Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

‌রে‌ডিওর গল্প

২৪/১২/২০২১ ইং

‌আমার জ্ঞান হওয়ার পর থে‌কেই  দেখতাম বা‌ড়ি‌তে‌ ওয়ান ব্যা‌ন্ডের এক‌টি  ফি‌লিপস্  রে‌ডিও । শু‌নে‌ছিলাম আমার জ‌ন্মের আ‌গেই  না‌কি আমার বাবা সেই রে‌ডিও খানা কি‌নে‌ছি‌লেন । বা‌ড়ি‌র চা‌রিপা‌শে অ‌নেক তেজপাতার গাছ ছিল । তেজপাতা বি‌ক্রির টাকা দি‌য়ে না‌কি তখন কার দি‌নে সা‌ড়ে চারশ টাকা দি‌য়ে রে‌ডিওটা কি‌নে‌ছিল বাবা । 
‌সেটা ১৯৮৩-৮৪ সা‌লের কথা হ‌বে । সে সময় গ্রা‌মের দুই একটা বা‌ড়ি‌তে রে‌ডিও আর সাই‌কেল দেখা যেত । বি‌নোদন বল‌তে গ্রা‌মের পালা‌ বা পালা‌টিয়া‌ গান,যাত্রা,তুকখা,ক‌বি গান এসব ছিল আমা‌দের এলাকার প্রধান বি‌নোদন । সেই  সব ছিল নির্মল বি‌নোদন । কোন রকম বাহুল্যতা ছিল না । গ্রা‌মের সহজ সরল মানুষ সহজ সরল বি‌নোদ‌নে খু‌শি ছিল । 


নব্বই  দশ‌কের দি‌কের কথা । আ‌মি তখন প্রাইমারী স্কু‌লে প‌ড়ি । বগ‌লে বই খাতা নি‌য়ে,খা‌লি পা‌য়ে স্কু‌লে যেতাম । তখন কেউ স্যা‌ন্ডেল বা জুতা প‌ড়ে স্কু‌লে যেত না । যারা হাই স্কু‌লে পড়‌তো তারা শুধু স্যা‌ন্ডেল প‌ড়ে স্কু‌লে যেত । কাউ‌কে কাঁ‌ধে ক‌রে ব্যাগ নি‌য়ে যে‌তে দেখা যেত না । 

বা‌ড়ি‌তে রে‌ডিও থাক‌ায় প্রচুর গান,বাজনা,‌বি‌ভিন্ন রকম অনুষ্ঠান শুনতাম । র‌বি বার আর বুধবার সন্ধ্যায় সিলিগু‌ড়ি আর কলকাতা বেতা‌রে যাত্রা হ‌তো ।‌ সোমবার কলকাতা বেতা‌রে তরজা ক‌বির গান হ‌তো । মা‌সের শেষ মঙ্গল বার রংপুর বেতা‌রে পালাগান হ‌তো । ঠাকুরগাঁ  বেতা‌রে বিকা‌লের দি‌কে ভাওয়াইয়া  গান প্রচার হ‌তো । দুপু‌রের দি‌কে ঢাকা বেতা‌রে বিভিন্ন রকম সি‌নেমার বিজ্ঞাপণ প্রচার করা হ‌তো । 

গাজী মাযহারুল সহ বেশ কয়েক জন সি‌নেমার ধারা ভাষ্য দি‌তেন । আমরা বেতার কে বলতাম সেন্টার । যেমন ঢাকা ক সেন্টার, ঢাকা খ সেন্টার, রাজশাহী সেন্টার ,ইত্যা‌দি । 

প্র‌তি‌দিন রাত সা‌ড়ে সাতটায় ঢাকা ক সেন্টা‌রে প্রচা‌রিত হ‌তো সৈ‌নিক ভাই‌দের  জন্য  দূর্বার অনুষ্ঠান ।‌ এক এক‌দিন এক এক রকম গা‌ন দি‌য়ে সাজা‌নো হ‌তো দূর্বার  অনুষ্ঠান । 

‌নিশু‌তি অনুষ্ঠান,অনু‌রো‌ধের আসর চাওয়া পাওয়া সহ বি‌ভিন্ন রকম অনুষ্ঠান ছিল । বি‌ভিন্ন রকম ধারাবা‌হিক নাটকও প্রচার করা হ‌তো । মা‌নিক চা‌ন্দের কিসসা না‌মে এক‌টি নাট‌কের কথা আজও মনের ম‌ধ্যে গেঁ‌থে  র‌য়ে‌ছে । 


‌সে সময় সন্ধ্যা বেলা অ‌নে‌কেই  আস‌তো রে‌ডিওর অনুষ্ঠান শোনার জন্য । দে‌শের খবরাখবর শুনতাম রে‌ডিরও মাধ্য‌মে । রে‌ডিও ছাড়া তেমন কোন মাধ্যমই  ছিল না আমা‌দের এলাকায়  । 


বা‌ড়ি‌তে রে‌ডিও থাকার সুবা‌ধে  অ‌নেক কিছু জান‌তে পে‌রে‌ছি ,‌শিখ‌তে  পে‌রে‌ছি । বি‌ভিন্ন রকম তথ্য উপাত্ত জান‌তে পে‌রে‌ছি ছোট কা‌লেই  ।  কন্ঠ শু‌নেই  ব‌লে দি‌তে  পারতাম কোন শিল্পী গান গা‌চ্ছে । 
আ‌য়েশা সরকার,গঙ্গা চরণ বিশ্বা‌সের মত অ‌নেক শিল্পীর গান শুনতাম নিয়‌মিত । 
ক‌চি উ‌দ্দিন,কু‌টির মনসুর,ভূপ‌তি বর্ম‌নের গান শু‌নে অ‌নেক আনন্দ পেতাম । 

‌সে সময় রে‌ডিও পে‌য়েই  অ‌নেক খু‌শি ছিলাম । সবার বা‌ড়ি‌তে রে‌ডিও ছিল না । গ্রা‌মের ক‌য়েক‌টি বা‌ড়ি‌তে রে‌ডিও ছিল ,তার ম‌ধ্যে আমা‌দের বা‌ড়ি‌তে ছিল এক‌টি । 

এখন সময় অ‌নেক বদ‌লে গে‌ছে । যু‌গের অ‌নেক প‌রিবর্তন হ‌য়ে‌ছে । রে‌ডিওর কথা হয়‌তো অ‌নে‌কেই  জা‌নে না । নানা রকম যন্ত্রপা‌তি আ‌বিস্কার হ‌য়ে‌ছে । ইন্টার‌নেট,গুগল,‌ফেসবুক,ইউ‌টিউব,‌টিকটক,লাই‌কি,ইনস্ট্রাগ্রাম,টুইটার,‌হোয়‌াটসআপ এ‌সে‌ছে । 

‌কিন্তু আমা‌দের সম‌য়ে সেই  রে‌ডিও আমা‌দের যে নির্মল বি‌নোদন দি‌য়ে‌ছিল, এখনকার প্রজন্ম কি সেই  রকম  আনন্দ পা‌চ্ছে । মা‌ঝে মা‌ঝে নি‌জের ম‌নে নি‌জে‌কেই  প্রশ্ন ক‌রি ।

‌কেউ‌ ম‌নে রাখুক বা না রাখুক কিন্তু আজও আমার ম‌নের ম‌ধ্যে ছোট কা‌লের সেই  রে‌ডিওটার কথা সোনালী অক্ষ‌রে লিখা র‌য়ে‌ছে । এখনও ভা‌বি সেই  রে‌ডিওটার কথা । 

Post a Comment

0 Comments