Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

অহংকার, অজ্ঞতা ও জীবনের বাস্তবতা

অহংকার, অজ্ঞতা ও জীবনের বাস্তবতা

মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী। জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও উপলব্ধির মধ্য দিয়েই তার আত্মিক ও নৈতিক উন্নতি ঘটে। কিন্তু আমরা সাধারণ মানুষ; আমাদের জ্ঞান সীমিত, অভিজ্ঞতাও সীমাবদ্ধ। সেই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই অনেক সময় আমাদের মনে অহংকার, বিদ্বেষ ও আত্মপ্রবঞ্চনা জন্ম নেয়। ফলস্বরূপ আমরা ভাল–মন্দ বিচার করতে ব্যর্থ হই এবং বাস্তবতার ধারাবাহিক প্রবাহকে ভুলে গিয়ে নিজস্ব কল্পনার দুনিয়ায় আটকে পড়ি।
মানুষ স্বভাবতই সুখ-সমৃদ্ধি ও সুসময়ের প্রতি আসক্ত। যখন জীবনে স্বস্তি আসে, সমস্যা দূর হয়, তখন আমরা মনে করি এ অবস্থাই যেন স্থায়ী হয়ে থাকবে। সুখের সময় নিজের শক্তি আর সামর্থ্যকেই বড় করে দেখি; জীবন যে বহমান, সময় যে পরিবর্তনশীল—এই সত্যটি আমাদের মন থেকে দূরে সরে যায়। বিপদ দূর হয়ে গেলে অনেকেই ধারণা করে, আর কোনো সংকট তাদের সামনে আসবে না। এই আত্মতুষ্ট অবস্থাই মূলত অহংকারকে পুষ্ট করে।

অহংকার মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে। এতে মানুষ নিজের ভুল বুঝতে পারে না, অন্যকে তুচ্ছ করে, সামান্য সাফল্যকেও মহত্ত্বের আচ্ছাদনে ঢেকে ফেলে। যে মন বিনয় ধারণ করতে পারে না, সে মন কখনোই সত্য উপলব্ধি করতে সক্ষম হয় না। অহংকারের কারণে মানুষ অন্যের মতামতকে অবজ্ঞা করে, সমালোচনার মূল্য বুঝতে পারে না এবং ধীরে ধীরে বিচ্ছিন্নতা ও ভুল সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত হয়।

জীবনের পথ কখনো একরৈখিক নয়। কথায় আছে, “এক মাঘে শীত যায় না।” অর্থাৎ একবার ভালো সময় এলেই তার ধারাবাহিকতা অনন্তকাল থাকবে—এমন ভাবা অবাস্তব। জীবন কখনো ভালো, কখনো মন্দ; কখনো সহজ, কখনো কঠিন। সময়ের এই চক্রই মানুষকে সচেতন, ধৈর্যশীল ও বিনয়ী হতে শেখায়। বিপদ-আপদ মানুষকে সতর্ক করে, নিজের সীমাবদ্ধতা বুঝিয়ে দেয় এবং প্রকৃত শক্তি অর্জনের পথ দেখায়।

অতএব, মানুষের উচিত নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করা, বিনয়কে ধারণ করা এবং অহংকার থেকে দূরে থাকা। অন্যকে সম্মান করা, নিজের ভুল থেকে শিখতে আগ্রহী হওয়া এবং জীবনের পরিবর্তনশীলতা উপলব্ধি করাই একজন সচেতন ও পরিণত মানুষের লক্ষণ। কারণ, যে মানুষ সত্য উপলব্ধি করে, সে জানে—জীবন কোনো স্থির জল নয়; জীবন বহমান, আর সেই প্রবাহেই রয়েছে উন্নতির আসল সুযোগ।

Post a Comment

0 Comments