করা হচ্ছে দুস্থদের মাঝে ।
একটি ব্যতিক্রম ধর্মী স্বাধীনতা দিবস উদযাপন।
"ডোমার এডুকেশন স্টুডেন্ট হোস্ট"
আছে স্যারদের মতো মহৎ মানুষ, আছে আমার এই বন্ধু গুলোর মতো সহৃদয়বান বন্ধু,, যাদের এই অনুপ্রেরণাই আজ ২৬ মার্চে ২৬ টি অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী দিতে সক্ষম হলাম,
#কালকে_২৭_মার্চ_
তার্গেট_২৭টি_পরিবার ।।
#ধন্যবাদ_সেই_মানুষ গুলোকে_যাদের_
অর্থায়নে_আজ_আমরা_সক্ষম
তারিখ: ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস, ২০২০
বরাবর,
ফেসবুকের শুভাকাঙ্খী,
বিষয়: আমাদের সাথে থাকার জন্য বিশেষ অনুরোধ!
জনাব,
বিনীত নিবেদন এই যে, আপনি অবগত আছেন, করোনা ভাইরাসের কারনে সারা বিশ্বের মত আমাদের দেশও টাল-মাটাল।
তাই আমরা ডোমার উপজেলায় করোনা ভাইরাস সচেতনতা সহ গরীব দুস্থদের খাবার বিতরণ সহ কার্যক্রম করেছি, করছি এবং আপনাদের প্রচেষ্টায় চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে।
তাই আপনার কাছে কিছু আর্থিক সাহায্যের সাথে আমাদের পাশে থাকার অনুরোধ করা হল। যাতে করে আমাদের কার্যক্রম আমরা চালিয়ে যেতে পারি!
অনুরোধ!!
বি.দ্র: টাকা পাঠানোর আগে ও পরে প্লীজ ফোন বা SMS দেবেন।
@এখন পর্যন্ত আমাদের সফল কার্যক্রম সমূহ হল:
"
*২৬ মার্চ ২৬ দুস্থ-গরীব পরিবারকে খাবার ত্রান(চাল,ডাল,আলু ও তেল) বিতরণ।
*১০০ জনকে মাস্ক বিতরণ।
*১০০টি হাত ধোওয়া সাবান বিতরণ।
*পুরো ডোমার উপজেলায় দুটি ভ্যান মাইকে চারদিন ধরে করোনা সচেতনতার মাইকিং।
*করোনা সচেতনতার জন্য ১৫ হাজার লিফলেট বিতরণ।
ধন্যবাদ
বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় সংগঠনের খবর প্রকাশ করা হচ্ছে । কিছু লোক বাদে সবাই কাজের প্রশংসা করছে । এলাকার ধনী ও সম্পদশালী লোকদের এগিয়ে আসা উচিৎ এমন মহামারীর দিনে । দুঃখের বিষয় এলাকার ধনী লোকেরা তেমন ভাবে সাড়া দিচ্ছে না । দেশের এমন ক্রান্তি লগ্নে যে যার অবস্থান থেকে সাহায্য সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ । সারা বিশ্বে এক যোগে শুরু হয়েছে করোনার ভয়াল আক্রমন । অদৃশ্য এক ভাইরাসের ভয়ে সবাই ভীত ।
মানুষ সামাজিক জীব । মানুষ নিজেকে সৃষ্টির সেরা জীব মনে করে । সব কিছুকেই মানুষ নিজের বশীভূত করতে চায় । ক্ষমতার দাপটে ,সবাইকে শাসন করার জন্য একে অপরের সাথে মানুষ যুদ্ধে লিপ্ত হয় । এমন দিন আসবে কেউ হয়তো ভাবতেও পারে নি । আজ আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বড়ই অসহায় । তার এত ক্ষমতা করোনার কাছে তুচ্ছ । আমেরিকায় এখন করোনা রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি । দিন দিন সংখ্যা বাড়ছে । ট্রাম্প যেন চোখে সরিষা ফুল দেখছে । ক্লোরোকুইনাইন ঔষুদের জন্য ভারতের মত দেশকেও হুমকি দিতে ছাড়ে নি । ইতালি,স্পেইন ,ফ্রান্স সব খানেই
ভয়াবহ অবস্থা ।
দেশ বিদেশের অনেক সংস্থা ত্রান বিতরণ করছে । আমাদের দেশের সরকারও ত্রান বিতরণ শুরু করেছে । প্রতিনিয়ত ত্রানের চাল,ডাল চুরির ঘটনা দেখি গনমাধ্যমে । কেউ করোনার ভয়ে ভীত আর কেউ কেউ চুরি করার জন্য পাগল ।
কেউ কেউ শুধুমাত্র প্রচার পাওয়ার আশায় করোনার মত দূর্যোগকে ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করছে । যেটুকু ত্রান দিচ্ছে তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি সেলফি তুলে ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছে । কিছু কিছু সস্তা সাংবাদিক কিছু ব্যক্তির দালালি করছে । একটা মাস্ক দান করছে কয়েকজন মিলে । কেউ কেউ মাস্ক পরানোর সময় ক্যামেরার দিকে তাকাতে গিয়ে মাস্ক গ্রহীতার মুখে না দিয়ে চোখে পরিয়ে দিচ্ছে । দুই কেজি চাউল দেওয়ার সময় দেখা যায় আট দশটা হাত । একটা দশ টাকা দামের সাবান দেওয়ার সময় চার জন হাত দেয় । অনেক সময় বোঝাই যায় না যে কে ত্রান দিচ্ছে আর কে ত্রান নিচ্ছে ।
তপু কল দিয়ে বলল দাদা আরো কয়েক শ পরিবারে ত্রান দিতে হবে । এজন্য আরো কিছু করে টাকা তুলতে হবে । আমি বেতন পাই নি । পোশাক শিল্পের অবস্থা খারাপ । জানি না সামনে কেমন দিন অপেক্ষা করছে । তপুকে বললাম , যা পারি আবার পাঠিয়ে দেব । পরে গোপালকে কল দিয়ে রকেট নাম্বার নিলাম । আবার ৫০০ টাকা পাঠিয়ে দিলাম । দেশের এমন দিনে এত ছোট অ্যামাউন্ট হয়তো কিছুই না ,তারপরেও সবাই যদি যে যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসে তাহলে দেশে কেউ হয়তো অনাহারে থাকবে না ।
দেশের বড় বড় শিল্প মালিকেরা যদি এগিয়ে আসে, বড় চাকুরীজীবিরা যদি এগিয়ে আসে ,সমাজের নানা স্তরের বিত্তবানরা যদি আসে , নেতা বা জনপ্রতিনিধীরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে যত বড় দূর্যোগ বা মহামারী আসুক না কেন মোকাবেলা করা সম্ভব । দু'এক জন করে এগিয়ে আসছে । হয়তো ধীরে ধীরে সংখ্যাটা বাড়বে । বিপদের সময় যদি মানুষের পাশে দাঁড়ানো না যায় তাহলে দাঁড়াব কখন ? একজন প্রকৃত মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় বিপদের সময় । অনেক সময় অনেকেই বড় বড় লেকচার দেয় । মানুষের সামনে নিজেকে জাহির করে । নিজের প্রতিপত্তি জানান দেয় । তবে এক জন মানুষ কেমন তার প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় তার পাশের লোক জনের বিপদের সময় ।
পোশাক শিল্পের বেশির ভাগ মালিক নিজে তো দেশের জন্য এখন পর্যন্ত তেমন কিছু দিল না উল্টো সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নেওয়ার জন্য নানা টালবাহানা করেছে । অনেক কোম্পানী শ্রমিক ছাঁটাই শুরু করেছে । কেউ কেউ বেতন দিয়েছে । আবার কেউ এখন পর্যন্ত বেতন দেয় নি । শ্রমিক কর্মচারীরা কেমন করে দিন যাপন করছে সেটা ভাববার সময় তাদের নেই । অথচ শ্রমিক কর্মচারীদের জন্যই আজ তারা এত টাকার মালিক । কে বোঝে কার কষ্ট ।
আমাদের এলাকার ছেলেরা ক্ষুদ্র সামর্থে যা যা করলো এবং করছে তা ইতিহাস হয়ে থাকবে । কোন শব্দ দিয়ে সে কাজের প্রশংসা করা যাবে না । ঢাকা,নারায়ন গঞ্জ বা গাজীপুর থেকে কেউ বাড়িতে স্বেচ্ছ সেবকেরা সেই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইন করতে বলছে । বাজারে যেন কেউ অযথা ভীড় না করে সেই ব্যাপারে জনগনকে বোঝানো হচ্ছে । বাজারে ,বাড়িতে জীবাণুনাশক ছিটানো হচ্ছে । বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সামাজিক দূরত্ব কি বোঝানো হচ্ছে । কিভাবে হাত ধুতে হবে ,কতক্ষণ ধরে হাত ধুতে হবে তা স্বেচ্ছা সেবকেরা সুন্দর ভাবে বোঝাচ্ছে
।
।
আমি দেখলাম,ডোমার থানার মধ্যে বোড়াগাড়ি ইউনিয়ন বিশেষ করে নয়ানী বাগডোকরা গ্রামে করোনার বিষয়ে যে ভাবে প্রচার প্রচারণা হচ্ছে অন্য কোথাও এমন করে তৎপরতা চালানো হচ্ছে না । পুরো ডোমার থানায় আমাদের স্বেচ্ছা সেবকেরা দিন রাত প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে । আমরা যারা উপদেষ্টা তাদের কাজের জন্য পরামর্শ দিয়ে সহযোগীতা করছি । সব সময় তাদের উৎসাহ ,প্রেরণা দিচ্ছি । প্রথম দিকে যারা আমাদের কাজের সমালোচনা করেছিল এখন তারা বুঝতে পারছে আমাদের স্বেচ্ছা সেবকেরা কত দূরদর্শী । স্বেচ্ছা সেবকদের এ ঋন কোন দিন ভোলার মত নয় । তাদের প্রচার প্রচারনার জন্য এলাকার মানুষ এতটুকু উপকৃত হয়ে থাকলে আমরা ধন্য । দেশের এমন ক্রান্তি লগ্নে আমাদের এতটুকু শ্রম কাজে লাগাতে পেরে আমরা সার্থক । আমাদের ইচ্ছে আছে কিন্তু সামর্থ খুবই ক্ষুদ্র । এ ক্ষুদ্র সামর্থ দিয়েই আমাদের দেশ ও দশের সেবায় এগিয়ে যেতে হবে ।



0 Comments