Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

আমার জীব‌নে বর্ষা ,পার্ট- ২

যখন স‌বে প্রাইমারী স্কু‌লে প‌ড়ি ,তখনকার দি‌নের বর্ষার কথা লিখব ।  যে‌দিন সকা‌লে উ‌ঠে দে‌খি বৃ‌ষ্টি পড়া শুরু হ‌য়ে‌ছে বা বৃ‌ষ্টি হ‌বে হ‌বে অবস্থা । আকাশ মে‌ঘে আচ্ছন্ন । আকাশটা ভা‌রি মেঘে গুমোট  হ‌য়ে থা‌কে । সে‌দিন স্কু‌লে যাওয়ার ঝা‌মেলা থা‌কে না । 
আর য‌দি স্কু‌লে যে‌তেই  হয় তখন আলাদা রকম মজা করতাম । 

স্কু‌লে  না  গে‌লে ভর্তা ভাত খে‌য়ে শু‌য়ে থাকতাম । শু‌য়ে শু‌য়ে নানা রকম কল্পনা করতাম আর কল্পনার রা‌জ্যে হা‌রি‌য়ে যেতাম । কখন বৈঠকখানা বা বাট ঘরায় আড্ডা জমাতাম । চৌপা‌তি ,চক্রচাল,পাইট ,লুডু সহ নানা রকম খেলা খেলতাম । 

কখ‌নো দল বে‌ধে পাট ক্ষে‌তের ম‌ধ্যের সরু আইল ধ‌রে অ‌নেক দূ‌রে এ‌গি‌য়ে যেতাম । কখ‌নো দেখতাম আই‌লের ধা‌রে কোন মাছ পাওয়া যায় কি না ।  পাট ক্ষে‌তে মাগুর,‌শিং আর টা‌কি মাছ বে‌শি পাওয়া যেত । তখনকার দি‌নে আমা‌দের এলাকায় প্রচুর পাট চাষ হত । 
আউশ না‌মে এক প্রকার ধান আবাদ হ‌তো । লোকাল ভা‌বে সেই  ধান‌কে  ভা‌দোই  ধান বলা হ‌তো । 

বর্ষার জ‌লে আউশ ক্ষেত জ‌লে যেত । পাট ক্ষে‌তে  বৃ‌ষ্টির ধারা অন্যরকম  দৃ‌শ্যের  অবতারনা কর‌তো । কেউ কেউ  ঝা‌পি  মাথায় দি‌য়ে  হাল  চাষ কর‌তো । বৃ‌ষ্টি  বে‌শি হ‌লে  কেউ আর  মা‌ঠে  থাক‌তো না । সবাই যে  যার  বা‌ড়ি‌তে  অবসর সময় কাটা‌তো । 

কখ‌নো কখ‌নো  স্কু‌লে যেতাম । গি‌য়ে দেখতাম  ছাত্র ছাত্রী বে‌শি  আস‌তো না । আমরা পড়ার চে‌য়ে বে‌শি গল্প আর খেলায় মন দিতাম । কলম দি‌য়ে টোকাটু‌কি  খেলতাম । নি‌র্দিষ্ট  সম‌য়ের চে‌য়ে  অ‌নেক আ‌গেই  স্কুল  ছু‌টি  হ‌তো । আমরা দল বেঁ‌ধে  বর্ষার জল মা‌ড়ি‌য়ে  বা‌ড়ি‌র  দি‌কে  রওনা দিতাম । 

বা‌ড়ি‌তে আসার সময় কোথায় ব্যাঙ ডা‌কে সেটা দেখতাম । কখ‌নো কদম ফুল গাছ থে‌কে  পাড়তাম । কার গা‌ছে কা‌লোজাম  ধ‌রে‌ছে  সেটা খুঁজতাম । 

বৃ‌ষ্টির  দি‌নে পড়া‌শোনার  বালাই  ছিল না ।‌ দল বেঁ‌ধে  বৃ‌ষ্টির  জ‌লে  ভিজতাম । বৃ‌ষ্টি  ক‌মে গে‌লে  কলা গাছ  দি‌য়ে  কলাগা‌ছের ভুড়া বা ভেলা  বানাতাম । ‌সেই  ভেলায় চ‌ড়ে কে‌টে যেত অ‌নেক সময় । 
বৃ‌ষ্টির দি‌নে কখ‌নো দল বেঁ‌ধে নদীর তী‌রে বেড়া‌তে যেতাম ।
স্কু‌লে যেতাম বড় প্লাস্টি‌কের বস্তা মাথায় দি‌য়ে,কখ‌নো মান কচুর পাতা বা কলা গা‌ছের পাতা মাথায় দি‌য়ে । তখন  কা‌ঠের হাতল ওয়ালা ছাতা দু একটা বা‌ড়ি‌তে থাক‌তো । সবার বা‌ড়ি‌তে আবার সেটাও থাক‌তো না । ছাতা‌তে আমা‌দের অ‌ধিকার ছিল সবার প‌রে । 
এখনকার মত এত বাহা‌রি টাই‌পের ছাতা সে সময় আমরা দে‌খি নি । আমার এ লেখা প‌ড়ে অ‌নে‌কেই  হয়‌তো গাল গল্প ম‌নে কর‌তে  পা‌ড়ে , কিন্ত‌ু  এটাই  ছিল বাস্তব ঘটনা । 

কখ‌নো কখ‌নো টানা ক‌য়েক দিন বৃ‌ষ্টি প‌ড়‌তো । তখন আমরা ক‌য়েক জন মি‌লে বৈঠক খানা বা বাট ঘরে নানা রকম খেলা খেলতাম । মা‌র্বেল,লই,লুডু,‌চৌপা‌তি,চক্রচাল,পাইট সহ নানা রকম খেলা খেলতাম । মে‌য়েরা খেল‌তো ফুল্লন,কুতকুত । কখ‌নো আমরা চোর পু‌লিশ খেলতাম । 

বড়রা বসা‌তো তাস বা হু‌কোর আড্ডা । নয়‌তো দিন ভর চল‌তো গ‌ল্পের আসর । সে সময় বি‌নোদন বল‌তে গল্পের আসরই  প্র‌সিদ্ধ ছিল । তখন রে‌ডিও ,‌টে‌লি‌ভিশন দূর্লভ ছিল । আমা‌দের পাড়ায় ক‌য়েক জ‌নের বা‌ড়িতে শুধু রে‌ডিও ছিল । আমা‌দের বা‌ড়ি‌তে একটা ওয়ান ব্যান্ড  ফি‌লিপস্  কোম্পা‌নির  রে‌ডিও ছিল । 
বড়‌দের হু‌কোর আড্ডাটা বর্ষার দি‌নে খুবই  ভাল চল‌তো । ফাঁ‌কে ফাঁ‌কে মু‌ড়ি চিড়া দি‌য়ে জলপা‌নের ব্যবস্থাও হ‌য়ে যেত । 
  সে সময় লোকজন খুবই  আ‌মো‌দে জীবন কাটা‌তো । এখনকার মত এত কর্ম ব্যস্ততা ছিল না । মানুষ খুবই  আন্ত‌রিক ছিল । 
এখন কর্ম ব্যস্ত জীব‌নে বর্ষার উপ‌স্থি‌তি টেরই  পাই  না । কখন বর্ষা আ‌সে ,কখন যায় অ‌নেক সময় বুঝ‌তেই  পা‌রি  না । 

সকাল হ‌লেই দে‌ৗড় দেই  অ‌ফি‌সের দি‌কে ।  বাসায় ফি‌রি  সন্ধ্যায় । অ‌ফি‌সে ব‌সে বৃ‌ষ্টির দৃশ্য দেখারও সু‌যোগ পাই না । গ্রা‌মে যাওয়া হয় বছ‌রে দুই  তিন বার ।  গ্রা‌মে কাটা‌নো বর্ষার সেই দিন গু‌লো‌কে  বড় মিস ক‌রি । ম‌নে ম‌নে উপল‌ব্ধি ক‌রি ফে‌লে আসা সেই  দিন গু‌লো‌কে । এখনকার দি‌নে আমা‌দের মত হয়‌তো আজকালকার বাচ্চারা বর্ষা‌কে এমন ভা‌বে অনুভব নাও কর‌তে পা‌রে । তারা তো  ব্যস্ত মোবাই‌লে । সময় কা‌টে ফেসবুক,‌মে‌সেঞ্জা‌রে । বাই‌রের প্রকৃ‌তি দেখার সময় কোথায় । তখনকার মত এত নির্মল ,‌নি‌র্ভেজাল  প্রকৃ‌তি দেখার ভাগ্য তা‌দের হয় কি না আমার জানা নেই । 

Post a Comment

0 Comments