স্বার্থ ত্যাগেই জীবনের সার্থকতা
কার্তিক মাস—হেমন্তের মৃদু পরশে যখন প্রকৃতি সাজে নূতন রূপে, তখন সকালের বাতাসে একধরনের নির্মল শীতলতা ভেসে বেড়ায়। সকালে বিছানা ছেড়ে উঠতে মন চায় না, কম্বলের উষ্ণতা যেন আপন করে রাখে আমাদের। কিন্তু যদি কেউ সত্যিই সকালের নির্মল প্রকৃতি, শিশিরভেজা ঘাস, কিংবা সোনালী সূর্যের কোমল কিরণ উপভোগ করতে চায়, তবে তাকে বিছানার আরাম ত্যাগ করতেই হবে।
এই বাস্তব দৃশ্য আসলে জীবনেরই এক গভীর শিক্ষা দেয়—ভাল কিছু পেতে হলে কিছু না কিছু ত্যাগ করতেই হয়। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই সত্যটি প্রতিফলিত হয়। যেমন, একজন ছাত্র যদি ভবিষ্যতে সফল হতে চায়, তাকে রাত জেগে পরিশ্রম করতে হয়, বন্ধুদের আড্ডা বা অবসরের অনেক সুখসুবিধা ত্যাগ করতে হয়। একজন কৃষক ফসল ফলাতে নিজের আরামের সময় বিসর্জন দেয়—রোদ, বৃষ্টি, ঠান্ডা উপেক্ষা করে সে মাঠে কাজ করে, কারণ সে জানে ত্যাগ ছাড়া ফসল ফলানো সম্ভব নয়।
স্বার্থত্যাগের মধ্য দিয়েই জীবনের আসল আনন্দ ও সার্থকতা আসে। ছোট ছোট আরাম, ক্ষণস্থায়ী সুখ হয়তো আমাদের মুহূর্তের স্বস্তি দেয়, কিন্তু বৃহত্তর লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে হলে সেগুলোকে পিছনে ফেলতে হয়। যারা এই ত্যাগের শিক্ষা বুঝতে পারে, তারাই জীবনে প্রকৃত সফলতা ও সন্তুষ্টি অর্জন করে।
প্রকৃতির প্রতিটি পরিবর্তন যেন এই ত্যাগের দর্শনই মনে করিয়ে দেয়। যেমন গাছ তার পুরনো পাতাগুলো ঝরিয়ে নতুন পাতার জন্ম দেয়, তেমনি আমরাও জীবনের পুরনো স্বাচ্ছন্দ্য, অলসতা ও ভয়ের গণ্ডি ভেঙে এগিয়ে যেতে পারলেই নতুন আলোয় আলোকিত হতে পারি।
সুতরাং বলা যায়, জীবনের প্রতিটি উন্নতির মূলমন্ত্র হলো স্বার্থত্যাগ। ক্ষুদ্র স্বার্থ ত্যাগ করেই আমরা বৃহত্তর আনন্দ, সাফল্য ও সৌন্দর্যের অধিকারী হতে পারি—যেমন কম্বলের উষ্ণতা ত্যাগ করেই উপভোগ করা যায় সকালের নির্মল প্রকৃতি।

0 Comments