২৬.০৪.২০২০
গত মাসের নানা রকম নাটকীয় ঘটনার পর পোশাক শিল্প বন্ধ ঘোষণা করতে বাধ্য হয় । পরে ধাপে ধাপে বৃদ্ধি পেয়ে তা ২৫ শে এপ্রিল পর্যন্ত গড়ায় । এরপর সরকার আবারো ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি করে ৫ই মে পর্যন্ত । ওদিকে পোশাক মালিক সংগঠন বিজিএমইএ আবারও শুরু করেছে নতুন নাটক ।
একবার ঘোষণা দিল ২৬ শে এপ্রিল পোশাক শিল্প চালু হবে । তারপর বলছে ,খোলার ব্যাপারে তারা কোন সিদ্ধান্ত দেয় নি । ওদিকে সরকার বলছে কঠোর ভাবে লক ডাউন পালন করা হবে । যদিও এখন চলছে নাম মাত্র লক ডাউন । যানবাহন বন্ধ । শ্রমিক কর্মচারী যারা বাড়িতে গেছে তারা পড়েছে মহাবিপদে । ওদিকে বলা হচ্ছে যারা গ্রামে গেছে তাদের যেন এখন নিয়ে আসা না হয় । ওদেরকে যেন ছাঁটাই করা না হয় । যারা কারখানার আশে পাশে আছে ,তাদের দিয়েই যেন কারখানা চালু রাখা হয় । ধাপে ধাপে যেন শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানো হয় ।
একবার ঘোষণা দিল ২৬ শে এপ্রিল পোশাক শিল্প চালু হবে । তারপর বলছে ,খোলার ব্যাপারে তারা কোন সিদ্ধান্ত দেয় নি । ওদিকে সরকার বলছে কঠোর ভাবে লক ডাউন পালন করা হবে । যদিও এখন চলছে নাম মাত্র লক ডাউন । যানবাহন বন্ধ । শ্রমিক কর্মচারী যারা বাড়িতে গেছে তারা পড়েছে মহাবিপদে । ওদিকে বলা হচ্ছে যারা গ্রামে গেছে তাদের যেন এখন নিয়ে আসা না হয় । ওদেরকে যেন ছাঁটাই করা না হয় । যারা কারখানার আশে পাশে আছে ,তাদের দিয়েই যেন কারখানা চালু রাখা হয় । ধাপে ধাপে যেন শ্রমিকের সংখ্যা বাড়ানো হয় ।
মানুষ কেমন করে কথা নড়চড় করে তা বুঝে উঠতে পারি না ।
এতদিন ভাবতাম মানুষের ধন সম্পদ হলে মন বড় হয় । মানুষ মানুষের উপকার করে । এখন দেখছি তার উল্টো । কিছু মানুষ শত চেষ্ঠা করেও মানুষ হয়ে উঠতে পারে না । তাদের সম্পদ বৃদ্ধির সাথে সাথে তাদের লোভ বৃদ্ধি পায় । তারা লোভী মানুষে পরিণত হয় । তারা মানুষকে ঠকানোর নতুন নতুন কৌশল বের করে । তেমনি দেখতেছি পোশাক শিল্পের কিছু মালিককে । রুবানা হককে আগে খুবই ভাল মনে হত । করোনা এসে দেখিয়ে দিল তারা সবাই নতুন মোড়কে পুরাতন মদ মাত্র ।
করোনা ভাইরাস এসে মানুষের মুখোশ খুলে দিল । করোনা এসে প্রতিদিন নিত্য নতুন ঘটনার জন্ম দিচ্ছে । কে আপন আর কে পর তা দেখিয়ে দিচ্ছে । কে সৎ আর কে চোর ধরিয়ে দিচ্ছে । আগে ভাবতাম পোশাক শিল্পে জব করি প্রায় আট বছর ধরে ,সেজন্য মনে হয় চাকুরির ভিত্তিটা একটু শক্ত । এখন দেখছি পোশাক কোম্পানীর বেশির ভাগ মালিক মানুষ নামের নামধারী লোভী অমানুষ । তারা স্বার্থ ছাড়া কিছুই বোঝে না । কি ভাবে শ্রমিক ,কর্মচারীদের ঠকানো যায় সেই ধান্ধায় ব্যস্ত । শ্রমিক,কর্মচারীদের করোনার মুখে ঠেলে দিচ্ছে অমানবিক ভাবে । যেখানে সারা বিশ্বের মানুষ জীবন বাঁচানোর জন্য ঘরের মধ্যে অবস্থান করতে বলছে ,সে সময় আমাদের দেশের কারখানা মালিকরা জীবন নিয়ে জুয়া খেলা শুরু করছে । এ মাসের ৪ তারিখে লোকজন কে পথে বের করে নিয়ে এসে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে । এবার যখন ৫ তারিখ পর্যন্ত আবারো সাধারন ছুটি ঘোষণা করলো সরকার ,তখন মালিক সংগঠন আবারো আগের মত ছয়,নয় শুরু করে দিয়েছে ।
কখনো বলছে ২৬ তারিখ থেকে কারখানা খুলবে ,কখনো বলছে আমরা কারখানা খোলার নির্দেশ দেই নি । আবার কখনো বলছে এলাকা ভিত্তিক কারখানা খুলবে । তারা নিজেদের কে কি মনে করছে ওরাই জানে । একজন মানুষের কথা তো এভাবে বার বার বদলে যেতে পারে না । পোশাক শিল্পকে মানুষ আগে তেমন কেউ পছন্দ করতো না । এখন বুঝলাম পছন্দ না করার কারন কি ।
প্রথম দিকে অর্ডার বাতিলের কাহিনী করে সরকারের কাছ থেকে ৫০০০ কোটি টাকার প্রনোদনা প্যাকেজ নিল । তাদের কথা ছিল টাকাটা তাদের একাউন্টে নেবে । বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে তারা শ্রমিক,কর্মচারীদের একাউন্টে সরাসরি টাকা দেবে । কত কত নিচ,কত স্বার্থপর হতে পারে করোনা না আসলে হয় তো জানাই হতো না । করোনা এসে অনেক নামধারী লোকের মুখোশ খুলে দিয়েছে । যারা এতদিন মুখোশ পরে ভাল লোকের অভিনয় করেছিল ,এখন তাদের আসল চেহারা মানুষ দেখতে পেয়েছে ।
বহু বছর আগেই সেক্সপিয়ার বলে গিয়েছিলেন প্রতিটা মানুষ হল অভিনেতা করোনা এসে তা ভালভাবে বুঝিয়ে দিল । পোশাক শিল্পের মালিক সংগঠনের নেতা নেত্রীরা এবার যা অভিনয় দেখাচ্ছে তা দেখে জনগন পুরাই অবাক । এরা এত নগ্ন ভাবে কিভাবে অভিনয় করে ? শ্রমিকের ঘাম ঝরানো টাকায় আজ তারা এত উপরে উঠেছে ,সে কথা গুলো আজ তারা ভুলেই গেছে । তারা এতই স্বার্থপর হয়ে গেছে ,কে কি বলল সেটা দেখার বা শোনার মত চোখ ,কান তাদের নেই ।
ওদিকে সরকার শুধু মাত্র সরকারী ও বেসরকারী চাকুরীজীবিদের নিয়েই ব্যস্ত । যে খাত থেকে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয় ,সেই খাতের শ্রমিক,কর্মচারীদের নিয়ে সরকারের তেমন মাথা ব্যথা নেই । শ্রমিকরা মরে গেলেও তাতে কার কি আসে যায় । শ্রমিকরা তো টাকা বানানোর মেশিন মাত্র । সরকার একবারের জন্যও ভাবলো না ,শ্রমিক ,কর্মচারীরা কারখানায় দায়িত্বপালন কালে করোনায় আক্রান্ত হলে বা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলে তাদের বা তাদের পরিবারের কি হবে । মালিক পক্ষকে বলতে পারতো সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ।নচিকেতার গানের মত অযোগ্য লোকগুলোকে বিভিন্ন মন্ত্রী পদে বসালে তারা আর কি করবে । ইংরেজির ছাত্র যদি হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রী ,ইতিহাসের ছাত্রী যদি যদি হয় কৃষি মন্ত্রী তবে দেশবাসীর কপাল তো পুরবেই ।
জীবিকার তাগিদে আমার মত যারা সবাই ছুটছি কর্মস্থলের দিকে । আমাদের কাছে জীবনের চেয়ে জীবিকার মূল্য অনেক বেশি । করোনার চেয়ে আমাদের বড় ভয় হল পেটের ক্ষুধাকে । জীবন চলে গেলে ক্ষুধা থাকবে না কিন্তু জীবিকা চলে গেলে ক্ষুধা মেটানো কঠিন । তাই যতক্ষণ জীবন আছে পেটের ক্ষুধা মেটানোর জন্য আমাদের ছুটতেই হবে । আমাদের কাছে করোনার ভয় দেখিয়ে লাভ নেই ।
অবশেষে ২৬ তারিখে পোশাক শিল্প খুললো । স্বাস্থ্য বিধির হাস্যকর নাটক দেখে তো হাসি থামে না ।
হ্যান্ডওয়াশ আর ডিটারজেন্ট মিশ্রিত জল দিয়ে চলছে হাত ধোয়ার কাজ ,থার্মাল স্কেনার দিয়ে তাপমাত্রা মাপার কাজ ,মুখে একটা সাধারন মাস্ক দিয়ে স্বাস্থ্য বিধির কাজ চলছে । মেইন গেট থেকে সিঁড়ি পর্যন্ত দাগকেটে সামাজিক দূরত্বের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে সেখানে ঢোকার সময় প্রায় সবাই গাদাগাদি করে ঢুকছে । বেশির ভাগ কারখানায় নেই প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও নার্স । সিকিউরিটি গার্ড পালন করছে নার্স এর দায়িত্ব ।
বিজিএমইএ এর নির্দেশ বেশির ভাগ কোম্পানী মানছে না । এলাকা ভিত্তিক কারখানা খোলার কথা বলা হলেও বেশির ভাগ কারখানা আজ ২৬ তারিখে খুলছে । মানুষ জন পায়ে হেটে,রিক্সা,অটোতে,ট্রাকে করে আসছে । যদিও বলা হয়েছিল যারা বাড়িতে গেছে ওদের এখন আসার জন্য চাপ দেওয়া যাবে না ,তথাপি মানুষ দলে দলে ছুটছে কর্ম স্থলের দিকে । এখানে জীবনের চেয়ে জীবিকার মূল্য অনেক বেশি ।
অফিসে গেলাম এক মাস পর । আগের সেই পরিচিত ডেস্কটা কেমন জানি অচেনা মনে হচ্ছে । আজ মনে হচ্ছে এই ডেস্কটার জন্য কতই না লড়াই করতে হবে অদৃশ্য করোনা নামক ভাইরাসের সাথে ।
লড়াইয়ে জিতে গেল আবার আগের মত করে ডেস্কটা দখলে আসবে আর হেরে গেলে পরপারে । জানি না এ লড়াইয়ে কে জিতবে,করোনা নাকি আমি ।
আজ জীবিকাকে বাঁচাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আবার কর্মস্থলে যোগ দিয়েছি । জীবিকা না থাকলে জীবন অর্থহীন হয়ে যাবে । আবার জীবন চলে গেলে জীবিকা দিয়ে কি করব । করোনা হয়তো কিছু দিন পর চলে যাবে ,তখন জীবিকা না থাকলে জীবন নির্বাহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে । জীবনের পরিকল্পনা গুলো এলোমেলো হয়ে যাবে ।
বাড়ি থেকে দাদা কল দিয়ে বলেছিল ,বেশি রিস্ক হয়ে গেলে চাকুরি বাদ দিয়ে বাড়িতে চলে আসো । কপালে যা আছে হবে । আমি বলেছিলাম যাব না । সবার যা হবে,আমারও তাই হবে । জব ছাড়লে পড়ে জব পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে । বিয়ে করি নি ,সামনে বিয়ের সময় অনেক সমস্যা হয়ে যাবে । চাকুরি না থাকলে পদে পদে বিপদে পড়তে হবে । তাছাড়া অনেক প্লান আছে ,সেগুলো পূর্ণতা পাবে না । চাকুরি হারানো যাবে না ,যে করেই হোক টিকে থাকতেই হবে । এসপার নয় ওসপার কথাটা বর্তমান প্রেক্ষাপটে যথার্থই বটে ।
একমাস পর অফিসে এসে ব্যস্ততা বেড়ে গেল ।
কিছু জমানো কাজ ছিল,সেগুলো করতে লাগলাম । ব্যস্ততা যেন ভুলিয়ে দিল করোনা ভাইরাসের ভয়কে । আমি স্বপ্ন দেখি ,মনের মধ্যে আশা রাখি,মে মাসের মধ্যেই হয়তো করোনাকে পরাজিত করতে পারব আমরা ।সেই পর্যন্ত টিকে থাকার জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যেতে হবে । আমি ঈশ্বরের উপর ভরসা করে লড়াইয়ের ময়দানে নেমেছি ,আমার বিশ্বাস জয় আমার নিশ্চিত ।
0 Comments