ভাণ্ডি নাচ বা ভান্ডি খেলাঃ
'ভাণ্ডি' শব্দটি কামতাপুরী/ রাজবংশী ভাষার ব্যবহারিক শব্দ। ভাণ্ডি অর্থ ভালুক। আদিম টোটেম (কুলপ্রতীক) যুগের নিদর্শন এই ভাণ্ডি খেলা। ভারতের উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি, কোচবিহার জেলা এবং বাংলাদেশের নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও জেলায় ভাণ্ডি খেলা প্রচলিত।
উত্তরবঙ্গের অরণ্যসঙ্কুল অঞ্চলে একসময় মানুষ ভালুককেই পোষ মানিয়ে নাচিয়েছিলো। কালের বিবর্তনে ভালুক মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়। এখন মানুষই ভাণ্ডি সাজে। ভালুকের মতো অঙ্গভঙ্গি করে গান আর বাদ্যের তালে নাচে।
গানের কথার সঙ্গে মিল রেখে ভাণ্ডি অভিনয়ও করে। যেমন---
উত্তর থাকি আইল্ বরনা (বন্যা) ভাণ্ডিক ধরিবার
দোনও ভাণ্ডিয়ে যুক্তি করে খাইলোত সন্দেবার
খাইলোতে আছে ভাইরে ভেমরুলের ভাসা
ভেমরুল কামড়েয়া ভাণ্ডির গাওতে আসিল্ জ্বর
ককেয়া সকেয়া সন্দায় ভাণ্ডি আহেনা আড়ির ঘর।
ভাণ্ডির কেঁপে জ্বর আসে। ভাণ্ডি শুয়ে পড়ে। ভাণ্ডির মালিক ডাক্তারকে খবর দেয়। ডাক্তার এসে ভাণ্ডিকে সুস্থ করে। ভাণ্ডি গানের তালে আবার নাচে। আবার----
আহেনা আড়ির ঘর সন্দেয়া
সসেয়া পাড়ে নিন
চোপরাতি জোনাক জ্বলে
চোরে দ্যাছে সিং।
এ্যাথা নিগাইল্ ক্যাথা নিগাইল্
তার বাদে না কান্দে
রসেরও চিরণি নিগাইল্
উনিয়ে গুনিয়ে কান্দে।
আহেনা আড়ির বাড়ি থেকে চোর রসের চিরুনি নিয়ে গেছে বলে ভাণ্ডি ইনিয়ে বিনিয়ে কান্না শুরু করে। এভাবেই গান ও বাদ্যের তালে চলে ভাণ্ডির নাচ ও অভিনয়।
বিভিন্ন প্রকার ছড়া গানের মাধ্যমে ভান্ডি নাচাতে হয় । একটা বাঁশের লাঠির অপর প্রান্ত ফাঁটিয়ে এবরো থেবরো করে নিতে হয় যাতে লাঠি েদিয়ে মাটিতে আঘাত করার সময় একটু শব্দ করে ।
এ ছাড়া কাঁসর,তাল বা খোলও বাজানো হয় ।
পুরাতন পাটের বস্তা,ছেঁড়া চট ,কলাগাছের শুকনো পাতা দিয়ে ভান্ডির পোশাক তৈরি করা হয় । বশ ( পাকা লাউয়ের খোল ) দিয়ে ভান্ডির মুখোশ তৈরি করা হয় ।
সাধারণত শ্যামা পূজা বা দিপান্বিতা কালীপূজার পরের দিন থেকেই ভান্ডি খেলা শুরু হয় আর রাস পূর্ণিমা পর্যন্ত চলতে থাকে । ভান্ডি খেলা দেখার পর গৃহস্থ বধুরা চাউল বা টাকা দেয় ।
কালের বিবর্তনে ভান্ডি খেলা বা ভান্ডি নাচ হারিয়ে যেতে বসেছে ।
0 Comments