Ticker

6/recent/ticker-posts

Header Ads Widget

জানা অজানা ১( সনাতন ধর্ম অনুসা‌রে ঈশ্বর এর সহজ বর্ণনা)

সনাতন ধর্মে “ঈশ্বর” বলতে একমাত্র সর্বব্যাপী, সর্বশক্তিমান, সর্বজ্ঞ, নিরাকার-নির্গুণ পরম সত্য—এই সর্বোচ্চ সত্ত্বাকেই বোঝানো হয়। সনাতন ধর্মে ঈশ্বর ধারণা অত্যন্ত গভীর, দর্শনসমৃদ্ধ এবং বহুস্তরীয়। নিচে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা হলো—
সনাতন ধর্ম অনুযায়ী ঈশ্বর কে?

১. পরম ব্রহ্ম (Brahman) — সর্বোচ্চ সত্য

উপনিষদ ও বেদ মতে ঈশ্বরের সবচেয়ে মৌলিক রূপ হলো ব্রহ্ম—

যে নিরাকার (Formless)

নির্গুণ (Attributeless)

চিরন্তন (Eternal)

সর্বত্র বিরাজমান (Omnipresent)

সর্বশক্তিমান (Omnipotent)

সর্বজ্ঞ (Omniscient)


উপনিষদ বলে—

“सर्वं खल्विदं ब्रह्म” — এই সৃষ্টির সবই ব্রহ্ম।

“अहं ब्रह्मास्मि” — আমি ব্রহ্ম।

“तत्त्वमसि” — তুমিই সেই পরম সত্য।


অর্থাৎ, সবকিছুতেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব।


২. ঈশ্বরের তিন প্রধান দিক (ত্রিমূর্তি)

সৃষ্টি, পালন ও সংহার হিসেবে ঈশ্বর ত্রিমূর্তি আকারে প্রকাশিত—

১. ব্রহ্মা – সৃষ্টি

২. বিষ্ণু – পালন

৩. মহেশ (শিব) – সংহার

এরা আলাদা সত্তা নন; একই পরম ব্রহ্মের তিন রূপ।

 ৩. সগুণ-সাকার ঈশ্বর

লৌকিক ভক্তির জন্য ঈশ্বর নিজেকে রূপ, গুণ, লীলার মাধ্যমে প্রকাশ করেন।
যেমন—

শ্রীরাম,শ্রী কৃষ্ণ, বিষ্ণু,‌শিব


এইসব রূপ মানুষের ভক্তি, প্রেম ও অনুভূতির জন্য উপলব্দিযোগ্য।

সনাতন ধর্ম বলে — ঈশ্বর এক, রূপ অসংখ্য।

৪. ঈশ্বর সর্বত্র — প্যান্থেইজম ও প্যানএনথেইজম

সনাতন ধর্ম বিশ্বাস করে—

ঈশ্বর বিশ্বের মধ্যে আছেন

আবার বিশ্বের বাইরে আছেন

সব কিছুই তাঁর প্রকাশ

কিন্তু তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বেও


এটিকে বলা হয়—
“ঈশ্বর সর্বত্র, আকারে-নিরাকারে, দৃশ্য-অদৃশ্য সবেতেই।”

 ৫. ব্যক্তিগত ও অব্যক্ত ঈশ্বর

সনাতন ধর্ম ঈশ্বরকে দুইভাবে বুঝে—

১. ব্যক্তিগত (Personal God) — যেমন কৃষ্ণ, রাম, দেব-দেবী

ভক্তি, প্রেম ও সম্পর্কের জন্য।

২. অব্যক্ত (Impersonal God) — ব্রহ্ম

তত্ত্ব, ধ্যান ও যোগের অভিজ্ঞতার জন্য।

দুএকটি নয়—দুটিই সত্য।

৬. ঈশ্বরের গুণাবলী (বেদ ও গীতা অনুযায়ী)

গীতায় কৃষ্ণ বলেন—

আমি বিশ্বর স্রষ্টা

আমি সব জীবের অন্তর্যামী

আমি কাল

আমি আলো, আগুন, বায়ু, জল

সবকিছুর উৎস আমি


ঈশ্বর—

অজন্মা

অমর

অবিনাশী

কারণহীন কারণ (Uncaused Cause)

সকল ধর্ম ও কর্মের বিধাতা

 ৭. জীব, জগৎ ও ঈশ্বরের সম্পর্ক (বেদান্ত মতে)

১. বিশিষ্ঠাদ্বৈত — রামানুজ

জীব ও জগৎ ঈশ্বরের শরীরের মতো।

২. দ্বৈত — মাধ্ব

জীব ও ঈশ্বর আলাদা, কিন্তু ঈশ্বর সর্বোচ্চ।

৩. অদ্বৈত — শংকরাচার্য

সবই ব্রহ্ম। পার্থক্য মায়িক।

 ৮. ঈশ্বরের উদ্দেশ্য কি?

সনাতন ধর্ম মতে—

ঈশ্বর ধর্ম স্থাপন করেন

ত্রাণ দেন

অসুর শক্তিকে দমন করেন

জীবকে মুক্তির পথ দেখান

জগতের সামঞ্জস্য বজায় রাখেন

 ৯. মানুষ কেন ঈশ্বরকে খোঁজে?

কারণ—

আমরা তারই অংশ (“ममैवांशो जीवलोके…” – গীতা”)

নিজের মূলকে খোঁজা মানুষের স্বভাব

তার সঙ্গেই মিলন হলো মোক্ষ/মুক্তি

 ১০. উপসংহার — সনাতন ধর্মে ঈশ্বরের সারমর্ম

ঈশ্বর এক, অনাদি-অনন্ত।
তিনি নিরাকার-নির্গুণ ব্রহ্ম।
তিনি আবার সাকার রূপে লীলা করেন।
তিনি জগৎ, জীব, প্রকৃতি—সবকিছুর উৎস।
তিনি নিজের ভক্তের হৃদয়ে বিরাজ করেন।

Post a Comment

0 Comments