১২ ই মে থেকে ১৭ ই মে,২০২১ ইং
ঈদের ছুটি হল ১২ মে । প্রথমে তিন দিনের ছুটি দেওয়ার কথা ছিল । তারপর পাঁচ দিনের করলো । বাড়িতে যাওয়া জরুরী । এপ্রিল মাসের নয় তারিখে ববিকে বাাড়িতে রেখে এসেছি ,তারপর আর যাওয়া হয়নি । দেশে লক ডাউন চলছে । সব কিছু খুলে রেখে লক ডাউন । শুধু মাত্র স্কুল কলেজ আর গনপরিবহন বন্ধ । প্রথমে বাড়িতে যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও পরে সরকারের উল্টা পাল্টা সিদ্ধান্তের জন্য দোটানায় পড়ে গেলাম । প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করতে গিয়ে দেখি আপডাউন খরচ হবে প্রায় ছয় হাজার টাকার মত । এত টাকা ব্যয় করা আমার জন্য অনেক বেশি । এমনিতে দেড় হাজার টাকায় সুন্দর ভাবে বাড়িতে গিয়ে ঘুরে আসা যায় ।
বিশেষ ছুটির সময় শুরু হয় অনিয়ম । এবার ছুটির সাথে চলছে লক ডাউন ।
কি করব কি করব করতে করতে মন মেজাজ খারাপ । এক পর্যায়ে বাড়িতে বলে দিয়েছি ,বাড়িতে আর যাচ্ছি না । মন খারাপ হলেও কিছুই করার নেই ।
ছুটি হল অফিস । উশিনর বলল ,কাকু একটা রিক্স নিয়েই দেখব নাকি । সব কিছু নিয়ে বের হয়ে যাই । গাড়ি পেলে চলে যাব ,আর না পেলে ঘুরে আসব । ওদিকে অফিসের অনেকেই বলছে একটি রিক্স নিয়েই দেখেন ।
দুপুর তিনটার দিকে আমি,উশিনর,সুজন আর মধু বের হয়ে পড়লাম ।
বের হলাম এক প্রকার অনিশ্চিতের পথে । মাওনা থেকে একশ বিশ টাকা করে সিএনজিতে কালিয়াকৈর এ আসলাম । সেখানে হাইওয়েতে দাঁড়িয়ে থেকে রংপুর পর্যন্ত ছয়শত টাকা জনপ্রতি ভাড়ায় উঠে পড়লাম ।
তারপর বাড়িতে জানিয়ে দিলাম আমি আসছি । কিছুদুর আসার পর গাড়ির চাকা পাংচার হয়ে গেল । এরপর আবার রওনা দিলাম । আমরা বসেছি একদম পিছনের সিটে । যমুনা সেতু পর্যন্ত ভাল ভাবেই আসলাম । এরপর শুরু হল যানজট । রংপুরে পৌছিলাম সকাল সাতটায় ।
এর পর ডিমলার একটা বাসে চেপে ভাদুর দরগা । ভাড়া নিল একশত টাকা করে । সেখান থেকে অটোতে করে ডোমারে,ভাড়া চল্লিশ টাকা । নয়টার দিকে ডোমারে আসলাম ।
দশটার দিকে বাড়িতে । ডোমার থেকে নিমোজ খানার ভাড়া দশটাকা ,কিন্তু ঈদের জন্য ভ্যান নিল বিশ টাকা করে । একপ্রকার যুদ্ধ করেই বাড়িতে আসলাম । একেই বলে নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা । জানি না যাওয়ার দিনে কি হবে ।
বাড়িতে এসে ববিকে আমাদের বাড়িতে আসতে বললাম ।
কেননা ,আমার সান্নিধ্য তার বড় বেশি দরকার । সে বিকালে আসবে । গল্প করতে করতে একটার দিকে ভাত খেলাম । ভেবেছি খেয়ে দেয়ে একটু ঘুমাব ,কিন্তু আর ঘুমানো হল না ।
এর সাথে ,ওর সাথে গল্প করতে লাগলাম ,বিশেষ করে বাড়ির সবার সাথে গল্প করছি ।
ববির ব্যাপারে কথা হচ্ছে ।
বিকালে ববি এলো । এক মাসেরও বেশি সময় পর ববিকে দেখলাম । মনের মধ্যে কেমন যেন একটা অনুভূতি হল । সেই ববিকে এই ববির মাঝে খুঁজতে লাগলাম ।
কথা বলে দেখলাম ,এখনো সে আগের মত হয় নি ।চেহারাটা কেন জানি মলিন হয়ে গেছে,মুখটা শুকনো দেখাচ্ছে,গায়ের রংটা একটু খারাপ হয়ে গেছে । অথচ আমাদের বাড়ি থেকে যাওয়ার দিনেও কত সুন্দর ছিল সে । বাবার বাড়িতে থাকার পরেও কেন এরকম হয়েছে বুঝতে পারছি না । হয়তো নব্বই ভাগ পর্যন্ত হয়ে গেছে ।হঠাৎ করে মন খারাপ করছে । সন্দেহ করছে ,কেউ কিছু তাকে নিয়ে বলছে কিনা । অল্পতেই কাঁন্না করছে । এটাকে নাকি সিজোফোনিয়া বলে ডাক্তারী ভাষায় । সামনে পনের তারিখে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তারিখে রয়েছে । তাকে নিয়ে যেতে হবে ।
এখন আমার প্রধান কাজ হল ববিকে সঙ্গ দেওয়া । যে কয়েকদিন থাকব ,ববিকে বেশি বেশি সঙ্গ দেব । এজন্য বাজারে আড্ডা দেওয়ার জন্য যাচ্ছি না ।
১৪ ই মে ঈদ হল । মোবাইলে অনেকের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় হল । চারিদিকে ধান কাটা চলছে । আমি আশে পাশের বাড়ির লোকজনদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি ।
পনের তারিখে আমি,বকুলদা,ভবেন কাকু আর সুশীল ভাতিজা সমবায় সমিতির কাজে সময় দিলাম । নিমোজ খানা বাজারে চা খেয়ে সকালেই বাড়িতে চলে আসলাম । পনের তারিখে ডাক্তার বসবে না, বসবে ১৭ তারিখে ।
আমি আবার সতের তারিখে সকালেই রওনা দেব শ্রীপুরের উদ্দেশ্যে । আমার ইচ্ছে ছিল ববিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব ,কিন্তু সেটা বুঝি আর সম্ভব হবে না ।
ওদিকে লক ডাউন এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে । এবার নাকি কঠোর লক ডাউন হবে । কিযে একটা অবস্থা চলছে । একদিকে লক ডাউন ,করোনা, অন্যদিকে ববি অসুস্থ । কঠিন একটা সময় পার করছি ।
১৬ তারিখে ভাতিজা সুপ্রিয়কে নিয়ে ডোমার বাজারে গেলাম ,ববির ওষুধ কেনার জন্য । তারপর নিমোজখানায় এসে চুল,দাঁড়ি কাটানোর পর বাড়িতে চলে আসলাম । দেখতে দেখতে ছুটি ফুরিয়ে এলো । অনেক কোম্পানী আট দশ দিন ছুটি দিয়েছে । আমাদের কোম্পানী দিয়েছে মাত্র পাঁচ দিনের । কি আর করার আছে । প্রাইভেট জব, কিছুই করার নেই । দেশে কত নিয়ম আছে ,কত আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ নেই ।
0 Comments