Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

হিন্দুরাই হিন্দুদের বড় শত্রু

হিন্দুরাই হিন্দুদের বড় শত্রু
মানবসমাজের ইতিহাসে এমন অনেক জাতি-গোষ্ঠী আছে যারা বাইরের শত্রুর চেয়ে নিজেদের ভিতরের ভাঙনেই ধ্বংস হয়েছে। ভারতীয় সমাজের ক্ষেত্রেও এই সত্যটি স্পষ্ট—বিশেষত হিন্দু সমাজে। বহু যুগ ধরে হিন্দু সভ্যতা জ্ঞান, সহিষ্ণুতা ও ধর্মনিরপেক্ষ চিন্তায় সমৃদ্ধ হলেও, তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এসেছে নিজের ভেতর থেকেই। তাই আজ অনেকেই বলেন — “হিন্দুরাই হিন্দুদের বড় শত্রু।”

হিন্দু ধর্মের মূল বাণী হলো — “বসুধৈব কুটুম্বকম”, অর্থাৎ সমগ্র পৃথিবীই এক পরিবার। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, হিন্দু সমাজের ভেতরেই বিভাজন, জাতপাত, অহংকার ও অসহিষ্ণুতা দিন দিন বেড়েছে। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শূদ্র — এই কৃত্রিম ব্যবধান শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সমাজকে দুর্বল করেছে। এক হিন্দু অন্য হিন্দুর সঙ্গে বসতে চায় না, খেতে চায় না, মন্দিরে প্রবেশ করতে দেয় না — এ কেমন ধর্ম, যা নিজেকেই বিভক্ত করে রাখে?

ইতিহাস সাক্ষী, বহিরাগত আক্রমণকারীরা যতবারই ভারতবর্ষে এসেছে, হিন্দু সমাজ তখন ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। কারণ তাদের ভিতরেই ছিল ঈর্ষা, দ্বন্দ্ব ও স্বার্থের লড়াই। রাজারা নিজেদের রাজ্য রক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থেকেছেন, জাতপাতের অহংকারে মত্ত থেকেছেন—ফলে একতার শক্তি হারিয়েছে সমাজ।

আজও সেই মানসিকতার পরিবর্তন পুরোপুরি ঘটেনি। আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও অনেক হিন্দু সংকীর্ণ গোঁড়ামির শৃঙ্খল ছাড়তে পারেনি। কেউ আবার নিজেদের স্বার্থে ধর্মকে ব্যবহার করে, বিভাজন সৃষ্টি করে। এক হিন্দু অন্য হিন্দুর বিরুদ্ধে কথা বলে, রাজনীতি ও সাম্প্রদায়িক স্বার্থে নিজ জাতিকেই আঘাত করে। এই আত্মবিনাশী মনোভাবই হিন্দু সমাজের সবচেয়ে বড় বিপদ।

যদি সত্যিই হিন্দু সমাজকে শক্তিশালী করতে হয়, তবে প্রথমে দরকার আত্মসমালোচনা। নিজেদের ভুল চিনতে হবে, পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহানুভূতির মনোভাব গড়ে তুলতে হবে। ধর্মের আসল উদ্দেশ্য হলো মানবতা ও ন্যায়—না যে বিভাজন।

হিন্দুরা যদি নিজেদের ছোট ছোট স্বার্থ, অহংকার ও গোঁড়ামি পরিত্যাগ করে একতার পথে এগিয়ে আসে, তবেই তারা প্রকৃত অর্থে নিজের ধর্ম ও সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে পারবে। অন্যথায় ইতিহাস আবারও প্রমাণ করবে — “হিন্দুরাই হিন্দুদের সবচেয়ে বড় শত্রু।”


Post a Comment

0 Comments