Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

দো‌লের ঠাকুর

১৯.০৩.২০২২

ছোট বেলায় দেখতাম,‌দোল পূ‌র্ণিমার রা‌তে পাড়ার ছে‌লেরা ন্যাড়ার ঘর পুড়‌তো । এটা‌কে আমা‌দের গ্রা‌মের ভাষায় বল‌তো ভেড়ার ঘর । 
কীর্তন কর‌তে কর‌তে ছোট সেই  ঘ‌রে আগুন দিয়ে প্রদ‌ক্ষিণ কর‌তো । 

‌সেই  ঘ‌রের জন্য পাড়ার ছে‌লেরা বি‌ভিন্ন বা‌ড়ি‌তে চু‌পি চু‌পি যেত । গি‌য়ে শুক‌নো বাঁশ,ক‌ঞ্চি, কাঠ এমন কি কা‌রো কা‌রো বাগা‌নের বাঁ‌শের বেঁড়াও নি‌য়ে যেত । য‌দিও সেটা ঠিক ছিল না ,তারা এমন কাজ ক‌রে আনন্দ পে‌তো । 

মা,কাকীমা‌দের দেখতাম ন্যাড়ার ঘর পোড়া‌নোর দিন শুক‌নো ক‌াঠ,খ‌ড়ি , খ‌ড়ি রাখার ঘ‌রে রাখ‌তো । কেউ কেউ  অ‌নেক রাত পর্যন্ত জে‌গে থাক‌তো । 


তার প‌রের দিন হ‌তো দোল উৎসব । খাওয়া দাওয়া । আড্ডা । মানুষ জন কত আন্ত‌রিক ছিল । আজ‌কের মত এত ব্যস্ত ছিল না । এত যান্ত্রিক ছিল না । মানু‌ষের চা‌হিদা ছিল কম,সুখ ও শা‌ন্তি ছিল অ‌নেক বে‌শি । গোলা ভরা ধান,‌গোয়াল ভরা গরু,পুকুর ভরা মাছ । আহা! কি সুন্দরই  না ছিল দিন গু‌লি । 


যাক সে কথা । প‌রের কথায় আ‌সি । দোল উৎস‌বের প‌রের দিন এলাকার বি‌ভিন্ন ম‌ন্দির থে‌কে ঠাকুর বের ক‌রে ক‌য়েক জন মিলে দল বেঁ‌ধে বা‌ড়ি বা‌ড়ি ঘুর‌তো । সা‌থে থাক‌তো আ‌বির, ঘ‌ড়ি,ঘন্টা ,শঙ্খ । 

বা‌ড়ি‌তে যখন ঠাকুর নি‌য়ে আস‌তো আমরা তখন ঠাকুর দেখতাম । আমরা বলতাম দো‌লের ঠাকুর এ‌সে‌ছে ।  নানা রঙের আ‌বির দেওয়া হ‌তো তালায় ক‌রে । তুলসী তলায় জম‌তো অ‌নেক আ‌বির । আ‌বির মাখা মা‌খি হ‌তো । 

সাড়া দিন বা‌ড়ি‌তে আস‌তো বি‌ভিন্ন পাড়ার ঠাকুর । ছোট বেলায় আমরা ঘন্টার আওয়াজ শোনার সা‌থে সা‌থেই  বা‌ড়ির দি‌কে ছু‌টে আসতাম দো‌লের ঠাকুর দেখার জন্য । 


‌সেই  দিন গু‌লো‌কে এখন বড্ড বে‌শি মিস ক‌রি । জীব‌নের অ‌নেক গু‌লো দিন বা‌ড়ির বাই‌রে বাই‌রে কা‌টি‌য়ে দিলাম । জা‌নি না আরও কত বছর ,কত দিন বা‌ড়ির বাই‌রে থাক‌তে হ‌বে । কিন্তু সেই  সময় গু‌লো আর কখ‌নো ফি‌রে  পাব না । ফি‌রে যাওয়া হ‌বে না সেই ছোট্ট বেলার হা‌রি‌য়ে যাওয়া স্মৃ‌তিময় দিন গু‌লো‌তে । 


এখ‌নো দোল উৎসব এ‌লে ম‌নে প‌ড়ে ছোট বেলার দো‌লের ঠাকুর দেখার স্মৃ‌তি গু‌লো‌কে । অন্ত‌রের চক্ষু  দি‌য়ে  এখ‌নো  যেন দেখ‌তে  পাই  দো‌লের ঠাকুর কে ।

Post a Comment

0 Comments