উৎপাতঃ বাড়িতে যাওয়ার জন্য চন্দ্রায় টিকিট কাউন্টারে বসে আছি । আশ্বিনের তীব্র রৌদ্র আর প্রচন্ড গরমে অসহনীয় অবস্থা ।
মাওনা থেকে ভোগড়া বাইপাসে এসে টিকিট না পেয়ে একপ্রকার যুদ্ধ করে আজমেরী গাড়িতে উঠে চন্দ্রায় পৌঁছানোর পর একটা কোন রকমে টিকিট ম্যানেজ করলাম ।
দূর্গা পুজায় ঘর মুখী মানুষের ঢল নেমেছে । দেখে মনে মনে ভাবলাম কে বলে দেশে হিন্দু নেই । সবাই যে যার মত গ্রামের বাড়ির দিকে ছুটছে ।
সাড়ে ছয়টায় গাড়ি । আড়াই ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে । কাউন্টারে বসে আছি ।
শুরু হল কঠিন উৎপাত । ছোট ছেলে ,বাচ্চা মেয়ে ,আধবয়সী নারী , মধ্য বয়সী মহিলা ,বৃদ্ধ ,বৃদ্ধা নানা রকমের লোক আসছে ভিক্ষার জন্য । কেউবা আসছে চিকিৎসার টাকার জন্য, মেয়ের বিয়ে দেবে তার জন্য ।
আবার কেউ কেউ আসছে সৃষ্টিকর্তার ঘর নির্মাণের জন্য সহায়তা চাইতে ।
এমনিতে তীব্র গরমে ওষ্ঠাগত অবস্থা ,তার উপর এমন উৎপাত । কত জনকে আর সহায়তা করা যায় ? ক্ষুদ্র মানুষ আমি । ওদের জন্য কি ই বা করতে পারি । আজকাল তো আবার এক টাকা দুই টাকা কেউ নিতে চায় না ।
কমপক্ষে হলেও এক হাত অর্থাৎ পাঁচ টাকা দিতে হয় ।
যারা নিম্মবিত্ত শ্রেণীর ভিক্ষুক ,তারা হয়তো দুই টাকা গ্রহণ করে ,বাকিরা তো এমন ভাব দেখায় ,তখন মনে হয় ভিক্ষা দিতে গিয়ে বড় ধরনের কোন অপরাধই করে ফেললাম হয়তো ।
সবাইকে তো আর মাপ করেন কথাটি বলাও যায় না । যদি কেউ বলে বসে, মাপ করব না । তখন তো নতুন জঞ্জাল শুরু হবে ।
ওদের উৎপাতের জন্য একটু হাটাহাটি করলাম । চা,নাস্তা খেয়ে আবার কাউন্টারে এসে বসলাম । হায় ভগবান ! আবার শুরু হল উৎপাত । কয়েক মিনিট পর পর এসে বলে বাবা কিছু দান করো ।
মাথা নাড়িয়ে বোঝাতে চাই আমি দুঃখিত ।
আমি দাতা কর্ণ নই । আমি একজন সাধারণ মানুষ । আমার পক্ষে সবাইকে সহায়তা করা সম্ভব নয় ।
দেশ উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় স্থান পেতে চলেছে । মাথাপিছু আয় নাকি অনেক বৃদ্ধি হয়েছে আগের চেয়ে । জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে । তাহলে এমন চিত্র কেন দেখতে হয় আমাদের ?
প্রয়োজন আইন মানে না । ক্ষুধার জ্বালা নীতিকথা শোনে না ।
ভাবি, উন্নয়ন শুধু কাগজে কলমে নয় তো ?
বিভিন্ন স্থান ভিক্ষুক মুক্ত ঘোষণা করা হচ্ছে । কোথাও কোথাও নাকি ভিক্ষুক খুঁজেও পাওয়া যায় না ।
তাহলে আমার মত সাধারণ জনগন কেন একটু শান্তিতে টিকিট কাউন্টারে বসে থাকতে পারবে না ? এর উত্তর দেবে কে ?
0 Comments