ছোট বেলায় দেখতাম,দোল পূর্ণিমার রাতে পাড়ার ছেলেরা ন্যাড়ার ঘর পুড়তো । এটাকে আমাদের গ্রামের ভাষায় বলতো ভেড়ার ঘর ।
সেই ঘরের জন্য পাড়ার ছেলেরা বিভিন্ন বাড়িতে চুপি চুপি যেত । গিয়ে শুকনো বাঁশ,কঞ্চি, কাঠ এমন কি কারো কারো বাগানের বাঁশের বেঁড়াও নিয়ে যেত । যদিও সেটা ঠিক ছিল না ,তারা এমন কাজ করে আনন্দ পেতো ।
মা,কাকীমাদের দেখতাম ন্যাড়ার ঘর পোড়ানোর দিন শুকনো কাঠ,খড়ি , খড়ি রাখার ঘরে রাখতো । কেউ কেউ অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকতো ।
তার পরের দিন হতো দোল উৎসব । খাওয়া দাওয়া । আড্ডা । মানুষ জন কত আন্তরিক ছিল । আজকের মত এত ব্যস্ত ছিল না । এত যান্ত্রিক ছিল না । মানুষের চাহিদা ছিল কম,সুখ ও শান্তি ছিল অনেক বেশি । গোলা ভরা ধান,গোয়াল ভরা গরু,পুকুর ভরা মাছ । আহা! কি সুন্দরই না ছিল দিন গুলি ।
যাক সে কথা । পরের কথায় আসি । দোল উৎসবের পরের দিন এলাকার বিভিন্ন মন্দির থেকে ঠাকুর বের করে কয়েক জন মিলে দল বেঁধে বাড়ি বাড়ি ঘুরতো । সাথে থাকতো আবির, ঘড়ি,ঘন্টা ,শঙ্খ ।
বাড়িতে যখন ঠাকুর নিয়ে আসতো আমরা তখন ঠাকুর দেখতাম । আমরা বলতাম দোলের ঠাকুর এসেছে । নানা রঙের আবির দেওয়া হতো তালায় করে । তুলসী তলায় জমতো অনেক আবির । আবির মাখা মাখি হতো ।
সাড়া দিন বাড়িতে আসতো বিভিন্ন পাড়ার ঠাকুর । ছোট বেলায় আমরা ঘন্টার আওয়াজ শোনার সাথে সাথেই বাড়ির দিকে ছুটে আসতাম দোলের ঠাকুর দেখার জন্য ।
সেই দিন গুলোকে এখন বড্ড বেশি মিস করি । জীবনের অনেক গুলো দিন বাড়ির বাইরে বাইরে কাটিয়ে দিলাম । জানি না আরও কত বছর ,কত দিন বাড়ির বাইরে থাকতে হবে । কিন্তু সেই সময় গুলো আর কখনো ফিরে পাব না । ফিরে যাওয়া হবে না সেই ছোট্ট বেলার হারিয়ে যাওয়া স্মৃতিময় দিন গুলোতে ।
এখনো দোল উৎসব এলে মনে পড়ে ছোট বেলার দোলের ঠাকুর দেখার স্মৃতি গুলোকে । অন্তরের চক্ষু দিয়ে এখনো যেন দেখতে পাই দোলের ঠাকুর কে ।

0 Comments